শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন : ক্যারিয়ার গড়তে মেধাবীদের বিদেশমুখিতা কমেছে

আগের সংবাদ

সমাবেশ পেছাল দুদলই : ঢাকায় নিরাপত্তার চাদর, পছন্দের ভেন্যু পায়নি কেউই, আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা

পরের সংবাদ

ভূতের হাট

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সস্তায় বড় বড় মাছ পাওয়া যায় বিলপাড়ার হাটে। শুধু মাছ না, সব সওদাপতিই খুব সস্তা। এ কথা তনু কাকার জানা ছিল না। যেদিন জানলেন, সেদিনই মনে মনে বিলপাড়ার হাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ, বড় মাছের প্রতি তনু কাকার ভীষণ ঝোঁক। বড় মাছের মাথা দিয়ে ভাত না খেলে কাকার মাথা ঠিক থাকে না। কিন্ত হাটটি বেশ দূরে। যেতে-আসতে দিনে কুলোয় না। রাত হয়ে যায়। কিছু পথ যেতে হয় পায়ে হেঁটে। কিছু পথ গাড়িতে। আর কিছু পথ নৌকায়। নৌকা ছাড়া বিলপাড়ার হাটে ঢোকার জোঁ নেই। খুব বড় একটা বিল। বারো মাস জল থাকে। বিলের মাঝখানে কয়েক বিঘা উঁচু ভূমি। সেখানে বিশাল একটা বটগাছ। বটগাছের ছায়ায় মঙ্গলবার হাট বসে।
বটগাছ আর হাট নিয়ে লোকের মুখে মুখে শোনা যায় নানা আজব কাহিনি। তিন-চারশ বছর আগের কথা। তখন নাকি গাছটি ওখানে ছিল না। একরাতে প্রবল ঝড় হলো। বিলপাড়ার মানুষ সকালবেলা জেগে দেখল, বিলের মাঝখানে বিশাল বটগাছ। কোথা থেকে, কীভাবে গাছ এলো, কেউ বুঝতে পারল না। তবে কেউ কেউ বলে, মস্ত এক দৈত্যি হাতের তালুতে করে গাছটি নিয়ে এসে বিলের মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছে। দৈত্যির নিঃশ্বাসেই নাকি ঝড় হয়েছিল সে রাতে।
তারপর ঘটল আরো একটা ঘটনা। অনেক দিন ধরে কঠিন অসুখে ভুগছিল এক লোক। ওই বটগাছের পাতা চিবিয়ে খেয়ে কয়েক দিনেই দিব্যি সুস্থ। লোকটি নাকি পাতা খেয়েছিল মঙ্গলবার। তাই প্রতি মঙ্গলবার পাতা খাওয়ার জন্য সেখানে ভিড় করত হাজার হাজার মানুষ। এভাবেই বটগাছের নিচে তৈরি হলো হাট।
বটগাছের আজব কাহিনি শুনে তনু কাকা ভয় পেয়ে গেলেন। কলিজায় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। কিন্তু বটপাতার ঔষধি গুণের কথা শুনে ভয়টাকে পাত্তা দিলেন না। ভাবলেন, বিলপাড়ার হাটে গেলে একসঙ্গে দুটো কাজ হবে। সস্তায় সওদাপাতিও কিনব, বটপাতাও খেয়ে আসব। কদিন ধরে শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে!
এক মঙ্গলবার খুব ভোরে বিলপাড়ার হাটের দিকে রওনা হলেন তনু কাকা। পৌঁছে গেলেন দুপুরের পর। দেখলেন, ঝাঁকড়া একটা বটগাছ। বিশাল বড়। বটগাছের নিচেই হাট। মানুষে মানুষে গমগম করছে। হাটে শুধু মাছ, মাংস, চাল, ডাল, শাকসবজিই নয়, আরো অনেক রকমের জিনিসপাতি। তনু কাকা আগে গেলেন মাছবাজারে। ইয়া বড় একটা বোয়াল কিনলেন। খুব সস্তায়। দুটো লাউ কিনলেন। ফুলকপি, পাতাকপি কিনলেন। পেঁয়াজ, মরিচসহ কিছু মসলাপাতিও কিনলেন। সবকিছুর দামই অন্যান্য হাটের তুলনায় অর্ধেক।
