কুসিক নির্বাচন : ইভিএমে ভোটের প্রক্রিয়া দেখলেন ২১ প্রার্থী

আগের সংবাদ

গোপনে তৎপর জামায়াত : কৌশলে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম > ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের ছক

পরের সংবাদ

ইডি রিমান্ডে ৯ দিন : হাওয়ালা কেলেঙ্কারির হোতা দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : চাঞ্চল্যকর হাওয়ালা কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে অভিযুক্ত দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে গ্রেপ্তার করা হলো শেষ পর্যন্ত। ২০১৮ সালে দায়ের হওয়া মামলার জেরে তাকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছিল। পরে তদন্তে ‘অসহযোগিতা’ করার অভিযোগ তুলে গত সোমবার বিকালে তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেন কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে, আগামী ৯ জুন পর্যন্ত তাকে ভারতের অর্থ-কেলেঙ্কারি অভিযোগ তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। খবর এনডিটিভি। এরপরই বিজেপি এবং কংগ্রেস মন্ত্রিসভা থেকে সত্যেন্দ্রকে বরখাস্ত করার দাবি তোলে। তবে এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে দিল্লি সরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় আসা অরবিন্দ কেজরিয়ালের সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার জেরে তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক মহলে। সত্যেন্দ্র কেবল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তা নয়, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও ছিল তার হাতে। ইডির অভিযোগ, কেজরিওয়াল সরকারের এ মন্ত্রী ২০১৫-১৬ সালে কলকাতাভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে সংঘটিত অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ ব্যাপারে বিশেষ আদালতে জানান, হাওয়ালার মাধ্যমে অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে সত্যেন্দ্র ও তার সহযোগী অঙ্কুশ ও বৈভব জৈন জড়িত।
২০১৫-১৭ সালের মধ্যে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে’ ১.৬৭ কোটি রুপি হাতিয়ে নেন এ মন্ত্রী। ইডির অভিযোগে আরো বলা হয়, সত্যেন্দ্র জৈন এসব অর্থ কলকাতাভিত্তিক শেল কোম্পানির মাধ্যমে ‘শাদা’ করিয়েছেন, যা দিয়ে পরে দিল্লিতে তিনি নিজের পরিবারের নামে জমি কেনেন।
তদন্তে জানা গেছে, কলকাতার দুই ব্যক্তি এসব শেল কোম্পানি পরিচালনা করত। ধরা পড়ার পর তারা স্বীকার করেছে, প্রতি ১০০ রুপির ‘এন্ট্রির’ জন্য ১৫-২০ পয়সা মজুরি নিত তারা। ইডি আরো জানায়, অভিযোগ পাওয়া মাত্র গ্রেপ্তার করা হয়নি মন্ত্রীকে। বরং তাকে তারা বারবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তারা চেয়েছিলেন কোনো ধরনের গ্রেপ্তারি ছাড়াই তারা সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু জেরার মুখে তিনি বারবার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকায় বাধ্য হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করতে হলো। তদন্ত সংস্থাটির দাবি, মন্ত্রী যে এসব কোম্পানির কোনো একজন ছোটখাটো অংশীদার মাত্র, বিষয়টি এমন নয়। তিনি নিজেই এসব কোম্পানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর আগে একই অভিযোগ তদন্তকালে জৈনের পরিবারের মালিকানাধীন প্রায় ৫ কোটি রুপির সম্পত্তি জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ।
তবে জৈনের আইনজীবী তদন্ত সংস্থা ইডির বিরুদ্ধে ‘শুধুই বড় বড় কথা’ বলার অভিযোগ এনে বলেন, এসব অভিযোগের স্বপক্ষে তারা আদালত-গ্রাহ্য কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। আনীত অভিযোগের সঙ্গে মন্ত্রীর নাম জড়ানোর কোনো ভিত্তি নেই। ২০১৮ সালে করা মামলার পর চার বছর পেরিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছয়বার শমন জারি হয়েছে। প্রতিবার তিনি দপ্তরে হাজির হয়েছেন, কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। অন্যদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও তার কেবিনেটের মন্ত্রীর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, সব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। এক শতাংশ যদি সত্যতা থাকত এতে, তাহলে সবার আগে আমি নিজেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। নীতির প্রশ্নে বরাবরই আপসহীন আম আদমি দল (আপ)।
কেজরিওয়াল দাবি করেন, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। আমার দলের অনেক জনপ্রতিনিধি, এমনকি আমার নিজের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে অতীতে; তদন্ত হয়েছে যথারীতি এবং প্রমাণ হয়েছে নির্দোষিতা। একই রকম নির্দোষ বলে প্রমাণিত হবেন সত্যেন্দ্র জৈন। আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে পাঞ্জাবের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বরখাস্ত করেছি। অথচ তার কৃত অপরাধের প্রমাণ বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা কিংবা বিরোধী দলের কোনো ধারণাই ছিল না। চাইলেই আমরা বিষয়টি চেপে যেতে পারতাম। সত্যের খাতিরেই আমরা তা করিনি। নিজেরাই পদক্ষেপ নিয়ে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেছি। প্রসঙ্গত, চলতি মাসে পাঞ্জাবের আপ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় সিংলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মান তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেন। এদিকে বন্দীদশায় থাকাকালে তাকে যাতে জৈনসম্মত খাবার সরবরাহ করা হয়, সত্যেন্দ্র জৈনের এই অনুরোধটি রাখতে রাখতে রাজি হয়েছে ইডি কর্তৃপক্ষ। তবে প্রতিদিন সকালে একটি জৈন মন্দির দর্শনে যেতে দেয়ার অপর একটি অনুরোধ খারিজ করে দেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়