বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

কাতারকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি দেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

আত্মা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ খুব শীত পড়েছে। ঠাণ্ডায় হাত-পা বরফ হওয়ার জোগাড়। বাড়ি থেকে সোয়েটার মাফলার ব্যাগে ভরে দিয়েছে মা। সেসব উপেক্ষা করে কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকার অন্যরকম সুখ। আমর প্রাইভেট হোস্টেলে থেকে ডিগ্রি করছে। তার বাবা তাকে হোস্টেলে রেখেছে কারণ হোস্টেলটি কলেজের খুবই কাছে। এই হোস্টেলের সবাই আমরের বন্ধু। তবে সবচেয়ে ভালো বন্ধু অমি। অমি মুন্সিগঞ্জ থেকে পড়তে এসেছে। দুজনে একসঙ্গে একই রুমে থাকে। অল্প দিন পরেই অমি বাড়ি যাবে। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুবই পীড়াপীড়ি আরম্ভ করেছে। সেদিন অমির বাড়ি থেকে ফোন আসে। তার বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তার মা বলল, তাকে বাসায় আসতে হবে। অমি খুব খুশি। বড় বোনের বিয়েতে বন্ধুদের মুন্সিগঞ্জ আমন্ত্রণ জানাল। কিন্তু আমর যাবে না। প্রথমত বাবার অনুমতি নেই। এছাড়া এই শীতে হোস্টেল রুমে কম্বল জড়িয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকা ছাড়া তার কোথাও যাওয়ার আগ্রহ অথবা কৌতূহল কোনোটিই নেই।
কয়েকদিন পর বোনের বিয়ের কথা প্রিন্সিপালকে বলার পর অমি দশদিনের জন্য মুন্সিগঞ্জ চলে গেল। এরই মধ্যে অমির বড় বোন সিমা আমরকে ফোন দিয়েছে। উপস্থিত না হওয়ার জন্য আমর বার বার ক্ষমা চাইল। সিমা মনে করেছিল, আর কেউ যাক না যাক অমির রুমমেট আমর অবশ্যই যাবে। আমরও তাকে বিয়েতে যাওয়ার কথা দিয়েছিল। কিন্তু যেতে পারায় এখন খুব মন খারাপ হয়ে গেল। এই কারণে অমি তার উপর রাগও করল।
আমর ঠিক করল, অমি হোস্টেলে এলে তার মান-অভিমান ভেঙে দেয়ার একটা ব্যবস্থা করবে। অমি দশ-পনেরো দিনের মধ্যে হোস্টেলে ফিরবে। কিন্তু সে হোস্টেলে না আসায় আমর তাকে ফোন করলেও ফোন ধরেনি। আমর ভাবল তার উপর রাগ করেছে। তার নম্বরটি কালো তালিকায় রেখেছে।
প্রায় বিশ দিন হয়ে গেল। রাতে হোস্টেলের বারান্দায় হাঁটছে আমর। সে প্রায়ই হোস্টেলে দেরি করে ঘুমায়। অধিকন্তু একা থাকায় ঘুমাতে পারছে না। বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ খেয়াল করল বারান্দার শেষ প্রান্তে খুঁটির কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আমর একটু দূরে দাঁড়িয়ে। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না, তবে তার মনে হলো একজন মানুষ। মানুষটি অমির মতো। কিন্তু সে আমরের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? মুখও দেখা যাচ্ছে না। অমি হোস্টেলে ফিরে এসেছে? সে কারোর সঙ্গেই দেখা না করে এখানে লুকোচুরি করছে!
আমর নাম ধরে জোরে ডাকল। কিন্তু অমি তার ডাকে উত্তর দিল না। আবার ডাকল। কয়েকবার ডাকল কিন্তু কোনো উত্তর নেই। হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই। আমর অবাক হলো এইমাত্র অমি এখানে ছিল!
আমর ভাবল অমি নাটক আরম্ভ করেছে তাকে বিরক্ত অথবা ভয় দেখানোর জন্য। আমর রুমে ফিরে এলো। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল। এর পর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। পানি খেতে যখন উঠল তখন প্রায় রাত দুইটা বাজে। অমি বিছানায় শুয়ে আছে। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তাকে না ডেকে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ল আমর। সকালে ওর সঙ্গে কথা বলা যাবে।
পরদিন সকালে অমির পরিবার এলো। দরজায় টোকা দিতেই আমরের ঘুম ভেঙে যায়। সে দেখল অমির বাড়ির লোকজন তার সামনে দাঁড়ানো। আমর বলল, অমি ঘরে নেই। কোথাও গেছে। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, চলে আসবে।
তারা বিস্ময়ে আমরের দিকে তাকাল। আমরের কথাগুলো শুনল। অমির মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, অমি হোস্টেলে আসবে কী করে? বিয়ের দুদিন পর অমির একটা দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাতেই ওর মৃত্যু হয়। আমরা হোস্টেলে ওর জিনিসপত্র নিতে এসেছি।
কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল আমরের। কাল রাতে কাকে দেখেছে? অমির ভূত?
হোস্টেলটা অমির খুব পছন্দ হয়েছিল। সেজন্য মৃত্যুর পরও সে হোস্টেল ছাড়েনি। কিন্তু ঘটনার পর আমর হোস্টেল ছেড়ে চলে গেল।

রেবা হাবিব
ধানমন্ডি, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়