সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

বিড়ালের মাছ কাণ্ড

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– হায় হায় হায়! সর্বনাশ! সব মাছ খেয়ে ফেলল! যাহ্ যাহ্! শয়তান বিড়াল! ও মনি… মনি… এদিকে আয়। ও মনি…
ভেতরের ঘর থেকে দৌড়ে আসে মনি। এসে দেখে খাবার টেবিলের নিচে বড় বিড়াল কোকো ডানে বামে মাথা ঘুরিয়ে নিশ্চিন্ত মনে মাছের কাঁটা চিবোচ্ছে। দিদনের উচ্চস্বরের চিৎকার শুনে ছোট বিড়াল সুকোকে ঘাড়ে করে চলে এলো শিবম। পড়ার ঘর থেকে অনলাইন ক্লাসে থাকা দিদিও রান্না ঘরের সামনে উপস্থিত। বাবা বই পড়ছেন তার ঘরে। বেরিয়ে এলেন তিনিও। বৈঠকখানার সোফায় বসে জানতে চাইলেন ঘটনার বৃত্তান্ত।
দিদন রান্না শেষ করে ¯œান সেরে দুপুরে তার ঘরে গিয়েছেন। এ সময় প্রতিদিন তিনি ঘরে বসে টিভির প্রিয় একটি ধারাবাহিক নাটক দেখেন। খোলা রান্নাঘরে চুলোর পাশে ছিল তিন পদের মাছ! লইট্টা মাছ ভাজা, ইলিশ মাছ ভুনা এবং টাটকানি মাছের ঝোল। সবাই ছিল যার যার ঘরে। এ সুযোগে প্রায় ২০ মিনিটে কোকো সব মাছ সাবাড় করে ফেলেছে!
আজ সকালে বাবা মাছগুলো কিনে এনেছেন। মাছের সঙ্গে মিলানো নানা পদের তরকারি। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান বাবা। অতিমারির মধ্যে দুর্মূল্যের বাজার! হাতে অর্থের টানাটানি! করোনায় মধ্যে পরিবারে যুক্ত হওয়া দুই বিড়ালের খাদ্য ও অন্যান্য জিনিস জোগাড় করতে গিয়ে তার হিমশিম অবস্থা। কী কাণ্ডরে বাবা! এক সপ্তাহের মাছ একা কোকোই শেষ করে ফেলল! দিদন লাঠি খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু পেলেন না। বাবার কাছে এসে বসেন তিনি।
– কালকেই আবার মাছ কিনতে হবে! এখনো সময় আছে, তাড়াতাড়ি দুটোকে বিদায় করো।
শিবম কোকোকে তুলে নিয়ে বাবার কোলে দেয়।
– এটা কি হলো কোকো? এগারোশ টাকার মাছ এক মুহূর্তেই হজম করে ফেললি?
বাবার প্রশ্নের জবাবে ফ্যাল ফ্যাল করে চায় সে। আর হাত চাটে।
জৈয়িতা দিদি শিক্ষক বাবাকে সান্ত¡না দেয়। সঙ্গে শিবমও যোগ দেয়।
– থাক বাবা, আমরা এক সপ্তাহ নিরামিষ খাবো। মায়ের মন্তব্য, খাবারগুলো চুলোর পাশে না রেখে আলমারিতে ঢুকানো হলে এমন কাণ্ড তো ঘটত না! এমন তো নয় যে, কোকো মাছকাণ্ড আগে ঘটায়নি।
তবে কোকোর আজকের মাছকাণ্ডটি রীতিমতো এলাহী। একসঙ্গে এত মাছ আগে খায়নি সে। সাত মাস আগে কোকোকে এনেছে শিবমের বোন জৈয়িতা। একাদশ শ্রেণিতে পড়ে ও। কাছেই বান্ধবী সিমরেনদের বাসা। লকডাউনে মাঝে মাঝে ওর বড় বোন জৈয়িতা দিদিকে গণিত ও রসায়ন পড়ান। পড়া শেষ করে সেখান থেকে ফিরছিল সে। সিদ্ধেশ্বরী এলাকা। পথের মধ্যে বান্ধবী রাত্রির ফোন।
– তুইতো জানিস আমাদের পাঁচটা পুসি। চারটা মাদী আমরা পালব। তোর জন্য পুরুষ বিড়ালটা! এটা তোর জন্মদিনের গিফট। রাত্রি বাসার নিচে এসে জৈয়িতার কাছে পুরুষ বিড়ালটাকে দিয়ে যায়। বিড়াল পেয়ে শিবম তো বেজায় খুশি! সঙ্গে মাও! তবে জলাতঙ্ক রোগের ভয় থাকায় কিছুটা রেগে যান বাবা।

