জামায়াতে ইসলামী : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানি ৩১ জুলাই

আগের সংবাদ

ভোটের আমেজে তৃণমূলে ঈদ : শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পরের সংবাদ

উঠে দাঁড়ানোর গল্প

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাটের শেষ মাথায় একই সময়ে পাঁচটি গরু এলো। দুজন পাইকার মিলে গরুগুলো এনেছে। পাইকার আবুল ও মাজেদ দুটি করে, কলিমুদ্দিন আর তার ছেলে মহিদুল একটি গরু নিয়ে হাটে এসেছে। কলিমুদ্দিন অবশ্য পাইকার নয়। সে কৃষক। হাতালে তিনটে গরু ছিল। কুরবানির হাটে একটা বেচতে এনেছে। গরুটা বেচে নিজেদের থাকার ঘরটা মেরামত করবে। সামনে বর্ষাকাল। নয়তো বৃষ্টির জলে ঘর থইথই করবে।
মহিদুলকে সঙ্গে আনতে চায়নি কলিমুদ্দিন। মহিদুলের জ¦র। কিন্তু গরুটার প্রতি এত মায়া ছেলেটার! মায়া থাকারই কথা। স্কুলে যাওয়ার আগে, স্কুল থেকে ফিরে হাতালের গরুগুলোর যতœ ও-ই তো করে। কুরবানির গরুর হাটে আসার সময় বাবার হাত ধরে মহিদুল বলল- আমিও যামু বাজান।
– জ¦র নিয়া তোর যাওনের কাম নাই বাপ। গরু বেচতে পারলে তোর লাইগা জিলাপি আনমুনে।
– না, আমি যামু বাজান।
কলিমুদ্দিন উপলব্ধি করে, গরুটার প্রতি মায়া থেকে ছেলেটা সঙ্গে যেতে চাইছে।
আবুল আর মাজেদ পাইকারের গরু চারটে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে ঘাস দিতেই চিবুতে শুরু করল। কলিমুদ্দিনের গরুটা এসেই বসে পড়েছে তো আর উঠে দাঁড়ানোর নাম নেই!
আবুল পাইকার বলে- কী মিয়া, তোমার গরু বইয়া পড়ল ক্যান? বইয়া থাকলে তোমার গরু কেউ কিনব না। বাপ-পুতে মিল্যা গরুডারে খাঁড়া করো।
মাজেদ পাইকার বলে- হ, একে তো হাটের শেষ মাথায় আছি; তার ওপর তোমার গরু যদি বইসাই থাহে, তাইলে কিনব ক্যাডা? রোগা গরু মনে করব।
কলিমুদ্দিন আলত করে তার গরুর পিঠে কয়েকটা চাপড় দিল। গরুটা তবু বসেই রইল। কলিমুদ্দিন একগোছা ঘাস কিনে এনে গরুকে দিল। গরুটা বসে বসে ঘাস চিবাচ্ছে। আর গরুটার মাথার কাছে বসে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মহিদুল।
তিন-চারজন ক্রেতা এসে আবুল আর মাজেদ পাইকারের গরুর দাম বলল। কিন্তু বিক্রি হলো না।
মাজেদ পাইকার বলল- লাখ দুই টাকা দাম উঠলেই আমার গরু দুইটা বিক্রি কইরা ফেলুম।
আবুল পাইকার বলল- আমি আড়াই লাখ টাকার কমে বেচুম না।
কলিমুদ্দিন ভাবে, তার গরুর দাম এক লাখ টাকাও বলবে না কেউ!
আবার কয়েকজন ক্রেতা এলেন। কলিমুদ্দিনের গরু বসেই আছে। দেখে মনে হবে, আরাম করতে এসেছে! কিন্তু কলিমুদ্দিন রাগ করে না মোটেই। বরং গরুটার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। মহিদুল মশা-মাছি তাড়ায়। গরুর থুতনিটা কাঁধের ওপর নিয়ে গলা চুলকে দেয়। আরামে চোখ বুজে থাকে গরুটা। তা দেখে আবুল পাইকার বলে- কী মিয়া, গরু আর তোমাগো বাপ-পুতের তো একই অবস্থা দেখতাছি! তিনজনই বইয়া রইছ! গরু বেচবা না?
