ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

এসডিজি ৬ অর্জনে চলমান কার্যক্রম আরো বেগবান করতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৬ নম্বরেই নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের উল্লেখ রয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চলছে নানা কার্যক্রম। তবে এর গতি খুব শ্লথ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কাজের গতি ৪ গুণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব পানি দিবসকে সামনে রেখে ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিতকরণ’ বিষয়ক এক সেমিনারে তারা এই তাগিদ দেন। গত ২০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন) ও ভোরের কাগজ।

মো. তাজুল ইসলাম
আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সরকারেরও একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে চাই। এই দুই লক্ষ্যের সমন্বয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছি এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু আমাদের দেশই নয়, উন্নত অনেক দেশও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের জন্যও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীতে আমরা পানির জন্য রাস্তায় মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখেছি। কলস নিয়ে আন্দোলন করতে দেখেছি। কিন্তু এখন চিত্র বদলেছে। ঢাকা শহরে শতভাগ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সারফেস ওয়াটার প্ল্যান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার ধনী ও গরিব এলাকার মানুষ সবাই সমান মূল্য দিয়ে পানি কিনছে, যেটা ঠিক না। অভিজাত এলাকায় পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বস্তিসহ যেসব এলাকায় দরিদ্র মানুষ বাস করে সেসব এলাকায় কম মূল্যে তা দেয়া উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স গুলশানে যা হবে যাত্রাবাড়ীতেও কেন তাই হবে? এক্ষেত্রে আমরা কেন ভর্তুকি দেব? ভর্তুকি যে কোনো সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

শ্যামল দত্ত
দশকের বেশি সময় ধরে সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। স্বল্পোন্নত দেশে একটি বড় অগ্রগতি নির্দেশক হচ্ছে পানি ও স্যানিটেশনের অগ্রগতির বিষয়টি। ২০২৬ সালের পর আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের অগ্রগতির অন্যতম নির্ণায়ক হচ্ছে- পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা আমরা মানুষের জন্য কতটা সহজলভ্য করতে পেরেছি। পানি দিবসের মতো প্রতিটি দিনই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা এই খাতে কতটা অগ্রগতি করেছি। আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারব আমাদের অগ্রগতি কোথায় পৌঁছেছে এবং কোথায় কোথায় আরো অগ্রগতি করতে হবে।

এস. এম. এ. রশীদ
জাতিসংঘের ৪৭তম অধিবেশনে বিশ্বব্যাপী পানি সংকটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ দিবসটি পালন করে আসছে। পানি সংকট ও পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য দিবসটি একটি বড় উপলক্ষ। বিশ্বব্যাপী চাহিদার তুলনায় সুপেয় পানির সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনায় আমাদের দুর্বলতাগুলো অনুধাবন করতে হবে। বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখব, পানি দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্যটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা সমাধানে আমাদের যে চলমান রোডম্যাপ, সেখানে কোথায় কতটা পরিবর্তন প্রয়োজন- তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি বাস্তবায়নের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করাই হচ্ছে এবারের মূল প্রতিপাদ্য।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (৬) অর্জনের অগ্রগতির হার দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিশ্চয়তা দিচ্ছে না যে, ২০৩০ সালের মধ্যে তা সম্পূর্ণভাবে অর্জন করতে পারব। এটি বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সত্য। এখন থেকে যে সময়টুকু বাকি আছে এই সময়ে চলমান যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে তা আরো ৪ গুণ বেশি গতিতে ত্বরান্বিত করতে হবে। জাতিসংঘের ২০২২ সালের এসডিজি অন্তর্বর্তী সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ পানীয় জল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৫ থেকে ২০২০ এর মধ্যে ৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ শতাংশ হয়েছে। নিরাপদ স্যানিটেশন ৪৭-৫৪ শতাংশ হয়েছে। এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা ৬৭-৭১ শতাংশ হয়েছে। বাকি সূচকগুলোর অবস্থাও একইরকম।
করোনা মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতিসহ সবকিছুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই পানির ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বৈশ্বিক প্রচারাভিযানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার শুরু করতে হবে নিজ থেকে। এরপর পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণ, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং কাজের মধ্যে সুসমন্বয় প্রয়োজন। যেখানে সবার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রæতি, অঙ্গীকার এবং পদক্ষেপ থাকবে। যা পরবর্তীতে পরিমাপযোগ্য এবং পুনঃবাস্তবায়নযোগ্য হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে মিলেই চলমান কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, এলাকাসমূহ, বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী; সবাইকে রক্ষা করবে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই পারবে যথাসময়ে এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে।

