বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় স্বামীর স্বীকারোক্তি

আগের সংবাদ

বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা : কী করছেন কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন : বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে চাপের মধ্যে পড়া দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত ২০২২ সালের নভেম্বরে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ১৪ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। পরপর দুই মাস কমার পর নভেম্বরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক উর্ধ্বমুখী হয়েছে।
অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস গত আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশে উঠেছিল। তবে পরের মাস সেপ্টেম্বরেই তা ১৪ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে ১৪ দশমিক দশমিক শূন্য সাত শতাংশে উঠে য়ায়। এরপর সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে তা আরো কমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে এই হার খানিকটা বেড়ে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, নভেম্বর মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা, যা আগের মাস অক্টোবর শেষে ছিল ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে (২০২১-২২ অর্থবছর) এই লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ওই অর্থবছর শেষ হয়েছিল। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। এই কঠিন সময়ে ১৪ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি মন্দ নয়। তিনি বলেন, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তাতে এই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে অবদান ছিল। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকূল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছিলেন। ব্যাংকগুলো তাতেও বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের একটি গতি এসেছে। সা¤প্রতিক সময়ে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লাগছে। তাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
জানা গেছে- ২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরো কমতে থাকে। প্রতি মাসেই কমতে কমতে ২০২১ সালের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ।
তথ্য মতে- ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসেবে এরপর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি এক পর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে। ২০২১ সালের নভেম্বরে তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে।
মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরো বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরো কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরো কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।
তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে আসে। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ঋণপ্রবাহ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়