টার্গেট স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ নারী অভিভাবকরা : ২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ডামি’র লাগাম টানবে আ.লীগ : নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রয়েছে একাধিক কৌশল > সারাদেশেই তৈরি হয়েছে ভোটের আবহ

পরের সংবাদ

রোবো হিরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এক কাপ কফি হবে? ইরেশ ঘরে ঢুকেই মিলির দিকে তাকিয়ে বলল।
মিলি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইরেশের দিকে। সে ততক্ষণে আয়েশ করে সোফায় বসেছে।
মিলি ইরেশের কথার উত্তর না দিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। তার পেছন পেছন অভি।
এটা রোবটই তো? স্বামী অভির দিকে তাকিয়ে জানতে চায় মিলি।
হ্যাঁ, রোবট। তোমার চাহিদা মতো অতিসংবেদনশীল রোবট। অভি জবাব দেয়।
তাহলে কি রোবটরা এখন খাবার খেতে শুরু করেছে?
তাতো জানি না। ইরেশকেই জিজ্ঞেস করো।
ওর নাম ইরেশ বুঝি? মিলি কফির কাপে চিনি মেশাতে মেশাতে অভিকে জিজ্ঞেস করে।
হ্যাঁ, ওর নাম ইরেশ, বেশ সুন্দর না নামটা?
হ্যাঁ, সুন্দরইতো। মানুষ মানুষ নাম।
মিলি কফির কাপ হাতে ড্রইং রুমে আসে। কাপটা এগিয়ে দেয় ইরেশের দিকে।
তুমি কফি খাও, ইরেশ?
না খাই না, কফির ধোঁয়া দেখি। গরম গরম কফির কাপে যখন ধোঁয়া ওঠে, তখন দেখতে ভালো লাগে।
ইরেশ মিলির হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে এমনভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে ধোঁয়া দেখতে থাকে, যেন জীবনের যাবতীয় আনন্দ ওই ধোঁয়া দেখার মধ্যে।
অভির কাছে মিলি আবদার করেছিল একটা সংবেদনশীল রোবট কিনে দিতে। মিলির আবদার রাখতেই ইরেশকে ভালো একটা দামে কিনে আনা হয়েছে।
ইরেশ আসার পর থেকে মিলি বেশ আরামেই আছে। ইরেশ বাজার করা থেকে শুরু করে লন্ড্রিতে যাওয়া, বাইরের সব কাজ করে। এমনকি ঘরেও টুকটাক সাহায্য করে।
মিলি আর অভি দুজনের সংসার। অভি সকালে অফিসে যায়, সন্ধ্যায় আসে। আর যাই হোক ইরেশ আসায় মিলির কিছুটা নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছে। বিকাল বেলা কফির কাপ হাতে ইরেশের সঙ্গে গল্প করে অনেকটা সময় কাটানো যায়। যেহেতু ইরেশ একটি সংবেদনশীল রোবট, তাই সে মিলির কষ্টের গল্প শুনলে দুঃখ পায় আবার আনন্দের কথা শুনলে হেসে কুটি কুটি হয়।
ইরেশকে নিয়ে অভি-মিলির সংসার খুব ভালোই কাটছিল। হঠাৎ করে ইরেশের মাঝে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দেয়। যে ইরেশ তার মানুষের চেয়ে উন্নত মেমোরি নিয়ে গর্ব করত, সে এখন খুব তাড়াতাড়িই সব ভুলে যায়। রোজ রোজ সব উল্টাপাল্টা কাজ করে ফেলে।
এইতো আজ দুপুরে সে একটা রাগ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল।
সকাল থেকেই মিলির রান্না করতে মন চাইছিল না। তাছাড়া আজ বন্ধের দিন, অভির অফিস নেই।
মিলি অভিকে বলল, চলো আজ বাইরে খাই।
বন্ধের দিন আমি মহাআরামের ঘুম নষ্ট করতে চাই না। অভি ঝটপট উত্তর দিয়ে দেয়।
অভির এই এক বদঅভ্যাস। শুক্র-শনিবার তাকে বিছানা থেকে নামানো যায় না।
অবশেষে ইরেশকে বলা হলো উত্তরার সাত নম্বর রোডের কুরবান আলীর দোকান থেকে বিরিয়ানি নিয়ে আসতে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল পার করে ইরেশ ফিরল দু-বোতল বোরহানি নিয়ে।
মিলি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না।
তোমাকে বোরহানি আনতে বলেছি? মিলি অবাক চোখে তাকায় ইরেশের দিকে।
হ্যাঁ, তাইতো বললে।
দুপুরে ভাত না খেয়ে কেউ বোরহানি খায়?