তুষার মোহন সাধু খাঁ
আমাদের সামনে যখন এমডিজি (সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) দেয়া হলো, ২০১৫ সালে কিন্তু আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করি। এমডিজিতে পানি সংক্রান্ত যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেখানে আমরা ৯৯ শতাংশ কাভারেজে উন্নীত হই। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলি। কিন্তু যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় মানসম্মত বিষয়টি যুক্ত করা হলো- তখনই পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন কাভারেজে অনেকটা পিছিয়ে গেলাম। আমরা এখন যে কার্যক্রম নিয়েছি, তার সবটাই এসডিজিকে লক্ষ্য করে। মানসম্মত নিরাপদ পানি নিশ্চিত এবং স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে যেন এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়- সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শহরকেন্দ্রিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য ডিপিএইচসিতে একটি সাপোর্ট সেল আছে। যেখানে সব জেলার তথ্য আছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে দুটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তায় দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পানির ক্ষেত্রে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যা রুরাল এলাকাসহ পুরো দেশ কাভার করবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে। আমি মনে করি, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক পথেই আমরা এগুচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো।

ড. তানভীর আহমেদ
এমডিজি অর্জনে আমরা ভালো করেছি। সে তুলনায় এসডিজি অর্জনে নিরাপদ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতিটা অত্যন্ত দুর্বল। জলবায়ু পরিবর্তন, মিঠাপানির অভাব, খরা, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রসর হতে পারিনি। একইভাবে স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বর্তমানে আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছি, তাতে সঠিক সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব মুশকিল হবে। এ অবস্থায় লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে। আমরা প্রতি বছরই দেখছি, ওয়াশ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু এই বাজেট এসডিজি অর্জনে যথেষ্ট নয়। আবার এই বাজেটের টাকাটা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় খরচ হচ্ছে কিনা, সেটিও দেখতে হবে। এ জন্য সময়মতো অর্থ ছাড় করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টাকা শুধু বরাদ্দ করলে হবে না, খরচ করতে হবে। আবার টাকাটা সঠিক জায়গায় খরচ হচ্ছে কিনা, সেটিও মনিটরিং করতে হবে।

ড. আব্দুল্লাহ আল মুঈদ
সোয়াইশ অ্যাপ্রোচে তিনটি ফাংশনের কাজ আছে। একটি ইকুইটি, একটি সেফটি এবং অপরটি সাসটেইনেবিলিটি। মন্ত্রী মহোদয় কিছু দিন আগে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় নির্মিত সোয়াইশের ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করেছেন। ইতোমধ্যেই কোয়ালিটি ও সেফটির অ্যাসপেক্টে সেখানে বাংলাদেশের প্রথম ওয়েস্ট ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এটি স্থাপন সম্পন্ন হবে। আরেকটি বিষয়- এককভাবে সোয়াইশ করলে হবে না। এটি সবাইকে নিয়ে করতে হবে। ইকো সিস্টেম তৈরির কাজ চলছে। যে যেখানে কাজ করছে সে যাতে সেখানে সোয়াইশ করে সেটাই আমরা নিশ্চিত করছি। আরো কর্মীর প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু আমি বলব, সাধারণ কর্মী নয়, দক্ষ কর্মীর বেশি প্রয়োজন। আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নির্দেশনা, সেখানে শুধু সংখ্যা নয়, এর জন্য দক্ষতা প্রয়োজন।

