ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন ২ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

ভিত্তিহীন গুজবে ব্যাংকিং খাত > ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংক

পরের সংবাদ

ফুটবল জার্সি ও জার্সি নম্বরের ইতিকথা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপ ফুটবলে মেতে উঠেছে পুরো বিশ্ব। তোমরাও নিশ্চয়ই বিল্ডিংয়ের ছাদে বা ঘরের চালে টানিয়েছ প্রিয় দলের পতাকা। কেউবা গায়ে দিচ্ছ প্রিয় দলের জার্সি। আচ্ছা, জানো কি ফুটবলে জার্সি পরার প্রচলন হয়েছে কবে? নম্বরই বা এলো কেমন করে? তাছাড়া জার্সিতে প্রাধান্য দেয়া হয় কোন কোন বিষয়? কি ভাবনায় পড়ে গেলে! চল তবে আজ জেনে নেই ফুটবল জার্সির ইতিকথা।
একটা দলের জার্সি এমনকি মোজা দেখতে কেমন হবে সেটা ঠিক করতেই একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস ব্যয় করে। কারণ একটা নকশায় শুধু সেই দেশের জাতীয় রং ব্যবহার করলেই হয় না, জাতীয় দলের জার্সির ক্ষেত্রে ভাবতে হয় অনেক কিছু।
জার্সিতে কোনো দেশ তাদের পতাকার রং ব্যবহার করে, আবার কোনো কোনো দেশ তাদের জার্সিতে এমন রং চায়, যেটা তাদের ইতিহাস, রাজনীতি এমনকি ভৌগোলিক তাৎপর্য বহন করে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগেও ফুটবল খেলায় জার্সি নম্বর বলে কোনো কিছু ছিল না।
১৯২৮ সালে ফুটবল ইতিহাসে সর্বপ্রথম জার্সি নম্বরের প্রচলন শুরু করে আর্সেনাল ও চেলসি। তখন এ দুই দল ছিল আলাদা ডিভিশনে। আর্সেনাল খেলত ‘টপ ডিভিশনে’ আর তাদের খেলা ছিল ‘শেফিল্ড ওয়েডনেসডের’ সঙ্গে। এ ম্যাচে আর্সেনাল ২-৩ গোলে হেরেছিল। আর সেকেন্ড ডিভিশনে থাকা চেলসি ঘরের মাঠে ‘সোয়ান্সি টাউনকে’ ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে তাদের জার্সি ইতিহাসের প্রথম দিন স্মরণীয় করে রেখেছে।
আবার অনেক দেশের জার্সি রঙের রয়েছে মজার গল্প। যেমন- ব্রাজিলের হলুদ জার্সিতে সুন্দর ফুটবল খেলেছেন অনেক ফুটবল কিংবদন্তি। পেলে-গারিঞ্চা থেকে জিকো-সক্রেটিস হয়ে বর্তমানের নেইমার খেলেন হলুদ জার্সিতে।
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের অধিনায়ক কার্লোস আলবের্তোর কথায় এ জার্সির গুরুত্বটা বোঝা যায় স্পষ্ট করে, ‘ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এ হলুদ জার্সি হলো পবিত্র। যখন আমরা এটি গায়ে দিই, অবশ্যই গর্ব অনুভব করি। তবে একই সঙ্গে তা দায়িত্ববোধও নিয়ে আসে। এটা সবাইকে অনুপ্রাণিত করে এবং রোমাঞ্চে ভাসিয়ে দেয়।’
কিন্তু এ হলুদ জার্সিটা ব্রাজিল জাতীয় দলের জার্সি হলো কীভাবে? এমন সময়ও কি ছিল, যখন অন্য রঙের জার্সি চড়ত তাদের গায়ে? জানি এ প্রশ্নের উত্তর তোমাদের অনেকেরই জানা নেই। কারণ এ হলুদ জার্সির আগের গল্পটা প্রতিটি ব্রাজিলিয়ানের জন্য আক্ষেপের।
১৯৫০ সাল। মারাকানায় দুই লাখ মানুষ সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের। উরুগুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে জয় নয়, ন্যূনতম ড্র করতে পারাই ব্রাজিলকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিতে। কিন্তু আলসিদেস ঘিঘিয়ার সেই গোলে ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্ন ভেঙে যায়, তখন ব্রাজিলের জার্সি ছিল সাদা। সেই সাদা জার্সিতে ছিল না দেশের কোনো ছাপ। ব্রাজিলিয়ানদের ‘মারাকানাজ্জো’ দুঃখে এ জার্সি হলো বলির পাঁঠা, তারা ভেবে নিল এ জার্সিটাই ‘অপয়া’!
