হাসপাতালে খালেদা জিয়া

আগের সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প

পরের সংবাদ

আমার লাল বল

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবা সকালে সুনামগঞ্জ যাবেন। দলিলপত্র সংশোধনীর কাজ আছে। খুব ভোরে রওনা দেবেন তিনি। কাজ সেরে বাবাকে দিনে দিনে আবার বাড়ি ফিরতে হবে। খুব ভোরে উঠে মা রান্নাবান্না শুরু করে দিলেন। বাবার জন্য নাশতা তৈরি করলেন। নাশতা বেশি কিছু নয়। আলু ভাজি আর ডাল। একটু পরিপাটি হয়ে বাবা নাশতা করতে বসলেন। নাশতা করতে করতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দুষ্টুমি করিস না বাবা। বাড়ির বাইরে দূরে কোথাও যাস না।
আমি বাধ্য ছেলের মতো বললাম- জি বাবা। পরে একটু দম নিয়ে বললাম- আমার জন্য একটা বল কিনে এনো তো বাবা। একটা লাল বল আমার খুব দরকার।
বাবা বললেন- ঠিক আছে। কিনে আনব।
সেদিন সারাদিন আমি একটুও দুষ্টুমি করিনি। বাড়ির বাইরে কোথাও যাইনি। বাবার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।
এদিকে সন্ধ্যার একটু আগে ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরলেন বাবা। বিষণ্ন মুখ তার। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি সুনামগঞ্জ গিয়েছিলেন, তা সফল হয়নি। সফল হলে বাবার মুখ এমন মলিন দেখাত না।
মা জিজ্ঞেস করলেন- কাজ কিছু হয়েছে?
বাবা বললেন- না। আগামী মাসে আবার যেতে বলেছে।
মা বললেন- কী আর করবেন। যাবেন।
বাবার কাজটি হলো কী হলো না এসব আমার ভাববার সময় কোথায়? তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম- বাবা, আমার জন্য বল এনেছ?
বলের কথা শুনে বাবা যেন চমকে উঠলেন। বললেন- ওহ্। একদম ভুলে গেছি রে বেটা। একদম ভুলে গেছি। আবার কখনো গঞ্জে গেলে আর ভুল হবে না। তোর জন্য একটা বল নিশ্চয়ই কিনে নিয়ে আসব।
পরের মাসে বাবা আবার সুনামগঞ্জ গেলেন। খুব ভোরে উঠে তিনি রওনা দিলেন। যাওয়ার সময় আমি বাবাকে আমার বলের কথা মনে করিয়ে দিলাম। বাবা বললেন- বল এবার কিনে আনবই আনব।
বাবার কথাটা আমি আমার বন্ধুবান্ধবদের কাছে প্রচার করতে লেগে গেলাম। শুনে বন্ধুরা বলল- দারুণ হবে রে! দারুণ হবে। আমাদের কিন্তু বলটা খেলতে দিস।
আমি বললাম- নিশ্চয়ই দেব। বল কি আর একা একা খেলা যায় নাকি? তোদের নিয়েই তো খেলব।
সন্ধ্যায় বাবা যথারীতি বাড়ি ফিরলেন। হাসি হাসি মুখ তার। আমি ভাবলাম, বাবা বোধ হয় আজ আমার জন্য বল কিনে আনতে ভুলেননি। তাই তাকে এমন খুশি খুশি লাগছে।
এরই মধ্যে মা এসে বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন- কাজটা কি ঠিকমতো হয়েছে?
মুখে একরাশ হাসি ছড়িয়ে বাবা বললেন- না-হয়ে যায় কোথায়? আমার মুখ দেখেই তো তোমার বুঝে নেয়ার কথা।
মা-বাবার কথার মাঝে আমিও যুক্ত হলাম। বললাম- আমার জন্য বল কিনে এনেছ তো বাবা?

