কাগজ প্রতিবেদক : ভবিষ্যতে ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই ওষুধ সহজলভ্য করতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশেই ওষুধের কাঁচামালের বাজার তৈরির তাগিদ দিলেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইৎরফমরহম ঃযব এধঢ়: ঞজওচঝ ধহফ ঊহযধহপবফ অপপবংং ঃড় গবফরপরহবং রহ ইধহমষধফবংয শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ।
এ সময় বক্তারা বলেন- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় প্যাটেন্টকৃত ওষুধ তৈরিতে প্যাটেন্টকারিকে বিশেষ ফি দিতে হয়। আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত কোনো প্যাটেন্ট ফি ছাড়াই বাংলাদেশের ওষুধ কোস্পানিগুলো এসব ওষুধ তৈরি করতে পারবে। এর পর প্যাটেন্ট ফি দিতে হলে ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই এখন থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং সবার জন্য ওষুধ সহজলভ্য করতে এখনই কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো. মজিবুল হক মনির। এতে আরো বক্তব্য রাখেন ভারতের ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের সাবেক অধ্যাপক ড. সুদিপ চৌধুরী, ন্যাশনাল কমিটি অন হেলথ মুভমেন্টের সভাপতি ডা. রশীদ ই মাহবুব, উবিনীগের ফরিদা আক্তার, ওয়াটার কিপার বাংলাদেশের শরীফ জামিল, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের রানজা সেনগুপ্তা এবং একই সংস্থা প্রতিভা সিভাসুভ্রামানিয়ান।
মো. মজিবুল হক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহজলভ্য ওষুধ নিশ্চত করা খুবই জরুরি। কারণ দেশে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় যে খরচ হয় তার ৪৪ শতাংশই ওষুধের পেছনে। দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে প্রায় ১৪৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলেও যাতে সবার জন্য ওষুধ নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য তিনি সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন- কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হওয়া, ওষুধ শিল্পে গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্বারোপ, স্বাস্থ্য খাততে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করা।
ড. সুদীপ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ভিতরেই ওষুধের কাঁচামালের বাজার তৈরি করতে হবে। এর জন্য সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। প্রতিভা সিভাসুভ্রানিয়ান বলেন, বাংলাদেশের প্যাটেন্ট আইন ২০২২-এ কিছু সংশোধনি আনা খুব প্রয়োজন। সেখানে দেশের প্রয়োজনে প্যাটেন্ট করা ওষুধ তৈরির জন্য দেশীয় কোম্পানিকে প্যাটেন্ট অধিকার ভাঙার সুযোগ করে দিতে হবে। যে কেউ যেন কোনো প্যাটেন্টের বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারে সেই সুযোগ রাখতে হবে। রানজা সেনগুপ্ত বলেন, সবার জন্য ওষুধ নিশ্চিত করতে হলে নাগরিক সমাজকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, ওষুধকে কেবল একটা পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। দেশের ভিতরে দেশীয় কিছু কোম্পানিও একচেটিয়া ব্যবসা করে, সেটিও বন্ধ করা জরুরি। রশিদ ই মাহবুব বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ঔষধ শিল্পের সমস্যা সমাধান করেই সবার জন্য ঔষধকে সহজলভ্য করা যাবে।
ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ ব্যবস্থা তৈরির জন্য সরকারের নীতিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তাছাড়া ভবিষ্যতে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। পুরো স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অনেক অর্জন আছে, কিন্তু গত চল্লিশ বছর আমরা বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম আত্মনির্ভরশীল হওয়ার, আমরা সেটা হতে পারিনি। আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ওষুধ শিল্প গড়ে তুলতে হবে, যাতে সবার জন্য সহজলভ্য ওষুধ নিশ্চিত করা যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।