স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালিত : এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে

পরের সংবাদ

বুদ্ধির জয়

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ংরাজা প্রতাপ সিংহের সবকিছুই আছে। রাজ্য, ধন-রতœ, সৈন্য-সামন্ত, ঘোড়াশাল-হাতিশাল সবকিছু। শুধু একটা জিনিস নেই। তা হলো বুদ্ধি। তার মাথায় বুদ্ধির ছিটেফোঁটাও নেই। তিনি মশা মারতে ব্যবহার করেন কামান আর মানুষকে ধমক দিয়েই মেরে ফেলতে চান।
বুদ্ধি বড় না ধন বড়- এ নিয়ে তিনি তার সভা কক্ষে একদিন এক সভার আয়োজন করলেন। একজন বাদে সবাই ধনের জয়-জয়াকার করলেন। কারণ সবাই জানত রাজা ধনের পক্ষে। তারাও ধনের পক্ষে না গেলে নির্ঘাত রাজার ধমক খেয়েই মরতে হবে। কিন্তু রাজার বুদ্ধিদাতা মন্ত্রীর কাছে মতামত জানতে চাইলে তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, মহারাজ বুদ্ধিই বড়, ধন নয়।
এ কথা শুনেই রাজা ভীষণ চটে গেলেন, ধমকের পর ধমক দিয়ে তিনি তাকে মন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন। অগত্যা মনের দুঃখে পরিবারসহ পাশের রাজ্যে গিয়ে বাস করতে লাগলেন মন্ত্রী।
কিছুদিন পর রাজার হঠাৎ শিকারে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। সঙ্গে সঙ্গে তার শিকারি দল হাজির। সিদ্ধান্ত হলো তারা এবার অনেক দূরের গহিন অরণ্যে শিকারে যাবেন এবং দীর্ঘদিন শিকার করবেন। শুধু শিকার করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, রাজকর্ম থেকে কিছুদিন দূরে থাকাই তার উদ্দেশ্য।
প্রতিবার রাজা শিকারে গেলে সঙ্গে তার উপদেষ্টা, বন্ধুসম মন্ত্রী যেতেন। কিন্তু এবার তিনি নেই, তাই রাজা সঙ্গে কী কী নেবেন সেটা বলে দেয়ারও কেউ নেই। রাজা তীর-ধনুকের সঙ্গে ব্যাগ ভরে স্বর্ণমুদ্রা নিলেন। কারণ তার কাছে ধনই সব। সঙ্গের সৈন্য-সামন্ত কেউই কিছু বলল না, পাছে তাদের রাজ্য ছাড়া হতে হয়।
রাজা শিকারে গেলেন কোনোরকম খাবার ছাড়া। প্রবল উৎসাহে তিনি ঢুকে গেলেন গভীর অরণ্যে। সেখানে একদল ডাকাত এসে তাদের সব ধন-রতœ লুট করে নিয়ে গেল। রাজার সঙ্গে সৈন্য এসেছে মোটে কয়েকজন। তাকিয়ে তাকিয়ে ডাকাতদের লুটপাট দেখা ছাড়া তারা আর কিছুই করতে পারল না।
এদিকে রাত গভীর হতেই রাজা ক্ষুধা অনুভব করলেন। কিন্তু সঙ্গে খাবার নেই। সৈন্যদের ধমক দিয়ে বললেন, যেখান থেকে পার খাবার এনে দাও। সৈন্যরা ধমক খেয়ে এদিক ওদিক ছুটতে লাগল। রাতের আঁধারে কে কোথায় ছুটল কেউ জানে না। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও কেউ আর ফিরে এলো না।
রাজা পড়ে রইলেন একা। ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি হাঁটতে লাগলেন। হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। কী করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। হঠাৎ কিছু দূরে প্রদীপের আলো দেখতে পেয়ে অনেক কষ্টে পৌঁছালেন সেখানে। ধাক্কা দিতেই একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খুললেন।
– মা, একটু খাবার হবে?
মহিলা রাজাকে ঘরে বসালেন। তারপর বললেন- এত রাতে খাবার? আমার ঘরে তো তেমন কিছু নেই। তবে হাঁড়িতে কিছু পান্তা ভাত আছে। খাও তো দিতে পারি।
– কেন খাব না। অবশ্যই খাব।
