প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

বোকা রাজার ফুটবলপ্রীতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তেতলা রাজপ্রাসাদের বারান্দা হতে রাজা মহাশয় দেখতে পেলেন, দূরের মাঠে ছেলেরা গোলাকার একটি বস্তু নিয়ে ছোটাছুটি করছে আর ক্ষণে ক্ষণে সোরগোল করে উঠছে।
রাজা খুব উৎসুক হয়ে দেখতে লাগলেন। ব্যাপারটা তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। তিনি বলে উঠলেন, ‘আরে! একটিমাত্র গোলাকার বস্তু নিয়ে এতগুলো ছেলে ছোটাছুটি করছে কেন?’
নাজির বলল, ‘মহাশয়! ওরা ফুটবল খেলছে।’
রাজা অবাক হয়ে বললেন, ‘ফুটবল!’
নাজির বলল, ‘আজ্ঞে মহাশয়।’
রাজা বললেন, ‘খেলোয়াড় দেখছি মাঠভর্তি কিন্তু বল মাত্র একটা কেন?’
নাজির মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘ওদের বাপেরা হয়তো বেশি বল কিনে দেয়নি।’
রাজা বললেন, ‘আরে কী বলছ! আমার রাজ্যের ছেলেরা সবাই এভাবে একটি বলের পেছনে ছুটে বেড়াবে? না না না, এ আমি মেনে নিতে পারছি না। তুমি আগামীকাল ওদের রাজপ্রাসাদে ডেকে পাঠাও। আমি ওদের প্রত্যেককে একটি করে বল দেব।’
নাজির কুর্নিশ করে বলল, ‘তথাস্তু মহাশয়।’
পরদিন ছেলেরা রাজ দরবারে এলো।
রাজা বললেন, ‘বাচ্চারা! গতকাল আমি দূর থেকে তোমাদের খেলা দেখেছি। দেখে বড়ই কষ্ট পেয়েছি।’
ছেলেরা রাজার কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারল না। তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
রাজা বললেন, ‘তোমরা একটিমাত্র বল নিয়ে এতগুলো ছেলে খেল, তাই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে বল কেনা হয়েছে। এখন থেকে একটি বলের পেছনে না ছুটে তোমরা নিজ নিজ বল নিয়ে খেলবে, কেমন?’
ছেলেরা এবার রাজার কথা বুঝতে পারল। পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আবারও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
নাজির প্রত্যেকের হাতে একটি করে বল দিল।
রাজা অবাক হয়ে বললেন, ‘সেকি! বল পেয়ে তোমরা খুশি হওনি?’
ছেলেরা সবাই একযোগে বলে উঠল, ‘খুশি হয়েছি মহাশয়! আমরা বহুত খুশি হয়েছি।’
রাজার চোখে-মুখে রোদের মতো আনন্দ চিকচিক করে উঠল। তিনি সিংহাসনে আরাম করে হেলান দিয়ে বললেন, ‘তাই বল! আমি জানতাম, তোমরা বল পেয়ে খুব খুশি হবে। সে যাকগে, আগামীকাল বিকালে আমি তোমাদের খেলা দেখতে আসতে চাই। তোমরা নতুন বল নিয়ে খেলবে। আমি মাঠের পাশে বসে তোমাদের খেলা দেখব।’
ছেলেরা সবাই একযোগে বলে উঠল, ‘আসুন মহাশয়, আসুন!’
