ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

কুরবানির মর্ম কি অনুভব করি?

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দামি দোকানে গরু খাসি,
শহরগুলোর রাস্তায়।
তারই পাশেই খাবার বাসি,
খাচ্ছে বিতাড়িত সস্তায়।

দামি দোকান মাংস সতেজ,
ভেজাল নাহি মিশে।
বিক্রি অনেক বেশি দামে,
কিনছে লোকে এসে।

পৃথিবীর সব শপিং মলে,
একই ধারা চলে।
সব মানুষে খাচ্ছে স্বাদে,
পেঁয়াজ-মরিচ-তেলে।

অল্প সময়ে শেষ সবই,
থাকে না অবশিষ্ট।
গরিব শুধু দৌড়ে ছুটে,
অর্জনে উচ্ছিষ্ট।

পায়না সারা বছর ধরে,
অপেক্ষাতেই শেষ।
আসছে সামনে বকরি ঈদ,
লাগছে বড় বেশ।

ওই একটি সময় মাংস মোদের,
হয় যে কিছু অর্জন।
এ কারণেই সারা বছর,
চলে কিছু গর্জন।

নইলে যে ও গলার আওয়াজ,
বের হত না কিছুই।
মোদের প্রোটন নিয়ে তোমার,
মাথা ব্যথা নিচুই।

সারা বছর খাও মাংস,
কত পশু নিধন।
কুরবানি ঈদ এলেই বলো,
এ কি বিধান?

ভাবো কী একটু মোদের কথা,
জ্বাল দেয়া মাংস।
বিক্রি করি আর খেয়েই বাঁচি,
হব না যে ধ্বংস।

কুকুর পোষো পালো বেড়াল,
রাখছো পাশে শুইয়ে।
শিশুটি আমার করনা গ্রহণ,
ওই বিছানার ভুঁইয়ে।

‘ছিঃ ছিঃ একি হয়’
আঁতকে উঠবে তোমরা।
বোলো না এ উৎসব বিরুদ্ধে,
লাভবান যেখানে আমরা।

হাজার বছর ধরে বহমান নিয়মের এক অংশ খাদ্য গ্রহণ। বেঁচে থাকার তাগিদে ওই যে শিকার আর শিকারি। কখনো মানুষ আর কখনো বাইসন। কে হারায় কারে। এরপর আগুনের আবিষ্কার আর মানুষের জয়যাত্রা। এবারে ওই হিংস্র পশু পরাজিত। মানুষ খাদ্যের উপকরণ সংগ্রহে কষ্টের অধ্যায়কে অতীত করল। কৃষির আবিষ্কার আর এ শিকারের সহজলভ্যতা মানুষকে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে সহায়তা করল। এভাবেই যুগ আর কাল পরিক্রমায় মানুষ রচনা করল তার উঠে আসার ইতিহাস। তার শক্তির প্রাকৃতিক স্বাভাবিকতায় খাদ্যের অন্যতম অংশে অবস্থান নিল মাছ আর মাংস। আজ বিশ্বব্যাপী প্রতিটি ক্ষণে এ মাছ আর মাংসের বিক্রির এক বিরাট হিসাব হয়। আমি, আপনি, তারা আর ওরা অর্থাৎ সবাই কিনছি প্রতিদিন।
কিন্তু ওই নামকরা দোকান এবং শপিং মলে কেউ বলে দিচ্ছে না ‘তোমার ক্রয়কৃত মাংসের একটি প্রধান অংশ যে দিয়ে দিতে হবে ভাগ্যাহত আর দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। কারণ তোমাদের মতো কেনার ক্ষমতা যে নেই তাদের। তাদেরও ইচ্ছে ‘ছেলে-মেয়েগুলো যেন থাকে দুধে ভাতে’। সেই মহামহিম কিন্তু সব সময় দানের আদেশ দিচ্ছেন আর একটি সময় কুরবানির নিয়মে তিনটি ভাগের দুটোই যে বিলাতে হবে এ নিয়ম শেখাচ্ছেন। ‘বাস্তবতায় তুমিও খেও তবে একভাগ থেকে’। সেই ভাগ্যাহতরা বা দরিদ্র পরিচিতরা এ মাংস জ্বাল দিয়ে রেখে মাসের পর মাস আহার করুক অথবা বিক্রি করে টাকা দিয়ে পরে কিনেই খাওয়াক নিজেকে আর সন্তানদেরকে। দোষ কি তাতে প্রোটিন চাহিদা মিটছে যে। সিস্টেম যদি কখনো হয় তবে তারা এ অধিকারকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবে নিশ্চয়।
কুরবানির মূল মর্ম অনুভব করে এর সত্যিকার শিক্ষা অর্জন অত্যন্ত প্রয়োজন। মনের মাঝের পশুত্বকে বর্জন করে দরিদ্র অধিকারের একটি প্রকাশ ঘটে এখানে। নিরপেক্ষ আর চাহিদামাফিক বণ্টনের ক্ষেত্র এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন এক পরিবেশ বজায় রেখে কুরবানি পালন করতে পারলে এর আনুষ্ঠানিকতার প্রতি সম্মান দেখানো হয়।
নিগূঢ় অর্থে নিজের মাঝের অন্যায় আর অসৎ বিষয়গুলো অর্থাৎ পশুত্বকে করতে হচ্ছে সবারই বিসর্জন। তাই এ উৎসব অর্থাৎ কুরবানি বা বকরি ঈদের রয়েছে অন্য এক মাহাত্ম্য।
পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে এই গবাদিপশু বিষয়ক। কেন প্রকৃতিগতভাবে তা মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার্য করা হয়েছে এ গুরুত্ব। যা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত।
(মনে রেখ) কুরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কুরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো (সূরা হজ, আয়াত ২২)।
(হে নবী!) আমি অবশ্যই আপনাকে কাওসার (অনন্ত কল্যাণ) দান করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্যই নামাজ পড়েন ও কুরবানি দিন। নিশ্চয় আপনার প্রতি যে-ই বিদ্বেষ পোষণ করবে, বিলুপ্ত হবে ওর বংশধারা (সূরা কাওসার)।

শুরু একটি কবিতায় ছিল আর শেষ কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার পঙ্ক্তিতে হোক। তার ‘ইদুজ্জোহার তকবির শোন’ কবিতার একটি অংশে তিনি বলছেন…

‘তোর ঘরের পাশে গরিব কাঙাল কাঁদছে যে,
তুই তাকে ফেলে ঈদগাহে যাস সং সেজে,
তাই চাঁদ উঠলো, এলনা ঈদ, নাই হিম্মত নাই উম্মিদ,
শোন, কেঁদে কেঁদে বেহেশত হতে হজরত আজ কি চাহে’।

আর ‘ঈদুজ্জোহার চাঁদ’ কবিতার দুটো চরণ…
‘মনের মাঝে পশুরে তোর আজকে তারে কর জবেহ’।

আসুন মনের পশুকে অর্থাৎ অন্যায়, অসত্য, হিংসা, ফ্যাসাদ আর অসুন্দরকে চিরতরে দূর করি ঈদুল আজহায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়