আইপিএলের ফাইনাল : বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে নতুন লক্ষ্য পেল চেন্নাই

আগের সংবাদ

‘ভোটার সন্তুষ্টি’র বাজেট আজ : আইএমএফের শর্তে বাড়ছে কর রাজস্ব > মোট ব্যয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা

পরের সংবাদ

পাখির বাসা

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তিতলিদের বাসার বারান্দাটা নানারকম গাছপালায় ভর্তি। গোলাপ, বেলি, জবা, মর্নিং গেøারি, সন্ধ্যামালতী, নয়নতারা, কাঠগোলাপ, রেইনলিলি, পর্তুলিকা, বাগানবিলাস, কুঞ্জলতা, নানা রকমের পাতাবাহার, মানিপ্লান্ট, পাথরকুচি, তুলসী, কৈলাশ, জেব্রিনা, চায়না বট, মিনিয়েচার বাঁশ, লাকি ব্যাম্বু- কী নেই ওদের বারান্দাবাগানে! প্রতিদিন কত রঙের কত বর্ণের ফুল যে ফোটে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গাছ লাগানো তিতলির বাবার অনেকটা নেশার মতো। সেই নেশায় পেয়েছে ছোট্ট তিতলিকেও। সপ্তাহে একদিন তিতলির বাবা বারান্দায় নতুন গাছ লাগাবে, নইলে গাছের টব অদলবদল করবে, প্রতিটি গাছের পরিচর্যা করবে। স্কুল ছুটির দিনে বাবার পাশাপাশি তিতলিও সে কাজে হাত লাগায়। আর প্রতিদিন সকালে পানি দেয়া তো আছেই। বাবার সঙ্গে গাছের যতœ নিতে নিতে তিতলিও এখন গাছের গোড়ার মাটি দেখেই বুঝতে পারে, কোন গাছটিতে আজ পানি দিতে হবে আর কোনটিতে দিতে হবে না। কোন গাছে প্রতিদিন পানি না দিলে একটুতেই ঢলে পড়ে আর কোন গাছে সপ্তাহে একদিন পানি দিলেই দিব্যি বেঁচে থাকে। কোন গাছের কী নাম, কোন গাছে কখন ফুল আসবে, কোন ফুলটি আমাদের দেশি, কোনটি বিদেশ থেকে আসা- এতদিনে এও অনেকটা জেনে ফেলেছে তিতলি।
একদিন সকালবেলা বাবা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন। এমন সময় তিতলি বারান্দা থেকে প্রায় দৌড়ে এসে বলতে লাগল- বাবা… বাবা, বারান্দার গ্রিলের ওপর দুটি পাখি কী যেন করছে।
– কী যেন করছে মানে?
– কোথা থেকে যেন ছোট ছোট ডালপালা এনে বারান্দায় জড়ো করছে। আমাকে দেখেই ফুড়–ত করে উড়ে গেল।
– তাই নাকি? তা কী পাখি বলো তো? চড়–ইপাখি নাকি?
– না না, চড়–ইপাখি তো আমি চিনিই। কবুতর, টিয়া, শালিক- এগুলোও চিনি। কিন্তু এ পাখি দুটিকে চিনতে পারছি না। এমন পাখি কোনো দিন দেখেছি বলেও মনে পড়ে না।
– আচ্ছা! পাখি দুটি দেখতে কেমন বলো তো?
– মাথায় কালো ঝুঁটির মতো আর লেজের নিচের দিকটা লাল।
– বুঝতে পেরেছি। বুলবুলি পাখি। এরা আমাদের দেশি পাখিই। তবে দেখতে বেশ সুন্দর। আমাদের দেশের বনজঙ্গল, শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায়ই ওদের দেখা মেলে।
– আমাদের দেশি পাখি মানে কী বাবা?
– দেশি পাখি মানে এরা আমাদের দেশের আবহাওয়ায়ই বারো মাস থাকে। আর শীত বা অন্য কোনো কারণে যেসব পাখি বছরের বিশেষ কোনো সময় আমাদের দেশে আসে তাদের পরিযায়ী বা অতিথি পাখি বলে। জুতোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলে বাবা।
– তা বাবা, ওরা আমাদের বারান্দায় কী করছে?