তাতো জানি না। তুমি আনতে বললে আমি নিয়ে এলাম।
মিলি ইরেশের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় ভাত বসায়।
এই তো গত পরশু মিলি তাল-নারকেল দিয়ে পিঠা বানিয়েছিল। কিছু পিঠা সে তার বান্ধবী শিলুকে পাঠাল ইরেশকে দিয়ে।
বিকেলে যখন মিলি ফোন করে শিলুর কাছে জানতে চাইল, পিঠা কেমন হয়েছে?
শিলুতো অবাক! সে জানাল সে কোনো পিঠা পায়নি। পরে ইরেশের কাছ থেকে জানা গেল সে অভির বন্ধু শাওনের বাসায় পিঠা দিয়ে এসেছে। ইরেশকে হাজার বার জিজ্ঞেস করলেও সে একই উত্তর দিল যে, পিঠা অভির বন্ধু শাওনকে দিতে বলা হয়েছে এবং সে তাই করেছে। তার কখনো ভুল হয় না। তার মেমোরি স্টোরেজ মানুষের চেয়ে পঞ্চাশ গুণ বেশি।
অভি-মিলি মহাসমস্যায় পড়ে গেল। ইরেশকে নিয়ে যাওয়া হলো রোবট কারখানায়, যেখান থেকে তাকে কিনে আনা হয়েছিল।
কী সমস্যা ইরেশের? খুলে বলেন। অভির দিকে তাকিয়ে জানতে চান রোবট বিজ্ঞানী অধ্যাপক আশফাক।
সমস্যা হলো ইদানীং ইরেশ সব ভুলে যাচ্ছে। একটা কাজ করতে দিলে অন্যটা করছে। ভয়াবহ ব্যাপার। অভির কণ্ঠে বিরক্তি।

দেখি, ইরেশ এদিকে আস। অধ্যাপক আশফাকের ডাকে ইরেশ তার কাছে গিয়ে বসে।
তিনি ইরেশের সব যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখেন। নাহ্ কোথাও কোনো ত্রæটি নেই। সব ঠিকঠাক। অধ্যাপক হাসি হাসি মুখে বলেন।
সব ঠিকঠাক! তাহলে ইরেশ এমন করছে কেন? অভির কণ্ঠে উদ্বিগ্নতা।
সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আপাতত ওকে নিয়ে যান, কিছুদিন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তারপর আবার নিয়ে আসবেন।
ইরেশকে বাড়িতে নিয়ে আসে অভি।
মিলি ইদানীং ইরেশকে কোনো কাজে বাইরে তেমন পাঠায় না। ঘরেই টুকটাক কাজ করে। সেসব কাজেও সে ভুল করে। তার করা ভুলকে ঠিক করতে করতে মিলির মেজাজ বিগড়ে যায়। তার চেয়ে তাকে কোনো কাজে না লাগানোই ভালো।
মিলি, আমি একটা লাল রঙের শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট কিনতে চাই, সঙ্গে লাল হ্যাট।
মিলি রান্নাঘরে চা বানাচ্ছিল। ইরেশ কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি মিলি।
হঠাৎ লাল শার্টের সখ হলো, কী ব্যাপার? মিলি ইরেশের দিকে অবাক চোখে তাকায়।
কোনো ব্যাপার নেই। আমার আজই চাই।
ঠিক আছে পাবে। অভি বাসায় আসুক, তোমাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে কিনে দেবে। মাপঝোপের ব্যাপার আছে তো।
সন্ধ্যায় অভি ইরেশকে নিয়ে গিয়ে দোকান থেকে লাল শার্ট, নেভিব্লু প্যান্ট, লাল রঙের হ্যাট কিনে আনে।
ইরেশ তো মহাখুশি।
প্রতিদিন ইরেশ একই পোশাক পরে থাকে।
দুপুরের রান্না শেষ করে মিলি সোফায় গা এলিয়ে দেয়।
মিলি, এক কাপ কফি হবে? ইরেশ যথারীতি লাল শার্ট নেভিব্লু প্যান্ট পরে তার সামনে হাজির।
তোমার কি আর কোনো শার্ট নেই ইরেশ? এমন টকটকে লাল শার্ট পরে ঘুর ঘুর করছ?
