দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : ৬ আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি প্রত্যাখ্যান সরকারের

আগের সংবাদ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পরের সংবাদ

শিলার বন্ধু নীলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ব্যাচেলর জীবনে এমনিতে দীর্ঘসময় হাঁটার অভ্যাস ছিল সুনীলের। কিন্তু কর্মজীবনের ফাঁদে পড়ে হাঁটার অভ্যাসটাই বদলে গেছে এখন। তবুও যান্ত্রিক নগরজীবনে এখনো মাঝে মাঝে হাঁটার চেষ্টা করেন। এখন কর্মজীবনে একটু অবসর সময় খুঁজে নেয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সেই সময়টা ভোর সকালে হয়ে উঠে না কখনো। তাই বাধ্য হয়ে বিকাল কিংবা সন্ধ্যায় সময় পেলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বেড়ান। আনমনে হেঁটে বেড়ান কখনো রাস্তার ডানে, কখনো বা বাঁয়ে। এভাবেই হেঁটে বেড়ান চক্ষুদ্বয় চৌদিকে রেখে। হাঁটার মাঝেও নিজের অজান্তে মন আনন্দে সুখ খুঁজে পান। হাঁটার মধ্যে এ গলি ও গলির ধারের চিরচেনা লতাপাতা, গাছগাছালির সঙ্গেও আনমনে ভালোলাগার কথা বলে ওঠেন সুনীল। পথের গাছগাছালিও তার বন্ধু হয়ে উঠছে এই সময়টুকুতেই।
একদিন ক্লান্ত দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কোনো এক ফাঁকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। ঘুম ভাঙতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, তারপরও চোখে ঘুম লেগে রয়েছে। আজ আবার হাঁটার খুব ইচ্ছা হলো, হাতমুখ ধুয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লেন হাঁটার উদ্দেশে। বাসা থেকে বেরিয়ে দ্বিধায় পড়লেন আজ কোন দিকে যাবেন, অনেকটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বাছবিচার না করে রাস্তার একপাশ ধরে হাঁটা শুরু করলেন। এভাবে উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটা চলতে থাকে, কিন্তু তখনো চোখে-মুখে ঘুমের লেশমাত্র যায়নি! তারপরও হাঁটছেন তো হাঁটছেন। কোথায় যে একটু বসবেন, তাও মন সায় দিচ্ছে না আজ। হাত ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখেন, সময় প্রায় রাত ৯টা ছুঁইছুঁই! হঠাৎ তার মন বলল, আজ আর না, বাসায় ফিরতে হবে। সেইমতে আবার অন্য রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলেন।
বাসায় ফিরতে এখনো আধা কিলোমিটার পথ বাকি রয়েছে। অপ্রস্তুত রাস্তায় এর মধ্যে হঠাৎ সামনে এসে হাজির একজন বোরকা পরা মেয়ে! সামনে এসে সুন্দর করে সালাম দিয়ে বলে- কেমন আছেন?
সুনীল ওয়ালাইকুম… বলেন। তারপর বোরকা পরা মেয়েটির দিকে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকেন। তখন মেয়েটি বলে- আপনি আমাকে চিনতে পারেননি?
তখন সুনীল বলেন, ইয়ে মানে আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি!
মেয়েটি বলল- আমি নীলা, মানে শিলার বান্ধবী আরকি!
যেহেতু কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা, তাই সুনীল তাকে চিনতে পারছেন না আবার কিছু বলতেও পারছেন না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন- আপনি কেমন আছেন?