– আমাদের বারান্দায় ওরা নিশ্চয় বাসা বানাবে। ওরা গাছপালা বা ঝোপজঙ্গলে ছোট্ট করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। আমাদের বারান্দায় যেহেতু অনেক গাছপালা, কোনো গাছের পাতার ফাঁকে হয়তো বাসা বানাবে ওরা।
ডিম পাড়া আর বাচ্চা ফোটার কথা শুনে পাখি দুটির প্রতি তিতলির আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর থেকে সে প্রতিদিন বারান্দায় গেলে প্রথমেই পাখি দুটির দিকে খেয়াল করে। তিতলি দেখল, মাত্র কয়েকদিনেই পাখি দুটি বেলিফুল গাছটার পাতার ফাঁকে চমৎকার একটি বাসা বানিয়ে ফেলেছে। একটা পাখি সব সময় বসে থাকে সেই বাসায়। অন্য পাখিটি বসে থাকে বারান্দার গ্রিলে বা কাছাকাছি কোথাও। তিতলির বাবা তাকে সাবধান করে দিল, এখন থেকে তুমি বাসার কাছে যাবে না। দূর থেকে শুধু দেখবে। ওদেরকে ডিস্টার্ব করলে ওরা কিন্তু বাসা ফেলে চলে যাবে।
বাবার কথামতো তিতলি বারান্দার যে পাশটায় পাখি বাসা বানিয়েছে সে পাশে যাওয়া বন্ধ করে দিল। বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখত বাসায় পাখি আছে নাকি নেই। একদিন সকালে সে এমনি দেখতে গেছে, হঠাৎ করেই একটা পাখি তার মাথায় প্রায় ঠোকর দিয়ে ফেলেছিল। ভয় পেয়ে দৌড়ে ঘরের মধ্যে চলে গেল তিতলি। সন্ধ্যায় বাবা বাসায় আসতেই তাকে বলল- জানো বাবা, আজ না একটা পাখি আমাকে প্রায় ঠোকর দিয়েছিল। আমি দৌড়ে বাসার মধ্যে চলে এসেছি।
বাবা বলল- বোধহয় বাচ্চা হয়েছে। এখন ওদের বাসার কাছাকাছি একদম যাওয়া যাবে না। বুলবুলি এমনিতেই একটু ঝগড়াটে পাখি। ওরা নিজেরা নিজেরা মারামারিও করে। আর যে কোনো পাখিই যদি মনে করে যে তার বাচ্চার কেউ ক্ষতি করতে পারে, তাহলে তাদের ওপর ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বাবার কথা শুনে তিতলি কিছুটা ভয় পেল। এরপর থেকে সে একা একা বারান্দায় যাওয়া বন্ধ করে দিল। তবে বারান্দার সঙ্গে যে জানালাটা, তার পর্দার সরিয়ে কাচের এপাশ দিয়ে ও পাখিদের কাজকারবার দেখতে লাগল বেশ আগ্রহ নিয়ে। একদিন সে দেখল, দুটো পাখিই বারবার উড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে আর একটু পরে মুখে কিছু একটা নিয়ে ফিরছে। বড় পাখি ফিরে আসছে বুঝতে পেরেই বাবু পাখিরা মাথা উঁচু করে বড় করে মুখ হাঁ করছে। বড় পাখি তার মুখে নিয়ে আসা জিনিসটা বাবু পাখিদের খাইয়ে দিচ্ছে।
কয়েকদিন পরে এক রাতে প্রচণ্ড কালবৈশাখী বয়ে গেল তিতলিদের এলাকার ওপর দিয়ে। এমন ঝড়বৃষ্টি অবশ্য এই দিনে মাঝে মাঝেই হয়। কিন্তু পরদিন সকালে তিতলি জানালা দিয়ে দেখল, বেলিফুলের ডালপালার মধ্যে পাখির বাসাটা নেই। দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে সে মাকে ঘটনাটা জানাল। মা সঙ্গে সঙ্গে বারান্দায় গিলে দেখল, ঝড়ে পাখির বাসাটা পড়ে গেছে। ছোট্ট একটা পাখির ছানা ভিজে জবুথবু হয়ে বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বড় পাখি দুটিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
