ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি : রিমান্ড শেষে বিকাশ পরিবহনের চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

বহুমাত্রিক হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

পরের সংবাদ

প্রথম স্পর্শ

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুদ্র রিকশার হুড তুলে দিয়ে নীলিমার কাঁধে হাত রাখে। দুজন পাশাপাশি বসে এতক্ষণ চলছিল। হঠাৎ নিজের কাঁধে রুদ্রের হাত দেখে চমকে ওঠে নীলিমা। বুকের ভেতরটা কাঁপতে থাকে। সে বুঝতে পারে না, রুদ্রকে সে কী বলবে? বলবে কি- হাতটা নামাও, রুদ্র? কিন্তু রুদ্র যদি মন খারাপ করে বসে? যদি বলে, ‘এক রিকশায় চড়ে যাচ্ছি, একটু কাঁধে হাত তো রাখতেই পারি।’ তখন তো নীলিমার কিছু বলার থাকবে না। সে এখন যেমন ইতস্ততবোধ করছে, তখন লজ্জায় পড়ে যাবে নিশ্চয়ই।
বাইরে প্রচণ্ড রোদ। শ্রাবণ মাসে যেখানে আকাশভর্তি মেঘ থাকার কথা, ঘন ঘন বৃষ্টি নামার কথা, সেখানে জ্বলজ্বলে রোদ যেন শরীরকে ঝলসে দিচ্ছে। দশ মিনিটের জন্য রোদে বের হলেও চেহারাটা ভোটার আইডি কার্ডের ছবির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সে হিসেবে রুদ্র রিকশার হুড তুলে দিয়েছে, তা নীলিমা সন্তপর্ণে মেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন অবধি তার কাঁধে রুদ্রের হাত আরো দমবন্ধকর পরিস্থিতির মুখোমুুখি করছে তাকে। সে একটু নড়চড় করে বসে। এতে যদি রুদ্রের হাতটা সরে যায়। অনিচ্ছাকৃতভাবে দিয়ে রাখলে সরে যাবে হয়তো। কিন্তু রুদ্র তো অনিচ্ছাকৃতভাবে হাত রাখেনি। মুখে কথা নেই। আলতো করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডান হাতটা নীলিমার কাঁধে দিয়ে রিকশায় ছুটে চলছে। নীলিমা একবার রুদ্রের হাতটা কাঁধ থেকে ধরে নামিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু সাহসে কুলালো না। ক্লাসমেটই তো নাকি? এটা ভেবে সে কিছুই করতে পারছে না।
রুদ্র ও নীলিমা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে সপ্তাহখানেক হলো। ক্লাসে এ কদিন দুজনের কোনো কথা হয়নি, একে-অপরকে শুধু ক্লাসে দেখেছে। তবে মুখ চাওয়া-চাওয়াই হয়েছে। আজ দুপুরে ক্লাস শেষ করে বের হতেই ভার্সিটির গেটে দুজনের দেখা হয়। দুজনেই রিকশার জন্য দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই খাঁ খাঁ দুপুরে রিকশা নেই তেমন। হঠাৎ একটা রিকশা আসতেই রুদ্র ডেকে উঠে পড়ে। পাশে নীলিমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘উঠবে না কি, নীলিমা?’
এই প্রথম তাদের কথা হয়। পরিস্থিতি এমন, এই রিকশা মিস করলে নীলিমাকে আরো ঘণ্টাখানেক এখানেই দাঁড়িয়ে থাকা লাগতে পারে। তাই সে আর দেরি না করে রুদ্রের আহ্বানে সাড়া দেয়। ঝটপট রিকশায় চড়ে বসে। রুদ্র বলে- তুমি কোন এলাকায় থাকো?
– খালপাড়ের দিকে।
– ও আচ্ছা। আমিও তো ঐদিকেই থাকি। ভালোই হলো। মাঝে মধ্যে একসঙ্গে যাওয়া-আসা করা যাবে।
নীলিমা কোনো কথা বলে না। রিকশা চলতে শুরু করলে রুদ্ররও কথা থেমে যায়। ভার্সিটিতে কদিন হলো আসা-যাওয়া, কথা হয়নি ক্লাসে, রিকশাতে প্রথম দুজনের কথা হলো। দুজনের মধ্যেই জড়তা। কিন্তু জড়তা সত্ত্বেও রুদ্র যে নীলিমার কাঁধে হাত রাখবে, তা নীলিমা কল্পনাও করতে পারেনি কখনো। কল্পনা যদি করতেই পারত, তবে কি আর রিকশায় চড়ে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতো!
রিকশা অনেকখানি পথ চলে এসেছে। কড়া রোদে রিকশাওয়ালা মামা ভীষণ ঘামছে। হুডের ভেতরে রুদ্র ও নীলিমাও ঘামছে। বরং নীলিমা বেশি ঘামছে। ওর বুকটা ভীষণ কাঁপছে। ধীরে ধীরে রুদ্র হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে নীলিমার কোমড় বরাবর নিতে থাকে। আলতো করে জাপটে ধরার চেষ্টা করে নীলিমাকে। নীলিমা নিজেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট্ট রিকশায় নিজেকে আর কতদূর-ই-বা সরাবে। রুদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে কিন্তু ডান হাতটা নীলিমাকে জাপটে ধরে নিজের কাছে নিচ্ছে ক্রমশ। নীলিমা রুদ্রের দিকে তাকায়। একটা মৃদু হাসি দেখতে পায় রুদ্রের মুখে। সে যে ইনটেনশনালি