বাছেরা আক্তার
আমি ঢাকা শহরের বস্তিগুলোতে গবেষক হিসেবে কাজ করছি। গবেষণা থেকে আমরা যে বিষয়গুলো দেখতে পাচ্ছি সেগুলো হলো- আমাদের এখন ভাববার সময় এসেছে, সাপ্লাই ওয়াটার নিশ্চিত করাকেই আমরা খুব ভালো কাভারেজে চলে আসছি বলছি কিনা? সাপ্লাই ওয়াটারের কোয়ালিটি নিশ্চিত করার সময় এসেছে। আজ থেকে ৪-৫ বছর আগেও আমরা গবেষণায় পেয়েছি, নগরের বস্তিগুলোতে ওয়াটার সাপ্লাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, সেখানে সাপ্লাই ওয়াটার আছে। কিন্তু যে ওয়াটার সাপ্লাই হচ্ছে, তার কোয়ালিটি নিয়ে সবাই অসন্তুষ্ট। সেখানে যে পানি আছে, তা আসলে ক্লিন ও সেফ ওয়াটার কিনা- এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখন আলোকপাত করার সময় এসেছে। যদি আমরা এসডিজি অর্জন করতে চাই। পানি পাওয়ার জন্য বস্তিবাসীকে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হয়, সেটা আসলে কতটুকু ইকুইটেবল হচ্ছে? তাও ভাবতে হবে। বাজেটের ৭৯ শতাংশ যাচ্ছে নগরে। এর মধ্যে কত শতাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। দ্বিতীয় যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো স্যানিটেশন নিয়ে। বস্তিতে স্যুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনেজ লাইন অনেক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ বস্তিতে স্যুয়ারেজ সিস্টেম নাই। ড্রেনেজ সিস্টেম আছে। সেগুলোও খুব ভালো না। অবৈধ সংযোগ যেহেতু হচ্ছে, সেখানে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংযোগ একাকার হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পানির মান খারাপ হচ্ছে।

মো. সরোয়ার হোসেন
পানি এবং স্যানিটেশনের অগ্রগতিকে যদি আমরা হেঁটে যাওয়া হিসেবে ধরি, তাহলে এখন আমাদের দৌড়াতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে যদি আমরা চিন্তা করি, সেখানে দেখা যায়- এখনো ১২০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির আওতার বাইরে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সে দিক থেকে আমরা অনেকটাই এগিয়ে আছি। আমরা সবাই জানি, আমরা সফলভাবেই এমডিজি অর্জন করতে পেরেছি। এসডিজির ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মোটিভেশনাল কাজটা আমাদের আরো জোরদার করতে হবে। কারণ মোটিভেশনাল কাজটা আমরা যদি সঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে এসডিজির অগ্রগতিটা আরো বেশি ত্বরান্বিত করতে পারবো। ডিপিএইচইতে আমাদের যে বাজেট তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি। বিশেষায়িত কতগুলো অঞ্চল আছে, খরা মৌসুমে যেখানে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। সেসব অঞ্চলের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে বর্তমানে প্রকল্প চালু আছে। তাছাড়া এসডিজির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় স্যালো টিউবওয়েল কাজ করছে না। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রাউন্ড ওয়াটার থেকে সারফেস ওয়াটারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু খরার সময় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করার খরচটা অনেক বেশি হয়ে যায়। সেই পানি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যে খরচটা হয়, সেটা আমাদের দেশের জন্য খুবই ব্যয়বহুল। এরপরও গ্রাউন্ড ওয়াটারের চেয়ে সারফেস ওয়াটারের দিকে যেতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে আরবান ওয়াটারের ক্ষেত্রে সারফেস ওয়াটারের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এসডিজি অর্জন করতে হলে পানির গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। সেই লক্ষ্যেই প্রতিটি জেলায় একটি করে ল্যাবরেটরি স্থাপন করে ফেলেছি। এগুলো চালু হতে আরো প্রায় ৪-৫ মাস লাগবে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে সময়মতোই আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারব।

