সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়নে এবার গুরুত্ব দিন

পরের সংবাদ

নতুন জামা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– দ্যাখ দিদি, আমার জামাটা কী সুন্দর, তাই না?
– বাহ্! সত্যিই তো। টুকটুকে লাল জামাতে সাদা লেইস আর সোনালি বোতাম লাগানোয় জামাটা পরে তোকে একদম রূপকথার রাজকন্যার মতো লাগছে।
রতœার কথা শুনে হীরা একদম রূপকথার রাজকন্যাদের মতো জামা ফুলিয়ে লাটিমের মতো ঘুরতে থাকল।
– কই দেখি, তোর জামাটা কেমন হয়েছে?
রতœাকে জিজ্ঞেস করতেই সে নিজের লেহেঙ্গাটা গায়ের ওপর ধরল। হীরা বলল, আরে গোলাপি লেহেঙ্গা আর সোনালি জরিবুটির কাজ করা রেশমি ওড়নাতে তোকে একদম পরীর মতো লাগবে।
রতœা বলল, সত্যি, আমি কোনোদিন পুজোয় এমন সুন্দর জামা পরিনি। বাবা দোকান থেকে যে জামা কিনে আনত পূজার দিনে ওরকম জামা আরো পাঁচজন পরে আসত। আমার একদম ভালো লাগে না একরকম জামা পরতে।
– ভাগ্যিস মা সমুকাকুদের নিচতলার ঘরটাতে থাকতে দিয়েছে। সমুকাকু কত সুন্দর জামা বানায়।
– হ্যাঁ আমার তো নীলাদিদির জামাটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর লেগেছে। নীলরঙের কামিজের ওপর ছোট ছোট আয়না বসানো জামাটা পরলে দিদিকে আর কোনো গয়নাই পরতে হবে না।
– সমুকাকুর মেয়ে মলির কি মজা! সে নিশ্চয়ই সবসময়ই এমন সুন্দর সুন্দর জামা পরে। তাই না রে দিদি?
– আমারও তাই মনে হয়।

২.
– বাবা, তুমি না বলেছিলে আমাকে এবার শহরের পূজা দেখাবে? আমি তো আগে কোনো দিন শহরের পূজা দেখিনি। তুমি দোতলার দিদিদের কত সুন্দর সুন্দর জামা বানিয়ে দিলে। আমাকে কখন বানিয়ে দেবে? কালই তো পূজা শুরু হচ্ছে।
– মলি মা, তোর মায়ের যে অসুখ করেছে। তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। গ্রামের ডাক্তাররা বলেছে, তোর মায়ের চিকিৎসা নাকি গ্রামে হবে না। তাই তো শহরে নিয়ে এলাম। দোতলার বৌদিমনি দয়া করে আমাদের এই ঘরটায় থাকতে না দিলে আমরা কই যেতাম বল? আমার কাছে কি ঘরভাড়া দেয়ার মতো অত টাকা আছে? তোর মায়ের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হবে। তাই তো আমি তার মেয়েদের জন্য জামা বানিয়ে দিলাম। আমি তো শুধু এই কাজটাই পারি। তোর মাকে আমি কারো কাছে ঋণী রাখতে চাই না রে মা।
– থাক বাবা, আমার নতুন জামা লাাগবে না। গতবারের জামাটা তো নতুনই আছে। পূজার সময় ছাড়াতো আর পরাই হয়নি। তাছাড়া এখানে তো কেউ জামাটা দেখেনি। আমি ওটাই পরব।
পাশের বিছানায় শুয়ে বাবা-মেয়ের কথা শুনে কান্না চেপে রাখতে গিয়ে সুরভীর কাশি উঠে গেল। কাশতে কাশতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। পাশে রাখা ইনহেলারটা টানার পর ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। মাস খানেক ধরে সুরভীর শরীরটা বেশ খারাপ। ঠাণ্ডাটা কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। কাশতে কাশতে বুকে ব্যথা শুরু হয়। একদিন রাতে এমন শ্বাসকষ্ট শুরু হলো যে তাকে দেখে মলি আর মলির বাবা ভয় পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির কাছের একটা হাসপাতালে নিয়ে গেল তারা। তাড়াতাড়ি অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করা গিয়েছিল বলে সেবার সুরভীকে বাঁচানো গিয়েছিল। পরে বুকের এক্স-রে করে খারাপ কিছু সন্দেহ করায় ওখানকার ডাক্তাররা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানোর পরামর্শ দেয়। সেকারণেই এখানে আসা।
বৌদিমডুর স্বামী উকিলদাদা সমুদের গাঁয়ের ছেলে। রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়। শহরে সমুর চেনা পরিচিত আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। উকিলদাদাও বাড়িতে নেই। বৌদিমডুর কাছে সমু খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন বলেই সুরভীকে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হচ্ছে। সমু সুরভীকে জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন লাগছে? সুরভী মাথা নেড়ে জানাল সে ঠিক আছে। মলি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কেঁদো না মা। আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করব ঠাকুর যেন তোমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেয়। দেখবে তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।
দুর্গাপূজা শুরু হয়ে গেছে। দোতলার দিদিরা রোজ নতুন নতুন জামা পরে পূজা দেখতে যায়। মলি গতবারের পূজার জামাটাই পরে। মলির বাবা তার মাকে নিয়ে প্রতিদিন ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার অনেকরকম পরীক্ষা করতে দিয়েছে। সেগুলো করিয়ে রিপোর্ট দেখাতে হবে। সব রিপোর্ট হাতে পেলে সেগুলো দেখে ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করবেন। মলি একা একা বাড়ির পূজাতেই সারাদিন কাটায়। সে প্রতিদিন জোড়হাতে প্রণাম করে দুর্গা ঠাকুরকে বলে তার মাকে সুস্থ করে দিতে। মলির কেবলই মনে হয়, শহরের পূজার চেয়ে তাদের গ্রামের পূজাই বেশি আনন্দের। মলির মা পূজার সময় কতকিছু রান্না করে। লুচি, তরকারি, নাড়–, মোয়া আরো কত কী…। কত জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। কত রকম খেলনা কিনে দেয়। গতবার পূজায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বিছানা, আলমারি, সোফাসেট কিনে দিয়েছিল। বাড়ি ফিরে তার সঙ্গে রান্নাবাটি খেলেছিল। মা বলত, ছোটবেলায় এটা মার খুব প্রিয় খেলা ছিল। মা নাকি মাটি দিয়ে পুতুল বানাতে পারে। মলি বায়না করতেই বলেছিল পরে বানিয়ে দেবে। সত্যিই পরে বানিয়ে দিবে তো? দোতলার জেঠিমা অবশ্য অনেক করছে তাদের জন্য। এতবড় পূজার দায়িত্ব সামলেও মলির খোঁজখবর নিচ্ছে। জেঠিমাও খুব ভালো রাঁধে। রোজ খিচুড়ি, তরকারি আর মিষ্টি দিয়ে যায়। তবুও মা-বাবাকে ছাড়া পূজাটা মলির একদমই ভালো লাগছে না। এভাবেই সপ্তমী যায়, অষ্টমী যায়, নবমীও পেরিয়ে যায়। মলিও প্রতিদিনই মা দুর্গার কাছে একই প্রার্থনাই করে, তার মাকে সুস্থ করে দিতে।