১৯৫৩ সাল। পত্রিকায় খবর বেরোলো ডিজাইনারদের কাছ থেকে ব্রাজিলের জার্সির ডিজাইন নেয়া হবে। ডিজাইন নানা রঙের হলে চলবে না। থাকতে হবে দেশের ছাপ। নিজেদের জাতীয় পতাকার মতো। আর ডিজাইনগুলোর মধ্যে সেরা জার্সি পরেই ১৯৫৪ বিশ্বকাপের মাঠে নামবে ব্রাজিল দল। ৪০১টি ডিজাইন জমা পড়েছিল, সেখান থেকে সবার চোখে পড়ে আলদের গার্সিয়া শিলের হলুদ জার্সিটাই। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ জার্সির গৌরব ব্রাজিলের খেলোয়াড় থেকে ভক্ত- সবার কাছেই অন্যরকম।
প্রথমে দুই দলের খেলোয়াড়দের আলাদা করার জন্য নির্ধারিত জার্সি পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। শুরুতে এটি সফল এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত মনে হলেও আলাদা করে কোনো খেলোয়াড়কে চিনতে না পারা বড় একটা সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। দলের সবার জার্সি একরকম হওয়ার কারণে কোনো খেলোয়াড়কে নির্দিষ্ট করে চেনা সম্ভব হচ্ছিল না। শুধু দর্শক নয়, খেলা পরিচালনাকারী রেফারি, কোচ- সবার জন্যই ব্যাপারটা কষ্টের। সেই সমস্যার সমাধানের জন্যই শুরু হয় জার্সিতে নম্বর ব্যবহার করার নিয়ম।
জার্সিতে নম্বর ব্যবহারের প্রচলন ঘটে ১৮৮৭ সালে ১৭ জুলাই কুইন্সল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার রাগবি ম্যাচের মধ্য দিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় জার্সিতে নম্বরের ব্যবহার শুরু হয় ফুটবল-ক্রিকেটসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক খেলায়।
বর্তমান বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে জার্সি নম্বর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জার্সি নম্বর দেখেই বলে দেয়া যায় কোন খেলোয়াড় কোন পজিশনে খেলেন। ফুটবলে ১ নম্বর জার্সি গোলকিপারের জন্য, ২ থেকে ৬ নম্বর জার্সি রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য এবং ৭ থেকে ১১ পর্যন্ত মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা ব্যবহার করেন।
১৯১১ সালে যখন ফুটবল জার্সিতে নম্বর ব্যবহার শুরু করা হয় তখন ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারীরা সিদ্ধান্ত নেন ১ থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত জার্সি পরা খেলোয়াড়ারা ম্যাচের মূল একাদশে থাকবেন এবং বদলি যারা নামবেন তাদের জার্সি নম্বর ১১ এর বেশি হবে। তখন সেরা একাদশ সাজাতে গিয়ে প্রতি ম্যাচেই খেলোয়ারদের জার্সি নম্বর বদলাতে হতো। তবে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে ফিফা এ নিয়মে পরিবর্তন আনে। ১ থেকে ১১ নম্বর জার্সি পরিহিতরা প্রথম একাদশে ম্যাচ শুরু করবেন আর বাকিদের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১২ থেকে ২২ পর্যন্ত। এ নিয়ম অপরিবর্তিত থেকে যায় অনেক দিন। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ড ফুটবল নিয়ন্ত্রকরা ১ থেকে ১১ নম্বর জার্সিতে ম্যাচের মূল একাদশ সাজানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেন। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালের প্রিমিয়ার লিগে এ নিয়মের প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। পরে ইউরোপের অন্য লিগগুলো এ নিয়ম অনুসরণ করা শুরু করে।
ফুটবলে ৭, ৯, ১০, ১১ এগুলো আক্রমণভাগের সেরা খেলোয়ারদের জার্সি নম্বর বলে বিবেচনা করা হয়। ইতিহাসে তাই ম্যারাডোনার জার্সি নম্বর ছিল ১০, পাওলো মালদিনির ৬ এবং পেলের ১০। তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ইংলিশ খেলোয়াড় জেভিড বেকহাম ২৩ নম্বর জার্সিটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। আবার বিভিন্ন ক্লাবে জার্সি নম্বরের গুরুত্বও আলাদা।
– আহমেদ শাকিল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়