রাজা বললেন, ‘তোমাদের মঙ্গল হোক।’
ছেলেরা বলল, ‘জয়! রাজা মহাশয়ের জয়।’
পরদিন রাজার আগমন উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে মানুষজন আসতে লাগল। মাঠের চারপাশে লোকে লোকারণ্য অবস্থার সৃষ্টি হলো। দোকানিরা নানান পসরা নিয়ে বসল যেমন- নিমকি, বড়াভাজা, হাওয়াই মিঠাই, খই, খাস্তা, বাদাম, কটকটি, দধি, মিষ্টি, মণ্ডা-মাঠা ইত্যাদি। এক পাশে বসল নাগরদোলা, বায়োস্কোপ এবং পুতুলনাচের মঞ্চ। এ যেন খেলার মাঠ নয়, রীতিমতো হয়ে উঠল মেলা প্রাঙ্গণ।
একদল উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা, জ্যোতিষী, নীতিশাস্ত্রবিদ ও ক্রীড়াবিদ নিয়ে রাজা এলেন খেলার মাঠে।
ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে রাজাকে বরণ করে নিল ছেলেরা।
রাজা বললেন, ‘যত বল লাগবে তত পাবে। আমার রাজ্যে বল ছাড়া কোনো খেলোয়াড় থাকবে না।’
রাজার কথার সঙ্গে সঙ্গে হাততালির খই ফুটল। খেলা শুরু হলো।
মাঠভর্তি ছেলেরা খেলতে শুরু করল নিজ নিজ বল নিয়ে।
রাজা মুগ্ধ দৃষ্টিতে মাঠের দিকে চেয়ে রইলেন।
উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা, জ্যোতিষী, নীতিশাস্ত্রবিদ ও ক্রীড়াবিদ রাজাকে অনুসরণ করল। তারা কেউ মাঠ থেকে চোখ সরাল না।
দূর থেকে খেলার মাঠটিকে দেখে মনে হলো যেন মস্তবড় একটি চাড়িতে খই ফুটছে। খইগুলো ছিটকে ছিটকে উপরে উঠছে। আবার নিচে নামছে। দৃশ্যটি দেখে রাজার ভারি ভালো লাগল। তিনি বলে উঠলেন, ‘আহা! কী অপরূপ দৃশ্য।’
মুগ্ধ রাজা হাততালি দিতে লাগলেন।
রাজার দেখাদেখি উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা, জ্যোতিষী, নীতিশাস্ত্রবিদ ও ক্রীড়াবিদরা হাততালি দিল। রাজা ও তার সঙ্গী-সাথীরা হাততালি দিলে অন্যরা না দিয়ে পারে? ফলে হাততালিতে মুখর হয়ে উঠল পুরো মাঠ।
কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ খেলা দেখার পর রাজার মনে হলো, ছেলেরা গতকালের মতো সোরগোল করছে না। তারা খেলছে বটে কিন্তু তাদের মধ্যে কোথায় যেন উচ্ছ¡াসের অভাব।
ব্যাপারটা বোঝার পর তিনি ক্রীড়াবিদের কানে কানে বললেন, ‘একটা সমস্যা মনে হচ্ছে।’
ক্রীড়াবিদ বলল, ‘আজ্ঞে মহাশয়, আমারও তাই মনে হচ্ছে।’
রাজা বললেন, ‘তাহলে এক কাজ করো। ছেলেদের কাছে একটি বল রেখে বাকি বলগুলো নিয়ে এসো।’
ক্রীড়াবিদ বলল, ‘তথাস্তু মহাশয়।’
একটি বল রেখে বাকি সব বল নিয়ে আসা হলো।
ছেলেরা আবার খেলতে শুরু করল।
কী অদ্ভুত ব্যাপার, অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রাণ ফিরে এলো খেলায়। পাল্টে গেল মাঠের চেহারা। যেন স্থির হয়ে থাকা একটি পদ্মপুকুর মহা-আনন্দে ছোটাছুটি করতে শুরু করল। দর্শনার্থীদের হাততালিতে যোগ হলো নতুন মাত্রা।
রাজার জন্য এ এক বিস্ময়কর ঘটনা।
সুন্দর ও সাবলীলভাবে খেলা চলতে লাগল।
হঠাৎ এক পক্ষ অন্য পক্ষকে একটি গোল দিল। সঙ্গে সঙ্গে দর্শক-শ্রোতারা হুল্লোড় করে বলে উঠল- ‘গোল।’ দর্শনার্থীদের কেউ কেউ অতি আনন্দে মাঠে ঢুকে দৌড়াতে লাগল।
বিজিত দলের খেলোয়াড়রা লাফিয়ে লাফিয়ে, গায়ের জামাটি খুলে হাওয়ায় উড়িয়ে উড়িয়ে এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, নিজেদের আনন্দ উদযাপন করতে লাগল।
তাই দেখে রাজা উঠে দাঁড়ালেন। নিজের গায়ের জামাটি খুলে উড়িয়ে উড়িয়ে নাচতে শুরু করলেন।
রাজার সঙ্গে সঙ্গে উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা, জ্যোতিষী, নীতিশাস্ত্রবিদ এবং ক্রীড়াবিদ সবাই গায়ের জামা ওড়াতে ওড়াতে নাচতে লাগল।
রাজা সজোরে বলে উঠলেন, ‘গোল!’
সবাই বলল, ‘গোল।’
রাজা হঠাৎ লক্ষ করলেন পরাজিত দলের ছেলেদের খুব মন খারাপ। শুধু তাই নয়, তাদের কেউ কেউ কাঁদছে। দেখে তার মন ভার হয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে জামা পরে নিলেন।
তারপর বললেন, ‘কেউ হাসবে আর কেউ কাঁদবে, তা হবে না। আমার রাজ্যে সবাই হাসবে, আনন্দ করবে।’
মাঠের সবাই একযোগে বলে উঠল, ‘হিপ হিপ হুররে!’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়