কেনাকাটা শেষে তনু কাকার বটপাতার কথা মনে পড়ল। তিনি ভালোভাবে খেয়াল করলেন, কেউ বটপাতা খাচ্ছে কিনা। কিন্তু কোনো মানুষকে বটপাতা খেতে দেখলেন না। দেখলেন, হাটে বিক্রি করতে আনা ছাগলগুলো বটপাতা খাচ্ছে। মনে মনে বললেন, মানুষ বটপাতা খাচ্ছে না কেন? এখন কি তাহলে বটপাতায় অসুখ সারছে না? যাই হোক, এসেছি যখন, একটা বটপাতা খেয়েই যাব। কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে, তাহলে তো আমাকে ছাগল বলবে। তাই পাতা খেতে হবে সাবধানে। কেউ যেন না দেখে। এ কথা বলেই নিচের দিকে হেলেপড়া ডাল থেকে ঝটপট একটা বটপাতা ছিঁড়লেন। পাতাটি পানের মতো চিবোতে চিবোতে সওদাভরা ব্যাগ হাতে নিলেন। তারপর মানুষের ভিড় ঠেলে হাট থেকে বেরিয়ে নৌকায় উঠলেন। রওনা দিলেন বাড়ির দিকে।
নৌকায় বিল পাড়ি দিয়ে গাড়িতে উঠলেন তনু কাকা। ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের পথ শেষে গাড়ি থেকে নেমে যখন হাঁটা শুরু করলেন, তখন সূর্য ডুবে গেছে। গোধূলি নেমেছে। শেয়াল ডাকছে হুক্কাহুয়া। আবছা অন্ধকার ভেঙে হেঁটে চললেন কাকা। ভয় ভয় লাগছে। কিন্তু ভয়কে পাত্তা দিলেন না। বুকের মধ্যে একটা ফুঁ দিয়ে সওদাপতির ব্যাগ কাঁধের ওপর তুলে হাঁটতে লাগলেন। যেতে যেতে বাড়ির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। বাড়ির কাছাকাছি হলে কী হবে, জায়গাটা ভালো না। গহিন বনের ভেতর দিয়ে সরু একটা পথ চলে গেছে। পথটুকু পাড়ি দিলেই বাড়ির সীমানা। এবার তনু কাকা বুকের মধ্যে তিনটা ফুঁ দিলেন। তারপর হাঁটতে লাগলেন। পাতা ঝরার শব্দ কানে এলো। হঠাৎ কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি। কিন্তু আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই। ভয়টা মনের ভেতর সাপের মতো মোচড় দিয়ে উঠল। আচমকা শাঁ শাঁ শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে বোয়াল মাছটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে বসল গিয়ে গাছের ডালে। বড় বড় দাঁত বের করে ভেংচি কেটে বলল, বোয়াল না তো ভূত কিনেছিস! তারপর লাউ দুটি লাফ দিয়ে পড়ল ব্যাগ থেকে। পড়েই নাচতে লাগল। ফুলকপি ও পাতাকপি উড়তে উড়তে কাকার চারপাশে ঘুরতে লাগল। শুধু কি তাই? অন্যান্য সওদাপাতিসহ ব্যাগটাও উড়ে গিয়ে গাছের ডালে ঝুলতে লাগল। ঝুলতে ঝুলতে বলল, সস্তা পেয়ে ভূত কিনেছিস, ভূত কিনেছিস! ভূতের হাটে ভূত কিনেছিস! তনু কাকা ‘ওরে বাবারে’ বলে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
চিৎকার শুনে দৌড়ে এলেন কাকি। দৌড়ে এলো পাড়াপড়শি। এসে দেখল, তনু কাকা পথের মধ্যে পড়ে আছেন। পাশেই পড়ে আছে বোয়াল, লাউ, ফুলকপি, পাতাকপি এবং অন্যান্য সওদাপাতি ভরা ব্যাগ।
ধরাধরি করে তনু কাকাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। মাথায় জল ঢালার পর কাকা জ্ঞান ফিরে পেলেন। গুঙিয়ে গুঙিয়ে বললেন, আমার বোয়াল, লাউ, ফুলকপি, পাতাকপি, আমার সওদাপাতির ব্যাগ ভূত হয়ে উড়ে গেছে। সস্তায় পেয়ে আমি ভূত কিনেছিলাম। তখন ব্যাগটা কাকার সামনে ধরে কাকি বললেন, এই যে বোয়াল। লাউ। ফুলকপি। পাতাকপি। সব তো ব্যাগেই আছে। আবোল-তাবোল কী বলছ তুমি? তোমার এই অবস্থা ক্যান? তুমি কোন হাটে গিয়েছিলে?
কাকা বললেন, বিলপাড়ার হাটে।
উপস্থিত সবাই চোখ কপালে তুলে বলল, হায়, হায়, বলছে কী! ওই হাটে কি মানুষ যায়? ওটা তো ভূতের হাট!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়