নীলা বলল- ভালো আছি।
এর মধ্যে সুনীলের সবকিছু মনে পড়তে শুরু করেছে। ক্লাসমেট শিলার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এই নীলা। যদিও শিলার সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ নেই। অপূর্ব সুন্দরী হওয়ায় এক আমেরিকান প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়, সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে। নীলাকে দুয়েকবার দেখেছে সুনীল, তবে কোনো কথা হয়নি। সন্ধ্যারাতের আলো ঝলমলে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়েই সুনীল আর নীলার মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকে। দুজনেই নিজের বর্তমান পড়ালেখা, ক্যারিয়ার নিয়ে বলতে লাগল। কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় গড়িয়ে যায়। বিদায় নেওয়ার আগে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করে তারা।
দুজনই নিজ নিজ বাসায় পোঁছে গেলেও কেন জানি একটা টান অনুভব করতে থাকে। কর্মব্যস্ততায় দুই দিন অতিবাহিত হলে কেউ কাউকে ফোন করেনি। আজ আবার সুনীল হাঁটতে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্যহীন শহরের রাস্তায়। হাঁটতে বেরিয়ে নিঃসঙ্গতা অনুভব করে বরাবরের মতো। আজ কেমন যেন লাগছে তার, কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ফুটপাতের ছোট্ট টং দোকানে ঢুকে এক কাপ কড়া লিকারের চা খেয়ে একটা বেনসন সিগারেট হাতে বেরিয়ে পড়ল, গিয়ে বসল পাশের দিঘিরপাড়ের বেঞ্চে।
সিগারেটে আগুন জে¦লে দুয়েকটা সুখ টান দিতে দিতেই মনে পড়ল সেই নীলা কথা! প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করে নীলার নম্বরটি খুঁজে নিয়ে কল দিল সুনীল। একবার রিং বাজতেই নীলা ফোনটি রিসিভ করে বলল- কেমন আছেন?
সুনীল কিছুক্ষণ কোনো কথা না বলে বুঝতে পারে সেও তার ফোনের অপেক্ষায় ছিল এতদিন!
সুনীল বলে উঠল- একা একা কি ভালো থাকা যায়!
নীলাও বলে উঠল- আমিও ভালো থাকতে পারলাম কই আর! আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর নিজের মনের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠছে।
এরপর প্রতিদিন কথা চলতে থাকে দুজনের মধ্যে…। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে নীলা আর সুনীলের সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসে। তারা নিজেদের গল্পকথার মধ্যে ভালোলাগার কথা, ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা একেএকে বলতে থাকে। একসময় নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আবার সরাসরি দেখা করবে। সেই মোতাবেক দুজনই শনিবার দিনক্ষণ ও স্থান ঠিক করেছে, যেহেতু অফিস বন্ধ থাকবে।
ঠিক বিকাল ৫টায় দুজনেই দিঘিরপাড়ে পার্কের উদ্দেশে রওনা হলো সাজগোজ করে। যথাসময়ে নীলা পৌঁছে গেল গন্তব্যে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো সুনীল এসেছে কিনা, কিন্তু না কোথাও তাকে দেখা যাচ্ছে না! নীলা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। বারবার সুনীলের ফোনে কল দিয়েও লাইন বিজি পাচ্ছে।
সোয়া ৫টার কিছুক্ষণ পরেই রিকশা থেকে নামল সুনীল। নীলা একনজরে তাকিয়ে শুধু তাকেই দেখছে। এরপর নীলার সামনে এসে বলল- আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, অনেক লেইট হয়ে গেছে।
মুহূর্তে নীলার মনটা ভালো হয়ে যায়। সুনীল দুটো টিকেট কেটে নীলাকে নিয়ে পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসল, কুশলাদি বিনিময় শেষে সুনীল একটি সুন্দর ডিজাইনের আংটি আর নীলা টারজান ব্র্যান্ডের একটি ঘড়ি একে অপরকে ভালোবাসার উপহারস্বরূপ পরিয়ে দিল। গল্প করতে করতে অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ায় দুজনের জন্য হালকা খাবার অর্ডার করল। খাবার আসার পর খেতে খেতে আবার গল্পকথায় হারিয়ে গেল। এভাবে এগিয়ে যায় দুজনের রোমান্টিক সম্পর্ক। খাওয়ার বিল মিটিয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দুজন একে অপরকে বিদায় জানায়। সুনীল নীলাকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে সেও বাসার দিকে চলে যায়। মাস দেড়েক পর তাদের ভালোলাগা-ভালোবাসার ইতিবাচক সম্পর্কটা দুই পরিবারের সম্মতিতে পরিণয়ে রূপ নেয়।
গাজী আরিফ মান্নান : হাসানপুর, ফুলগাজী, ফেনী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়