শিক্ষার্থী নির্যাতন : উইলস লিটল স্কুলের অধ্যক্ষসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি

আগের সংবাদ

অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

সম্মানী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

: ক্রিং ক্রিং
: হ্যালো
: হ্যালো, আমি পাক্ষিক নন্দিনী পত্রিকা থেকে বলছি। আমি মনিষা সরকার দিদির সঙ্গে কথা বলতে চাই।
: মনিষা বলছি। কে কথা বলছেন?
: আমার নাম অপর্ণা মিত্র।
: আচ্ছা। আমার সঙ্গে কী দরকার বলুন?
: দিদি, এবারের পূজা সংখ্যায় আমরা আপনার একটা সাক্ষাৎকার ছাপতে চাই। আপনি কি আজ আমাকে একটু সময় দেবেন? তাহলে আমি আপনার বাসায় আসতে পারি।
: আজ তো হবে না। আজ আমার একটা রেকর্ডিং আছে। কাল হতে পারে।
: ঠিক আছে তাহলে কালকের দিনটাই নিচ্ছি। দিদি আপনি একটু পূজার সাজে সেজে থাকবেন। আর একটা পূজার থালা সাজিয়ে রাখবেন। আমার সঙ্গে একজন ফটোগ্রাফার থাকবে।
: তাই হবে।
: আজ তাহলে রাখছি দিদি। কাল দেখা হচ্ছে। ভালো থাকবেন।
মনিষা সরকারের বাসার ঠিকানা আর সাক্ষাৎকারের সময়টা লিখে নিয়ে অপর্ণা ফোন রেখে দিল। পাশে বসে তার ভাইঝি উপমা কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে অপর্ণার দিকে।
: আপ্পিপি তুমি কাকে ফোন করলে? মনিষা সরকার তো মিনির বন্ধু ধারাবাহিকের সেই অভিনেত্রী, যিনি মিনির মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন, তাই না?
: হ্যাঁ। আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখনই তিনি নামকরা মডেল ছিলেন।
: আমার তাকে ভীষণ ভালো লাগে। মিনির বন্ধু নাটকে তার চরিত্রটা এত মজার, হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়।
: হ্যাঁ, তিনি এখন একজন সুঅভিনেত্রী। সেই সঙ্গে ভীষণ ভালো গানও করেন। আমাদের পত্রিকার পাঠকদের মধ্যে তার অনেক ভক্ত আছে। আমরা অনেক চিঠি পাই তার সাক্ষাৎকার ছাপার জন্য।
: তোমার বাড়িতেও যে তার একজন ভক্ত আছে সে কথা কি তুমি জানো?
: হুম সেটা তুই, তাইতো?
: আপ্পিপি তুমি কাল আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে? আমি একবার তাকে সামনে থেকে দেখতে চাই। প্লি…জ।
: আচ্ছা নিয়ে যাব। তবে কথা দিতে হবে, তুই একদম জ¦ালাবি না। চুপ করে বসে থাকবি।
: ইয়ে…! বলেই উপমা অপর্ণার গলা জড়িয়ে ধরল। থ্যাঙ্ক ইউ আপ্পিপি।