এটা করছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না নীলিমার। সে রুদের হাতটা ধরে বসে। সরিয়ে দিতে চায়। রুদ্র আরো শক্ত করে জাপটে ধরে। আরো কাছে আগলে নেয় নীলিমাকে। পাতলা গড়নের নীলিমা রুদ্রের বুকের সঙ্গে লেপ্টে যায়। কিছু বোঝার আগেই রুদ্র নীলিমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসে। রুদ্রের খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে নীলিমার ঠোঁটের পাশটা মুহূর্তে লাল হয়ে ওঠে। ফর্সা চেহারায় যেন কীট এসে কামড় বসিয়ে গেল। রুদ্র চুমুতে যতটা প্রশান্তি পেয়েছে, নীলিমা যেন ঠিক ততটা আঘাত পেয়েছে। তাই সে আঁতকে উঠে রিকশাওয়ালা বলে, ‘মামা, রিকশাটা থামান।’
নীলিমার ধমকের স্বরে রিকশাওয়ালা তৎক্ষণাৎ রিকশা থামিয়ে দেয়। নীলিমা তার পোশাক ঠিকঠাক করে নেমে পড়ে রিকশা থেকে। রুদ্রও সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়ে। রিকশাওয়ালাকে সে পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে ইশারা করে। রুদ্র নীলিমার মুখোমুখি দাঁড়াতেই নীলিমা দুপুরের রোদের তেজের মতো জ্বলে উঠে বলে- রুদ্র, তুমি এইটা কী করলে? আমি কি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই?
রুদ্র নীলিমার এই কথাতে আরো সাহস ও সুযোগ পেয়ে যায়। সে সিনেমার নায়কের ভঙ্গিতে বলে- গার্লফ্রেন্ড না, হতে কতক্ষণ! তোমাকে আমার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে, নীলিমা।
– বলা নেই, কওয়া নেই, তুমি রিকশায় তুলে আমার সঙ্গে নোংরামিটা করতে পারলে? ছিঃ!
– বিশ্বাস করো, আমার কাছে এটা কোনো নোংরামি না। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই কাছাকাছি পেয়ে লোভ সামলাতে পারিনি।
সেই মুহূর্তে রুদ্রের কোনো কথাই নীলিমার ভালো লাগছিল না। ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিল। উচ্চস্বরে নীলিমার কথা শুনে আশপাশের মানুষজন বারবার তাকাচ্ছিল। তাই দ্রুত নীলিমা ওখান থেকে হেঁটে বাসায় চলে আসে।
ভার্সিটির ব্যাগটা রেখে নীলিমা বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। বুকের নিচের বালিশ ফেলে চোখের কার্নিশে জল আনে। ভাবতে থাকে সেই মুহূর্তের কথা, রুদ্র কীভাবে কীভাবে তার শরীরে স্পর্শ করেছিল। এই স্পর্শ যে তার কখনো ভোলা সম্ভব না। এই প্রথম কেউ তাকে স্পর্শ করেছে। কাঁদতে কাঁদতে নীলিমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ঠোঁটে সেই স্পর্শের দাগটা তীব্র হয়ে ওঠে। চোখের জল মুছে ড্রেসিং-টেবিলের আয়নায় নিজেকে এক ঝলক দেখে নেয়। নিজের ভেতর যেন আরেকজন এসে হাজির হয় তৎক্ষণাৎ। বলতে থাকে, ‘নীলিমা, তোর তো সৌভাগ্য রে। রুদ্রের মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। এত তড়িৎগতিতে তোকে কাছে টেনে নিয়েছে, তুই তার প্রপোজ ফিরিয়ে দিবি? যদি তাই করিস, তবে তুই তো কলঙ্কের ছোঁয়া নিয়ে বাকি জীবন পার করবি। ভালোবেসে যে তোকে বুকে আগলে নিয়েছে, যে তোকে চুমু দিয়েছে, যে তোকে মুখ ফুটে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, তাকে তুই ইগনোর করবি? এ যে ফুলকে পায়ে পিষে মারার মতো। তুই এই ভুলটা করিস না। বরং রুদ্রকে ভালোবেসে তোর জীবনসঙ্গী করে নে। জানিস তো, ছেলেরা যে মেয়েকে একবার ভালোবাসে, তাকে কখনো ভুলতে পারে না।’
নীলিমার ঘোর কাটে। আয়নার দিকে তাকিয়ে সে কী সব ভাবছিল এতক্ষণ। ফিক করে হেসে দেয় নিজে নিজে। হাসির শব্দটা বেলকুনি দিয়ে বেরিয়ে শহরের রোদেলা বাতাসে মিশে হারিয়ে যায়। সে দৌড়ে গিয়ে বিছানায় পড়ে বালিশটাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ভাবতে থাকে, ‘সত্যি! রুদ্র তোমার এই প্রথম স্পর্শের কথা আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না। তোমার মাঝে ভালোবাসার যে সাগর আমি দেখেছি, সেই সাগরে আমি ডুবে মরতে চাই। আমি কালই তোমাকে আমার সম্মতির কথা জানাব। আর তারপর এই শহরে রিকশার হুড তুলে দুজন ঘুরে বেড়াব। চুমুতে চুমুতে রাঙিয়ে তুলব চৈত্রের খরার পড়া আমাদের ঠোঁট।’
:: আশকোনা, উত্তরা, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়