ইরেশ সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলে, ঠিক আছে কফি লাগবে না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।
ইরেশ হনহন করে বাইরে চলে যায়।
সেদিন বিকেলে অভি অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ রাস্তায় বাচ্চাদের জটলা দেখে রিকশা থামায়।
রিকশা থেকে নেমে জটলার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায় অভি।
অবাক হয়ে দেখে জটলার ভেতরে ইরেশ দাঁড়িয়ে। তার পরনে যথারীতি সেই বিখ্যাত লাল শার্ট, নেভিব্লু প্যান্ট, লাল হ্যাট।
ছেলে-মেয়েরা তাকে ঘিরে রোবো হিরো, রোবো হিরো বলে চিৎকার করছে।
আহা বেচারা ইরেশ কী বিপদেই না পড়েছে। অভি বাচ্চাদের থামাতে গিয়ে ফিরে আসে।
কারণ ইরেশকে বাচ্চাদের অত্যাচারে মোটেও বিচলিত মনে হলো না। ইরেশ হাসি হাসি মুখে এসব উপভোগ করছিল। অভি কিছু না বলেই বাসায় ফিরে আসে।
তুমি কি ইরেশের আচরণে কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করছ? মিলির কাছে জানতে চায় অভি।
আর বলো না, দুপুর ১২টা বাজলেই সে তার ঘরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেয়। কী করে জানি না। আর সারাদিন টকটকে লাল শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। মহাবিরক্তিকর ব্যাপার।
তাহলে তো দেখতে হয় ইরেশ দুপুর ১২টায় ঘরে কী করে।
তুমি দেখলে দেখো। আমার অত সময় নেই। মিলির কণ্ঠে বিরক্তি।
পরদিন ঠিক দুপুর ১২টায় অভি অফিস থেকে বাসায় হাজির। তড়িঘড়ি করে যায় ইরেশের ঘরের সামনে।
কিছুক্ষণ নক করার পর ইরেশ দরজা খুলে দিয়ে খাটে গিয়ে বসে। অভিও বসে ইরেশের পাশে।
কী করছ ইরেশ?
দেখছ না টিভি দেখছি। টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই জবাব দেয় ইরেশ।
অভিও আর কোনো কথা না বলে টিভির স্ক্রিনে চোখ রাখে।
অভি লক্ষ্য করে টিভিতে একটি সিরিয়াল চলছে। সেখানে যে নায়ক তার পরনে ইরেশের মতো লাল শার্ট, নেভিব্লু প্যান্ট, আর মাথায় লাল হ্যাট। ওই সিরিয়ালের নাম হিরো।
আর সেই হিরোর স্বভাবই হচ্ছে সব ভুলে যাওয়া। তাকে ঢাকায় যেতে বললে সে চট্টগ্রাম যায়। আর দিনাজপুর যেতে বললে খুলনা গিয়ে বসে থাকে।
অভি বুঝতে পারে ইরেশের হঠাৎ সব ভুলে যাওয়ার রহস্য। সিরিয়াল দেখে সিরিয়ালের হিরোর মতোই তার হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। তাই সে ইচ্ছা করেই সব ভুল করছে। অতিসংবেদনশীল রোবট বলে কথা। এমনটা তো হতেই পারে। অভি হাসতে হাসতে ইরেশের রুম থেকে বের হয়ে আসে।
এক্ষুণি মিলিকে এ রহস্য উদঘাটনের খবরটা দিতেই হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়