উপমা অপর্ণাকে আপ্পিপি বলে ডাকে। ছোটবেলায় উপমার যখন আধো আধো বুলি ফুটছে, তখন থেকে তাকে অপুপিসি ডাক শেখানোর চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সে আপ্পিপি ছাড়া কিছু বলতে পারত না। এখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এখন অপুপিসি ডাকতে গেলে অপর্ণাই রেগে যায়। তার কাছে আপ্পিপি ডাকটাই মিষ্টি লাগে।
বিকেল ৪টা বাজে। মনিষা সরকারের বসার ঘরে অপর্ণা, উপমা আর ফটোগ্রাফার তারেক অপেক্ষা করছে। তার বসার ঘরটা বেশ সুন্দর। আসবাবপত্রের বাড়াবাড়ি নেই। অনেক খোলামেলা। বড় বড় জানালাগুলোতে হালকা অথচ বাহারি রঙের পর্দা ঝুলছে। ঘরের এক কোণে একটা টেবিলের ওপর কবিগুরুর ছবি। টেবিলের সামনের অংশটা ফুল দিয়ে সাজানো। তারই পাশে একটা গদির ওপর হারমোনিয়াম, তবলা আর তানপুরা রাখা। এ বাড়িতে নিয়মিত গানের চর্চা হয় সেটা বোঝা যায়। গদির শেষ প্রান্তে পুরনো আমলের কলের গানের একটা রেকর্ডপ্লেয়ার রাখা হয়েছে। আরেকপাশের পুরো দেয়ালজুড়ে বিশাল এক বইয়ের রেক। তাকে তাকে অসংখ্য বই গুছিয়ে রাখা হয়েছে। সাজানো বইগুলোর মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফাঁকা জায়গায় শিল্পীর বিভিন্ন সময়ে পাওয়া পুরস্কারগুলো সাজিয়ে রাখা। মুখোমুখি দুটো দেয়ালে সোফা রয়েছে বসে কথা বলার জন্য। সাধারণত অভিনয়শিল্পীদের ঘরের দেয়ালে তার নিজের অনেক ছবি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ঘরে মনিষা সরকারের একটি ছবিও নেই। উপমা হেঁটে হেঁটে পুরো ঘরটা দেখছে। তখনই পর্দা সরিয়ে মনিষা সরকার ঘরে প্রবেশ করলেন। পরনে লালপাড় সাদা শাড়ি। কপালে বড় একটা লাল টিপ। লম্বা কোঁকড়ানো চুলগুলো কাঁধের ওপর দিয়ে এনে ডানপাশে ফেলে রেখেছেন। মাঝারি আকারের সোনার গহনায় দিদিকে দেখতে বেশ দেবী দেবী লাগছে। অপর্ণা প্রথমে নিজের পরিচয় দিল। তারপর তারেককেও পরিচয় করিয়ে দিল। উপমাকে দেখিয়ে বলল, আমার ভাইঝি। সে আপনার একজন অনেক বড় ভক্ত। আপনাকে সামনাসামনি দেখার বায়না করছিল। তাই নিয়ে এলাম।
দিদি বেশ আন্তরিকভাবেই সবাইকে বসতে বললেন। উপমাকে নিজের পাশে নিয়ে বসলেন। অপর্ণা এমনভাবে গল্প করছে, যা দেখে উপমার মনে হলো তার আপ্পিপি কোন সাক্ষাৎকার নিতে আসেনি। টেলিভিশনে যেমন আলাপচারিতা হয়, তেমন একটা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছে। তার সামনে কোনো খাতা-কলম নেই। কোনো মোবাইল বা রেকর্ডার নেই। পুরো কথোপকথনটি ভিডিও করছে তারেক। উপমা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তার প্রিয় অভিনেত্রীকে। হঠাৎই উপমা বলে উঠল, আমি আপনার সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। আমাকে নেবেন?