রাজা অমৃতের মতো পান্তা ভাত খেলেন। আর সেই মুহূর্তে একটি মহাসত্য আবিষ্কার করলেন- পান্তা ভাত হলো পৃথিবীর অতি সুস্বাদু খাবার। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যদি তিনি স্বর্গে যেতে পারেন তবে অবশ্যই সেখানে পান্তা ভাত খেতে চাইবেন।
ভোর হতে না হতেই সৈন্যরা রাজাকে খুঁজে বের করলেন এবং শিকার অসমাপ্ত রেখেই ফিরে এলেন রাজ্যে।
রাজপ্রাসাদে ফিরে আসতেই রাজার সামনে হাজির হলো পোলাও, কোর্মা, রেজালা, কোপ্তা, কাবাব। কিন্তু রাজা কোনো কিছুতেই কোনো স্বাদ খুঁজে পেলেন না। অষ্ট প্রহর তার জিভে লেগে রইল সেই পান্তা ভাতের স্বাদ।
রাজা প্রতাপ সিংহ রাজ বাবুর্চিকে পান্তা ভাত রান্না করতে বললেন। বাবুর্চি গরম গরম ভাত রেধে পানি দিয়ে হাজির করলেন রাজার সামনে। কিন্তু রাজা তা মুখে তুলেই থু থু করে ফেলে দিলেন।
এটা কোনো পান্তা ভাত হলো?
রাজা ধমক দিয়েই বাবুর্চিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলেন।
তারপর রাজ্যের অনেকেই সুদৃশ্য পাত্রে রাজার জন্য পান্তা ভাত পাঠালেন উপঢৌকন হিসেবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। সেই রাতের পান্তার স্বাদ আর পাওয়া গেল না। এমনকি গহিন বনের সেই পান্তাওয়ালিও সে রাতের পান্তার মতো আর পান্তা খাওয়াতে পারল না। রাজা ভীষণ ভাবনায় পড়লেন। তিনি রাজ দরবারে চিন্তিত মনে বসেছিলেন।
– রাজা মশাই আমি আপনাকে সেই পান্তা ভাত খাওয়াতে পারব।
– ও মন্ত্রী তুমি। তুমি আবার এসেছ?
– জি রাজা মশাই। আপনার এ দুঃসময়ে আমি বসে থাকতে পারি?
রাজা মনে মনে খুশি হলেন।
– ঠিক আছে খাওয়াও তোমার পান্তা ভাত।
– কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
– কী শর্ত?
– আপনাকে আমার সঙ্গে শিকারে যেতে হবে।
– অবশ্যই। ওই স্বর্গীয় পান্তা ভাতের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করতে পারি।
রাজা আর মন্ত্রী বের হলেন শিকারে। রাত গভীর হলো। রাজার খুব ক্ষুধা পেল।
– মন্ত্রী কী খাবার এনেছ বের কর।
– রাজা মশাই, কোনো খাবার আনিনি।
– মানে কী?
– মানে কিছু না। অনেক মণি মুক্তা এনেছি। পথে খাবার পেলেই কিনে খাব।
– পথ কই? এটা তো বন। বুঝেছি তোমাকে আবার ধমক দিয়ে রাজ্য ছাড়া করতে হবে।
রাত পার হয়ে গেল। রাজা ক্ষুধার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে একটা গাছের নিচে শুয়ে পড়লেন। মন্ত্রী তখন তার গোপন ঝোলা থেকে পান্তা ভাত বের করে রাজাকে দিলেন।
রাজা পরম তৃপ্তি সহকারে সেই পান্তা ভাত গো-গ্রাসে খেতে লাগলেন। তিনি পেলেন সেই স্বর্গীয় পান্তার স্বাদ। এই তো সেই পান্তা! রাজা চিৎকার করে উঠলেন- হ্যাঁ এটা সেই পান্তা। তুমি কী করে রাঁধলে এমন পান্তা?
মন্ত্রী হেসে বললেন- সব পান্তাই পান্তা। আপনার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে তাই এই পান্তাকে স্বর্গীয় মনে হচ্ছে। রাজপ্রাসাদে ভরাপেটে পান্তা ভাত খেয়েছেন তাই তা ভালো লাগেনি। এজন্যই তো কবি বলেছেন-
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’
– তুমি কবিতাও জান?
– হ্যাঁ জানি তো, বুদ্ধিমানরা সব জানে।
রাজা বুঝতে পারেন আসলেই বুদ্ধিই বড়। বুদ্ধি দিয়ে সব জয় করা যায়।
তিনি মন্ত্রীকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেন। মনে মনে বলেন- এই বুদ্ধিমান মানুষটিকে তার রাজ্যে খুব দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়