তিতলির মা পাখির ছানাটাকে আলতো করে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। তারপর নরম কাপড় দিয়ে তার শরীর মুছে দিল। শুকনো কাপড়ে পেঁচিয়ে তাকে এমনভাবে হাতের মধ্যে রাখল যে শুধু তার মাথাটাই বাইরে রইল। রুটি ভিজিয়ে ছোট ছোট করে তার মুখে পুড়ে দিতে লাগল। পাখির ছানাটাও সেই রুটি গপগপ করে গিলে ফেলতে লাগল। এরপর হাতের আঙুল ভিজিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি ছানাটাকে খাইয়ে দিতে লাগল। একটু পরে মা সেটাকে বারান্দায় নিয়ে ছেড়ে দিল। তিতলি দেখল, ছানাটা আর আগের মতো জবুথবু হয়ে নেই। ছেড়ে দিতেই সে একদৌড়ে বারান্দার ওপাশে চলে গেল।
মা বলল- দরজা বন্ধ করে চলো আমরা ভেতরে যাই। ওর বাবা-মা এসে ওকে নিয়ে যাবে। আর যদি না নিয়ে যায়, পরে আবার ওকে খাবারদাবার দেব।
তিতলির মা বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিল। তিতলি খাটের ওপর উঠে জানালার পর্দা ফাঁক করে পাখির ছানাটার দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পরই বড় পাখি দুটো জানালার গ্রিলে এসে বসল। এদিক-ওদিক বার কয়েক তাকিয়ে দুটি পাখিই বারান্দার মেঝেতে ছানাটার কাছে নেমে এলো। তিনটি পাখি কিছুক্ষণ মেঝেতে হাঁটাহাঁটি, লাফালাফি, ডাকাডাকি করল। এরপর একটা বড় পাখি একটু উপরের দিকে উড়ে বারান্দার দক্ষিণ দিকের গ্রিলটাতে গিয়ে বসল। সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় বড় পাখিটাও উড়ে গিয়ে তার পাশে বসল। তাদের দেখাদেখি বাচ্চা পাখিটাও উড়ে গিয়ে বাবা-মায়ের পাশে বসল। এবারে প্রথম পাখিটা আরেকটু উড়ে গিয়ে পশ্চিম পাশের গ্রিলটাতে বসল। সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় বড় পাখিটাও উড়ে গিয়ে তার পাশে বসল। তাদের দেখাদেখি বাচ্চা পাখিটাও পশ্চিম দিকের গ্রিলে গিয়ে বসল। এবারে প্রথম পাখিটা আবার উড়াল দিয়ে পাশের বাড়ির ছাদের রেলিংয়ে গিলে বসল। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় পাখিটাও উড়ে গিয়ে পাশের বাড়ির ছাদের রেলিংয়ে বসল। তাদের দেখাদেখি বাচ্চা পাখিটাও উড়াল দিয়ে বাবা-মায়ের পাশে গিয়ে বসল। এরপর তারা রেলিংয়ের ওপর হাঁটতে হাঁটতে ছাদের অপর প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াল। এর একটু পরেই প্রথম পাখিটা আবার উড়াল দিল। এবার সে উড়ে গিয়ে পাশের লিচুগাছটার পাতার মধ্যে ঢুকে গেল। তার দেখাদেখি দ্বিতীয় বড় পাখিটা এবং বাচ্চা পাখিটাও উড়ে গিয়ে লিচুগাছটার পাতার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
তিতলি দৌড়ে গিয়ে তার মায়ের কাছে পুরো ঘটনাটা বর্ণনা করল।
মা বললেন- পাখির ছানাটা চলে যাওয়ায় তুমি কি খুব কষ্ট পেয়েছ?
তিতলি বলল- মোটেই না। বাবু পাখিটা ওর বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ায় আমি অনেক খুশি হয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়