তারপরও মা, দিদি ও শিবম বিড়াল নিয়ে মেতে থাকে। দিদি বিড়ালের নাম রাখে কোকো। দেড় মাস পর সিমরেনদের বাসা থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় দিদি দেখে একটি সদ্যোজাত রোগা বিড়াল রাস্তায় ভাঙা গলায় ডাকছে। বেশ মায়া হলো জৈয়িতার। কর্দমাক্ত বাচ্চা বিড়ালটিকে বুকে তুলে নিল সে। হেঁটে হেঁটে ছয় তলায় উঠে ক্লান্ত জৈয়িতা। ভয়ে ভয়ে বাসার দরজায় বেল বাজায়। মা দরজা খুলে বিড়ালটি দেখে চুপসে যান। বাবা বলেন, এটা বিড়ালের বাড়ি নাকি? শিগগির বিড়ালটাকে রেখে আয়। দেখিস এটা বাঁচবে না!
বিড়াল ছানাটির পেটের অনেকটা জায়গাজুড়ে ঘা। তেমন নড়াচড়া করছিল না। মা ডেটল এবং ইংলিশ শ্যাম্পো আনেন স্নান ঘর থেকে। এরপর চিরুনি দিয়ে ছানাটার পুরো শরীর পরিষ্কার করে দেন। বাটিতে করে গাভীর দুধ খাওয়ান। শিকারি কোকো ছানাটাকে সামনে নিলেই ফোস ফোস করতে থাকে। শিবমের নাম রাখে সুকো। কোকোর ভয়ে আলাদা করে রাখে ওকে।
তিনদিন পর ছানাটি একটু একটু হাঁটতে শুরু করে। চার বেলা দুধ ও নরম ভাত খেয়ে ওর পেটটা অস্বাভাবিক বাড়তে থাকে। বাবারও মায়া পড়ে যায় সুকোর জন্য। লকডাউনে বিড়ালদের নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে সবাই। বাবা ফুলবাড়িয়া পশু হাসপাতাল থেকে কোকো ও সুকোকে ভ্যাকসিন দিয়ে আনেন। কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ান। সাত আটদিন সহ্য করতে পারত না কোকো সুকোকে। ছোট পেয়ে সুকোর ঘাড় কামড়ায়। আর সুকো শব্দ করে ওঠে ওয়াও…ওয়াও!
এখন সুকোই কোকোকে কামড়ায়। তাড়া করে বেড়ায়। ভয় পেয়ে অন্ধকারে কোটরে লুকায় কোকো! দুজনের সঙ্গে এখন বেশ ভাব। একজন আরেকজনকে জিহ্বা দিয়ে চেটে আদর করে। গলাগলি করে ঘুমোয়। সুকোকে কেউ আটকিয়ে রাখলে বা আঘাত করলে দৌড়ে আসে কোকো। তাকে রক্ষা করে। কোকো ও সুকোর সঙ্গে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় শিবম। বিদ্যালয় বন্ধ। শিবমের পড়াশুনায় ভাটা পড়ে। এ জন্য বাবার দুশ্চিন্তা বাড়ে। মাকে বলেন, ‘তোমার ছেলে পরীক্ষা দিয়ে আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠতে পারবে তো?’
আজকের কোকোর মাছ কাণ্ডের বিষয়টা বাবাকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বাবা তার ঘরে বসে সন্ধ্যায় ল্যাপটপে কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের ওপর একটি গবেষণাপত্র তৈরি করছিলেন। ল্যাপটপ খুললেই সুকো কাছে এসে বসবে। সুকোর প্রিয় জায়গা ল্যাপটপের এই কি বোর্ড। গবেষণা পত্রের সাড়ে সাতশ শব্দের ওপরে ইংরেজি কম্পোজ করেছেন তিনি। সুকোকে একটা খেলনা প্লাস্টিক ডিম দিয়ে ওয়াশ রুমে গেলেন। এই ফাঁকে সুকো কি বোর্ডে আরাম করে বসেছে। যে ভয়ে ছিলেন বাবা, সেটাই হলো! ওয়াশ রুমে শিবমের টোকাতে বাবা মনে করলেন, আবার বিপদ বুঝি!
শিবম জানায়, সুকো নাকি এতক্ষণ ল্যাপটপে টাইপ করছে!
বাবা মনিটর দেখে মাথায় দুই হাত রেখে বসে পড়েন।
ল্যাপটপে শুধু একটি ইংরেজি অক্ষর মনিটর জুড়ে! অনেক এস এস এস এস…
বাবার আওয়াজ পেয়ে মা ছুটে এলেন শিবমকে নিয়ে।
– কি হয়েছে গো?
হতভম্ব বাবা! শান্ত স্বরে উত্তর দিলেন- সুকো তার নামের আদ্যক্ষরটি ল্যাপটপে অনুশীলন করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়