মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ : সংবাদ প্রচার করতে পারবে না আইপি টিভি

আগের সংবাদ

বঙ্গবাজারে ডিএসসিসির বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ : ঠেকাতে আ.লীগ-বিএনপি ‘ঐক্য’

পরের সংবাদ

ঋভু ও বন্ধু বালিহাঁসের গল্প

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– তোমার কি খুব বেশি মন খারাপ?
– মন খারাপ হবে না? বালিহাঁসটির দিকে অবাক চোখে তাকায় ঋভু।
– আমারও ভীষণ মন খারাপ। কতদিন পাশাপাশি ছিলাম। কত সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেছি।
– হুম তাই। বালিহাঁসটির কথায় সম্মতি জানায় ঋভু।
এইতো কিছুদিন আগে সুদূর ইউরোপ থেকে অন্যান্য পাখির সঙ্গে বালিহাঁসটি এসেছিল বাংলাদেশে। শিকারির কবলে পড়ে কিছুটা আহত হয়ে ঋভুদের বাড়ির কাছের বিলের ধারে একটি গর্তে পড়েছিল। শিকারি হয়তো তাকে খুঁজে পায়নি। কিন্তু ঋভু বিলে মাছ ধরতে এসে আহত বালিহাঁসটিকে দেখতে পায়। সেবা-যতœ করে সুস্থ করে তোলে। তাদের মধ্যে অনেক কথার আদান-প্রদান হয়। বালিহাঁসটি জানায়, তাদের দেশে ভীষণ রকম শীত পড়লে তারা এ দেশে চলে আসে। আবার শীত কমলেই চলে যায়। আজ বালিহাঁসটির চলে যাওয়ার দিন। তাই ওদের দুজনেরই ভীষণ মন খারাপ।
– ঋভু, আমি তোমাকে কোনোদিন ভুলব না। তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ। আমি তোমার কাছে ঋণী।
– বন্ধুত্বে ঋণী হয়? এটা তো আমার দায়িত্ব ছিল। কোনো প্রাণী বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করাই মানুষের ধর্ম। ঋভু উত্তর দেয়।
– তা তো ঠিক। কিন্তু সবাই কি তা করে? তাহলে কি তোমাদের দেশে বেড়াতে এসে আমি আহত হতাম? বালিহাঁসটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
– রাগ করোনা বন্ধু। আমি মানুষের পক্ষ থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
– আমার যাওয়ার সময় হলো বন্ধু। আমাকে বিদায় দাও।
ঋভু পরম মমতায় বালিহাঁসটিকে কোলে তুলে নেয়। বলে- আবার আসবে তো?
– মন খারাপ করো না বন্ধু। আমি আগামী শীতে আবার আসব। যাওয়ার আগে আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই।
– সত্যি! কী উপহার বন্ধু?
– এই নাও। বালিহাঁসটি ঋভুকে একটি কৌটা দেয়।
– এটাতে কী আছে? ঋভু জানতে চায়।
– সেটা এখন বলব না। আমি যাওয়ার পর তুমি খুলে দেখবে। এবার আমি যাই বন্ধু। বালিহাঁসটি চোখ মুছতে মুছতে ঋভুর কাছ থেকে বিদায় নেয়।
বন্ধু বালিহাঁস চলে যেতেই হাতের কৌটাটি খোলে ঋভু। সঙ্গে সঙ্গেই কৌটা থেকে বের হয়ে তার সামনে আসে পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় বসা অপূর্ব এক রাজপুত্র। ঋভু তো অবাক!
– কে তুমি? ঋভু জানতে চায়।
– আমাকে চেন না? আমি ঋতুরাজ বসন্ত।
– তাই না কি? তুমি ঋতুরাজ বসন্ত? আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখিনি কোনোদিন।
– কী শুনেছ আমার কথা? ঋতুরাজ জানতে চায়।
– শুনেছি তুমি এলেই গাছে গাছে নতুন পাতা হয়, ফুল হয়, কোকিল গান গায়। আরো কত কী!
– তুমি যাবে আমার সঙ্গে? দেখবে আমার কাজ?
– অবশ্যই যাব। ঋভু ঋতুরাজ বসন্তের সঙ্গে পঙ্খিরাজে চড়ে উড়তে থাকে।
ঋতুরাজ তাকে ঘুরে ঘুরে দেখায় ফুলে ফুলে ভরা অশোক, হিমঝুরি, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলাশ আর শিমুলের বাগান। নতুন নতুন পাতায় ভরা গাছ। শোনায় গাছে গাছে কোকিলের কুহুতান। ঋভুর একদম মন ভরে যায়। মনে মনে বন্ধু বালিহাঁসকে একটা ধন্যবাদ জানায় এত সুন্দর একটা উপহার দেয়ার জন্য।
– তোমার কি মন ভালো হয়েছে, ঋভু? জানতে চায় ঋতুরাজ।
– হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো হয়েছে।
– তাহলে আমি এখন চলে যাই, আমার অনেক কাজ। এখনো অনেক বাগানে ফুল ফোটাতে হবে। অনেক গাছে এখনো পাতা গজাতে বাকি। এখনো অনেক পাখির গলা ঠাণ্ডা লেগে বসে গেছে। তাদের কণ্ঠেও গান দিতে হবে।
– আচ্ছা ঋতুরাজ, তুমি যাও কাজ করো গিয়ে। আমার মন ভালো হয়ে গেছে।
ঋভু খুশিখুশি মন নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। মনে পড়ে যায় বন্ধু বালিহাঁসের কথা। মনে মনে বলে, ‘আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব বন্ধু বালিহাঁস। আগামী শীতে আমাদের আবার দেখা হবে নিশ্চিত।’

– দিলরুবা নীলা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়