৩.
আজ বিজয়া দশমী। সকালে দোতলার জেঠিমা মলিকে একটা নতুন জামা দিয়ে গেছে। আর বলে গেছে, সে যেন আজ নতুন জামা পরে দিদিদের সঙ্গে পূজা দেখতে বের হয়। কিন্তু মলি নতুন জামাটা পরল না। মায়ের জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু পরেই সে বাবা-মাকে একসঙ্গে আসতে দেখল। এইসময়ে বাবা-মাকে আসতে দেখে সে খুব অবাক হলো। তার বুক দুরুদুরু করতে লাগল। সে লক্ষ্য করল বাবা জেঠিমার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। মলি এক ছুটে মায়ের কাছে চলে যায়। মাকে আজ কত সতেজ লাগছে। মলি শুনল তা বাবা জেঠিমাকে বলছে, মায়ের অসুখটা গুরুতর নয়। গ্রামের ডাক্তাররা যেরকম খারাপ আশঙ্কা করেছিল তেমন কিছুই হয়নি মায়ের। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে দিয়েছে। বেশ অনেকদিন খেতে হবে। আর নিয়ম মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
– বাবা, মা দুর্গা আমার কথা শুনেছে। তাই না? মাকে তো এখনই অনেক সুস্থ লাগছে।
– হ্যাঁ মলি মা, মা দুর্গা তোর প্রার্থনা শুনেছেন। প্রতিটা মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। আজ আমি সেই ঈশ্বরকেই দেখেছি। যে ডাক্তার তোর মাকে দেখেছেন তিনি যেন স্বয়ং ঈশ্বরেরই রূপ। তারা মানুষকে নতুন জীবনদান করেন। নতুন করে বাঁচতে শেখান। তোর মা তো ভয়েই আধমরা হয়ে ছিল। আজ ডাক্তারের কথা শুনে অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে। তার চেহারা থেকে কালো ছায়া সরে গেছে। মনের ওপর চেপে বসা ভারি পাথর সরে গেছে। আজ আমরা সবাই মিলে পূজা দেখতে যাব। শহরের পূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আলোকসজ্জা। আজ তো বিসর্জনের দিন, এবার আর তোকে আলোকসজ্জা দেখাতে পারলাম না। সামনের বছর তোকে আবার আলোকসজ্জা দেখাতে নিয়ে আসব, কেমন?
– ঠিক আছে বাবা।
– এবার তুই চট করে জেঠিমার দেয়া জামাটা পরে এসে জেঠিমাকে একটা প্রণাম কর।
মলি সঙ্গে সঙ্গে ঘরে চলে গেল নতুন জামা পরতে।
নীলা, রতœা, হীরাও সমুকাকুর বানানো জামা পরে এসে কাকু কাকিমাকে প্রণাম করল। সমু-সুরভীও বৌদিমনিকে প্রণাম করল। বলল, ‘শুভ বিজয়া’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়