আচমকা এমন প্রশ্নে অপর্ণাও ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। চোখের ইশারায় উপমাকে চুপ থাকার কথা বলতে চাইল। উপমা সেটা গ্রাহ্যই করল না। দুহাতে মনিষার হাতদুটো চেপে ধরে বলতে লাগল, নিজেকে একবার টিভিতে দেখার আমার খুব শখ। ঠিক যেমনভাবে আপনাকে সবাই টিভিতে দেখে সেরকম। প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমাকে একবার সুযোগ দিন। অপর্ণা এবার বেশ জোরে ধমক দিল। উপমা তাতেও দমল না। সে নানাভাবে মনিষা সরকারকে অনুরোধ করেই গেল। অপর্ণা এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি। সে উপমাকে জোর করে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এলো। তবে আসার আগে সে মনিষাদির থেকে প্রতিশ্রæতি আদায় করল যে তিনি খুব শিগগির তাকে কোনো একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবেন।
পূজার আগে কয়েকটা দিন উপমার খুব ব্যস্ততায় কাটল। দুর্গাপূজার জন্য ছোটদের একটা অনুষ্ঠানে মনিষা সরকার গান গাইবেন। অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা করা হয়েছে এভাবে, ১০-১২টি ছোট ছোট বাচ্চা তাকে ঘিরে বসবে। বাচ্চারা জানতে চাইবে- শিল্পী ছোটবেলায় পূজা কেমনভাবে কাটাতেন, কোথায় ঘুরতেন এসব। শিল্পীও দু-চারজন বাচ্চাকে প্রশ্ন করবেন- তাদের পূজা এখন কেমন কাটে? গল্পের ফাঁকে ফাঁকে থাকবে শিল্পীর গাওয়া কয়েকটা গান।
শিল্পীর বাসা থেকে আসার পর থেকেই উপমা অপেক্ষা করেছিল তার একটা ফোনের জন্য। উপমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি ফোন করবেনই। একদিন যায়, দুদিন যায়, এভাবে সাতদিন কেটে গেল। কিন্তু কোনো ফোন এলো না। পাক্ষিক নন্দিনী পত্রিকায় তার সাক্ষাৎকারটিও বের হলো। কিন্তু তার ফোন ততদিনেও এলো না। একদিন আপ্পিপি অফিস থেকে ফিরে খবরটা দিল। খবরটা শুনে উপমার চোখে জল চলে এলো। সেদিন আপ্পিপি মনিষা দিদিকে নন্দিনীর একটি সৌজন্য কপি দিতে তার বাসায় গিয়েছিল। মনিষাদি উপমার কথা জানতে চাইলে অপর্ণা বলে উপমা কেমন যেন বিষণ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সে এখনো বিশ্বাস করে মনিষাদি তাকে টিভি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের একটা সুযোগ দেবেই দেবে।
মনিষাদি আপ্পিপিকে বলে দিয়েছেন কাল তাকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টুডিওতে নিয়ে যেতে। আপ্পিপি যখন এসে কথাটা বাসায় বলল, উপমার মনে হচ্ছিল সে স্বপ্ন দেখছে। নিজেকে চিমটিও কেটেছিল নিশ্চিত হওয়ার জন্য। অঝোরে কেঁদেছিল সে খুশির বাধভাঙা জোয়ারে। নতুন জামা কিনেছে সে এই অনুষ্ঠানের জন্য।
একদিন রিহার্সেলের জন্য আর একদিন রেকর্ডিংয়ের জন্য, মোট দুদিন তাকে যেতে হয়েছিল স্টুডিওতে। অনুষ্ঠানটি যেদিন দেখাবে তার আগে সে সবাইকে ফোন করে জানিয়েছে। সব সহপাঠীকে বলেছে দেখতে। পুরো অনুষ্ঠানে উপমাকে দু-তিনবার দেখা গেছে। অল্প সময়ের জন্য হলেও নিজেকে টিভিতে দেখে উপমা ভীষণ খুশি। তার কয়েকজন বন্ধুও দেখেছে। তারা উপমাকে চিনতেও পেরেছে। তারা যখন উপমাকে এসে বলে তোকে আমরা টিভিতে দেখেছি, শুনে তার মনটা খুশিতে ভরে যায়। তার বন্ধুদের মধ্যে সে-ই প্রথম মানুষ, যাকে টিভিতে দেখা গেছে।
অপর্ণা আজ অফিস থেকে ফিরেই উপমার খোঁজ করল। উপমার হাতে তুলে দিল সেই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো বসানো একটা খাম। খামের উপর লেখা, ‘মিষ্টিপরী উপমার জন্য অনেক আশীর্বাদ আর আদর’ -মনিষা সরকার। খামটা খুলতেই তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো চকচকে একটা দুইশ টাকার নোট। উপমা জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তার আপ্পিপির দিকে তাকাতেই অপর্ণা হেসে বলল, এটা তোমার সম্মানী। তোমার জীবনের প্রথম উপার্জন। উপমা খুশিতে জড়িয়ে ধরল আপ্পিপিকে। তার এবারের পূজাটা এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ পূজা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়