ড. আনোয়ার জাহিদ
আমরা জানি, পানি আমাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়েই এসডিজির প্রায় সব লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গেই পানি সম্পর্কিত। পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি আছে, তার ১ ভাগেরও কম পানি আমরা ব্যবহার করতে পারি। এটা মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে। এই ১ ভাগেরও কম পানি পাচ্ছি হাইড্রোলজিক সাইকেল থেকে। হাইড্রোলজিক সাইকেলে পানি কিন্তু বাড়ে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমিয়ে ফেলছি। ব্যবহারের উপযোগী যে পরিমাণ পানি আছে, চাহিদা কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি। সেই চাহিদা কীভাবে আমরা পূরণ করব, এ ক্ষেত্রে কাদের প্রাধান্য দেব- এই বিষয়গুলো পানি অ্যাক্টে বলা আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি, আমরা যত পানি ব্যবহার করি এর প্রায় ৮০ ভাগই যায় কৃষির সেচে। ১০ ভাগের মতো কলকারখানায় ব্যবহার হয়। আর ওয়াশ ও গৃহস্থালিতে ব্যবহার করি ৫ শতাংশ পানি। আমাদের হাইড্রোলজিক্যাল ডিজাস্টার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো- এগুলো আমাদের জীবনধারা ও দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তেমনি ওয়াটার ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সমস্যা তৈরি করে। পানির সমস্যাগুলো আমরা জানি। দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। রয়েছে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার মতো সমস্যা। এই তথ্যগুলো আমরা পাচ্ছি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে। মনিটর করছি বলেই কিন্তু অবস্থাটা জানতে পারছি এবং কার্যক্রম নিতে পারছি। গবেষণা ও মনিটরিংয়ের বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এটিকে যদি শক্তিশালী করতে পারি, তাহলে এসডিজি অর্জনের পথে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারব।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ বছরের তথ্য নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এই তথ্যগুলো আমাদের পানি আইন, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ওয়াটার অ্যালোকেশনের জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, সেখানে কাজে লাগতে পারে। এত দিন আমরা ম্যানুয়েলি এসব তথ্য সংগ্রহ করতাম। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেটওয়ার্কের ৯০৫টা ওয়েলকে অটোমেশন করেছি। আমাদের সার্ভারে সরাসরি তথ্য চলে আসে। আমাদের সমস্যাগুলো হাড টু রিচ এলাকায় বেশি। ওয়াটার সাপ্লাই টেকনোলজি নিয়ে কাজ করি, ওয়াশ ও স্যানিটেশন টেকনোলজি নিয়েও কাজ করি। আমাদের ইনোভেশন আছে। কিন্তু এই ইনোভেশনগুলোকে আরো কীভাবে ইফিসিয়েন্স করা যায়, এ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।

শফিকুল আলম
অ্যাক্সেলারেশনের ক্যাটাগরিতে যেসব দেশকে রাখা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। সুতরাং আমাদের অ্যাক্সেলারেশনে যেতে হবে। ক্রাইসিসের কথা বলা হয়েছে। এর মানে আমরা একটা ক্রাইসিসের মধ্যেও আছি। এসডিজির জন্য আমরা ১৫ বছর পেয়েছি। এখন আমরা যে অবস্থায় আছি, তা হচ্ছে মাঝামাঝি। ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। সামনে আরো ৭ বছর পাব। এসডিজি অর্জনের জন্য এখন আমরা যে গতিতে এগোচ্ছি, এই গতিটিকে আরো ৪ গুণ বাড়াতে হবে। ২০২০ সালের জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম থেকে যে তথ্য এসেছে তাতে দেখা গেছে, আমরা ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি। যা আমাদের শতভাগে যেতে হবে। ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ পানির কাভারেজ আছে। কিন্তু সেফলি ম্যানেজটা কম আছে। স্যানিটেশনে আমরা ৩৯ শতাংশে আছি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই কাভারেজকে যদি শতভাগে উন্নীত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের অ্যাফোর্টটাও বেশি দিতে হবে। ইউএন এজেন্সি হিসেবে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ওয়াশ রেগুলেটরি বডি গঠনের উল্লেখ রয়েছে। সেই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। আমাদের সম্পদ খুব অপ্রতুল। এই অল্প সম্পদ দিয়ে যদি অনেক বেশি অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের যথার্থ (একুরেট) তথ্য লাগবে। যাতে আমাদের বরাদ্দগুলো যথার্থ হয়। এই বিষয়েও স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় সরকার বিভাগে আমাদের যে পলিসি সাপোর্ট ব্রাঞ্চ আছে, সেখানে ন্যাশনাল প্ল্যানিং মনিটরিং এন্ড রিপোর্টিং স্টাডি করতে যাচ্ছি। যেখান থেকে ন্যাশনাল ডাটাবেজ করতে পারব। যার মাধ্যমে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ক্ষেত্রে আমরা যথার্থভাবে বরাদ্দ বণ্টন করতে পারব। যা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়