শুনে কলিমুদ্দিন মৃদু হাসে। আসলে টাকার দরকার হলেও গরুটা বেচতে ইচ্ছা করছে না তার। মহিদুলও মলিন মুখে বসে আছে। গরুর হাটে আসার পর থেকে গরুটার গা ঘেঁষে বসেছে তো একমুহূর্ত সরার লক্ষণ নেই।
তবে বসে থাকলেও কলিমুদ্দিনের গরুটাও ক্রেতার চোখে পড়ার মতো। কালো কুচকুচে গায়ের রং। গোশত ভালোই হবে।
দুজন ক্রেতা এলেন।
মাজেদ পাইকার ডাকল- আহেন স্যার, আমার গরু দুইডা দ্যাহেন, পছন্দ হইব। দ্যাহেন, দ্যাহেন গা-গতর কেমুন টাইট! গোশত ভালো হইব।
আবুল পাইকারও তার গরু দেখাল।
কিন্তু ক্রেতা দুজনেরই চোখ কলিমুদ্দিনের গরুটার দিকে। ক্রেতাদের একজন বললেন- এই গরুটা গেরস্ত বাড়ির হবে। এমন গরুই চাই আমরা।
কী আশ্চর্য, ক্রেতা এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কলিমুদ্দিনের গরুটা উঠে দাঁড়াল!
মাজেদ পাইকার, আবুল পাইকার আর কলিমুদ্দিন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।
হাটে আসার পরে একবারের জন্যও যে গরুটা উঠে দাঁড়াল না, ক্রেতা আগ্রহ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই গরুটা উঠে দাঁড়াল!
ক্রেতাদের একজন বললেন- গরুর দাম কত চাইছেন?
কলিমুদ্দিন কত দাম বলবে বুঝে উঠতে পারে না!
ক্রেতা আবার তাগাদা দিলেন- দাম বলো না?
– আপনেরা একটা দাম কন স্যার। সরল গলায় বলে কলিমুদ্দিন।
– আহা, গরুটা তোমার; তুমি একটা দাম বলবে তো।
– আপনেরা কন স্যার। দামে পোষাইলে বেইচা দিমু।
ক্রেতা দুজন ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বললেন- লাখ দেড়েক টাকা দেব। রাজি থাকলে চলেন হাসিল জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে আসি।
ছেলের মুখের দিকে তাকাল কলিমুদ্দিন। মহিদুল বাবার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মাথা নুইয়ে রাখল।
দাম শুনে মাজেদ পাইকার, আবুল পাইকার আর কলিমুদ্দিন আরেকবার মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।
কলিমুদ্দিন রাজি হলো। ঘরটা মেরামত করতে হবে। সামনে বর্ষাকাল।
মহিদুলকে গরুর কাছে রেখে হাসিল দিতে গেল সবাই। গরুটা আবার বসে পড়ল। মহিদুল গরুটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আগের মতো নিজের ঘাড়ে গরুর থুতনিটা রেখে গলায় হাত বুলিয়ে দিল। মহিদুলের কাঁধে মাথা রেখে করুণ চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল গরুটা, সে যেন টের পেয়ে গেছে, কিছুক্ষণ পর থেকে আর দেখা হবে না তাদের!
টাকা দিয়ে গরুটা নিয়ে চলে যাচ্ছে ক্রেতারা। যেতে যেতে মহিদুলের দিকে তাকিয়ে ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ ডাকল কয়েকবার। কলিমুদ্দিন আর মহিদুল একদৃষ্টে তাদের বহুদিনের সঙ্গী গরুটার চলে যাওয়া দেখছে।
¤øান গলায় কলিমুদ্দিন বলে- চল বাপ, তোরে জিলাপি কিনা দিই।
জিলাপি খুব প্রিয় মহিদুলের। কিন্তু এখন মোটেই খেতে ইচ্ছা করছে না। বলল- জিলাপি লাগব না বাজান। বাড়ি চলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়