সাংবাদিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

অর্থপাচার বাড়ছে যে কারণে

পরের সংবাদ

রাজহাঁস ও সোনার মুকুটের গল্প

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনেক অনেক বছর আগের কথা। একটা দুঃখী হাঁস ছিল। হাঁসটির দু’কূলে কেউ ছিল না। মা-বাবাকে তো তার মনেই পড়ত না। এতেও তার দুঃখ ছিল না। কিন্তু একাকিত্বের জন্য মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেত।
সে প্রতিদিন একটা বিলে সাঁতার কাটতে যেত। সাঁতার কাটা হতো আর সেই সঙ্গে পেটপুরে খাবারও জুটত। সেই বিলটা ছিল গ্রাম থেকে বেশ দূরে। তাই হাঁসটি সকাল সকাল বের হয়ে যেত। আর বিকেলের সূর্যটা নেতিয়ে পড়লে বাড়ি ফিরত। পথে যেতে-আসতে অনেকের সঙ্গে দেখা হতো। কিন্তু কারো সঙ্গে কথা হতো না। সে কথা বলতে চাইলেও কেউ কথা বলতে আসত না। বিড়ালের সঙ্গে দেখা হলে মুখ ভেংচে হাসত। মোরগ-মুরগিরা দেখলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত। কুকুরেরা দেখলে ঘেউ ঘেউ শব্দে বিদ্রুপ করত। আর ছাগলেরা দেখলেই মুখ ফিরিয়ে উল্টো হয়ে দাঁড়াত। তবে একটা গরু ঠিকই তার সঙ্গে কথা বলত। কেউ কথা বলত না দেখে হয়তো গরুটির মায়া হতো। তাই দু-চারটে কথা বলত হাঁসটির সঙ্গে।
– গরু ভাই, আমার সঙ্গে তো কেউ কথা বলে না। তুমিই যা দু-চারটে কথা বলো। একদিন হাঁসটি মুখ ফ্যাকাসে করে বলল।
গরুটি বলল- ‘কী করবে ভাই। সবই কপাল!’
– এতে আমার দোষ কী ভাই! আমার গায়ের রং কালচে বলে! সৃষ্টিকর্তা আমাকে যেভাবে তৈরি করেছে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। তাতে কেউ কথা বললে বলুক বা না বললে না বলুক। আমি তো আমার গায়ের রং পাল্টাতে পারব না। হাঁসটি অভিমানের সুরে বলতে বলতে চলে যায়।
হাঁসটি যে পথ দিয়ে যাতায়াত করত, সেই পথের ধারে ছিল একটা ছোট্ট বন। বনটাতে ছিল অনেক পাখির বাস। দু-চারটে সাপ, বেজি, শেয়ালও বাস করত। তাদের সঙ্গেও মাঝেমধ্যে দেখা হতো। তারাও কেউ কথা বলত না। আর অন্য হাঁসগুলো এই পথ দিয়ে যাতায়াত করত না শেয়ালের ভয়ে। কিন্তু এই হাঁসটি ঠিকই প্রতিদিন যাতায়াত করত। তবুও শেয়াল ভুল করেও কখনো তার সামনে এসে দাঁড়াত না। যাদের স্বভাব হাঁস-মুরগি ধরে খাওয়া, সেই শেয়ালরাও মুখ বেঁকিয়ে চলে যেত।
একদিন হাঁসটি বিলের মাঝখানে ডুব দিয়ে সাঁতার কাটছিল। সেদিন সূর্যের মেজাজ চরমে ছিল। তাই রোদের তেজ ছিল খুব। তাতেই ওপরের পানি বেশ গরম হয়ে যায়। বিলে থাকা অন্য হাঁসগুলোও এমনই করছিল। ডুব দিতে দিতে একসময় কালচে হাঁসটি অনেকক্ষণ ডুব মেরে থেকে যায়। আশপাশের হাঁসগুলো লক্ষ করল, কালচে হাঁসটি ডুব মেরে আর উঠছে না। তখন অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করল। আবার কেউ কেউ উপহাস করে মৃত্যু কামনা করল হাঁসটির। বেশ কিছুক্ষণ পর সেই কালচে হাঁসটি পানির ওপর ভেসে উঠল। কিন্তু সে আর কালচে নেই। হয়ে গেছে অপূর্ব সুন্দর! মাথায় সোনার মুকুট। দেহ হয়ে গেছে দ্বিগুণ! মুকুটে রোদের ছটা লেগে চারপাশ ঝলমলে হয়ে উঠল। আশপাশের হাঁসগুলোর চোখেমুখে লাগল সেই ছটা। তাতে অবাক হয়ে ছুটে এলো সবাই। সমস্বরে সবাই জিজ্ঞেস করল- ‘কে তুমি? কোথা থেকে এলে?’
সোনার মুকুট পরা হাঁসটি বলল- আমি সেই কালচে হাঁস। যাকে তোমরা কেউ পছন্দ কর না। এমন কী একটা কথাও বল না।
– উঁহু, আমি সেই কালচে হাঁস! তুমি বললে আর আমরা বিশ্বাস করে নেব তাই না? হাঁসগুলোর একটি উপহাস করে বলে উঠল।
– তোমরা বিশ্বাস কর আর না কর। আমিই সেই কালচে হাঁস। যে এখন রাজহাঁস! যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে কালচে করে পাঠিয়েছিল আবার সেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে সুন্দর রূপ দান করল। তোমাদের বিশ্বাস না হলে চলো আমার সঙ্গে। যেই পথ দিয়ে যাতায়াত করি, যে বাড়িতে থাকি। সেসব ঠিকমতো হচ্ছে কিনা! রাজহাঁসটি জোর গলায় বলল।
এবার সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। আর সোনার মুকুট পরা রাজহাঁসটির পেছন পেছন হাঁটতে লাগল। পথে যাদের সঙ্গে দেখা হলো, তারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রাজহাঁসের দিকে। রাজহাঁসটি যে পথ দিয়ে যাতায়াত করে, সে পথ দিয়ে তার মালিকের বাড়ি পৌঁছে গেল। সেই থেকে কালচে হাঁসটি রাজহাঁস হয়ে গেল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়