বাবা তার জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললেন- একদম ভুলে গেছি রে বাপ। একদম ভুলে গেছি। কী যে করি এখন!
আমি আর কী বলব বাবাকে? ভুলে গেলে তো কিছু বলার নেই। কদিন পর বাবা দেশে বেড়াতে গেলেন। তখন আমরা ছোটরা দেশ বলতে নরসিংদীকেই বুঝতাম। কারণ ওখানে আমাদের কিছু আত্মীয়স্বজন রয়েছে। যাওয়ার আগে আমি ভালো করে বাবাকে বলে দিলাম- বাবা! এবার কিন্তু আর কোনো অজুহাত চলবে না। আমার জন্য বল কিনে আনতেই হবে।
বাবা স্মিত হেসে বললেন, এবার আর ভুল হবে না।
বাবা সে-বার তার কথা রাখলেন। নরসিংদী থেকে ফেরার পথে তিনি আমার জন্য একটা মাঝারি ধরনের বল কিনে আনলেন। টুকটুকে লাল বল। বলটি পেয়ে আমি যে কী খুশি হলাম বলে বুঝাতে পারব না।
তখন বিকালবেলা। বলটি হাতে নিয়ে আমি সোজা এক দৌড় দিলাম। দৌড়ে একেবারে বাজারের পেছনের গলিতে চলে এলাম। পেছনের গলি জায়গাটা খোলামেলা। যেদিন বাজার-হাট বসে না, আমরা ছোটরা মিলে সেখানে খেলাধুলা করি। পেছনের গলিতে গিয়ে দেখি ওখানে আমার খেলার সাথিদের অনেকেই এসে গেছে। ওরা গোল্লাছুট খেলছে। আমার হাতে লাল বলটি দেখে ওরা খেলা থামিয়ে দিল। মাসুদ, দেলোয়ার, নজরুল, আবুবকর ও হাফিজ আমার দিকে অবাক চোখে তাকাল। পরে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে বলটি নিয়ে সবাই খেলায় মেতে ওঠল।
ঘণ্টাখানেক আমরা বল খেললাম। সকলেই গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে বলটিতে লাথি মেরে মেরে খেললাম। কিন্তু বলটির কিছুই হলো না। হবে কেমন করে? আমার বাবা অনেক দেখেশুনে বলটি কিনে এনেছেন কিনা। মজবুত না-হলে কী বাবা শুধু শুধু ওটা পয়সা দিয়ে কিনে আনতেন?
আমাদের বল খেলা কিন্তু থেমে নেই। প্রবল উল্লাসে চলছে খেলা। আমার মনে তখন অনেক জোশ। হঠাৎ আমি বলটিতে এমন জোরে একটা লাথি মারলাম, আমার লাথি খেয়ে বলটা যেন একেবারে মহাশূন্যে উড়াল দিল। সবাই অবাক হয়ে বলটার দিকে তাকিয়ে রইল। আর বলটা আপনাআপনি উড়ে উড়ে একটা দেয়ালের ওপাশে গিয়ে পড়ল।
দেয়ালের ওপাশে পড়ামাত্র আমার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠল। দেয়ালের ওপাশে মানিক ভাইদের লেবুবাগান। আমি মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহপাক এমনটি না-করুক। যদি বলটি গিয়ে লেবুগাছের কাঁটার ওপর পড়ে, তাহলে আর রক্ষা নেই। ফুটো হয়ে যাবে।
আমরা তড়িঘড়ি করে দেয়ালের ওপাশে লেবুবাগানে গিয়ে ঢুকলাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করে প্রিয় বলটাকে পেয়েও গেলাম। দেখি কী- আমার লাল বলটা লেবুগাছের কাঁটায় বিঁধে শূন্যে ঝুলে আছে। তাড়াতাড়ি আমি বলটাকে গাছ থেকে নামিয়ে আনলাম। বল হাতে নিয়ে সামান্য চাপ দিতেই ফুঁ ফুঁ করে এর ভেতরটা খালি হয়ে গেল। আমার প্রিয় লাল বলটি একেবারে চুপসে গেল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়