আইপিএল : রাজস্থানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন গুজরাট

আগের সংবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি সংশোধন হচ্ছে

পরের সংবাদ

আজাদ সিনেমা হল : জীর্ণ প্রেক্ষাগৃহে ভূতও পালায়!

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : জীর্ণ ভবন। দেয়াল থেকে খসে পড়ছে সিমেন্টের পলেস্তরা। উপরে পুরনো টিনের চালা। ভারী বৃষ্টি হলেই পানিতে হয় একাকার। ইন্টারনেটের যুগে এমন জীর্ণ ভবনে দর্শক আসে না তেমন। কোনো শোতে পাঁচজন, কখনো তিন জন। তাই বিদ্যুৎ খরচ কমাতে লাইটও জ্বালানো হয় কম। এমন অবস্থায় শুধু মানুষ নয়, ভয়ে ভূতও পালানোর মতো অবস্থা ঢাকার প্রথম আধুনিক সিনেমা হল বলে খ্যাত আজাদের।
একসময় ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীতে এ হল থাকত দর্শকে ভরপুর। দর্শক তালিকায় কবি সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, কাইয়ূম চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিমসহ রাজ্জাক, কবরী, শাবানা, এটিএম শামসুজ্জামানের মতো খ্যাতিমান অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও যাতায়াত ছিল। তবে এখন দর্শক না থাকায় দেয়ালে অশ্লীল পোস্টার লাগিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে হল কর্তৃপক্ষ। ঢাকায় প্রথম দিককার পিকচার হাউস তথা শাবিস্তান সিনেমা হল, সিনেমা প্যালেস, লায়ন সিনেমা হল, গুলিস্তান সিনেমা হল, মায়া সিনেমা হল, তাজমহলসহ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব সিনেমা হল টিকতে না পেরে এখন ইতিহাসের পাতায়। এগুলোর সমসাময়িক আজাদের অবস্থাও এমন হতে চলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকাই সিনেমা হলের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ দেশের চলচ্চিত্র বিকাশের এক উজ্জ্বল সাক্ষী আজাদ সিনেমা হল। ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হলটি। জমিদার মুকুল ব্যানার্জীর নামানুসারে প্রথম দিকে এর নাম ছিল ‘মুকুল টকিজ’। ১৯২৯ সালে ঢাকায় নির্মিত প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট কিস’ এই হলে প্রদর্শিত হয়। এই সিনেমা দিয়েই হলটির যাত্রা শুরু। এর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও বিশিষ্ট ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার (আরসি মজুমদার)। ঢাকা শহরের রুচিশীল দর্শক ছিল তখন। ১৯৩০ সালে এই হলে দেখানো হয় চণ্ডীদাস, গোরা, ফেয়ারওয়েল টু আর্মস ইত্যাদি বিখ্যাত সব ছবি।

এরপর থেকে পাকিস্তান সময়ে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশে জনপ্রিয় সব সিনেমা এই হলের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হতে থাকে। হলটির সংগ্রহশালাতে এখনো পুরনো দিনের সব সিনেমার পোস্টার ও রেকর্ডার আছে বলে হল কর্তৃপক্ষ জানায়। তবে প্রায় শত বছর পার করে ফেলা আজাদ যেন হারানো ঐতিহ্যের কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অবকাঠামো সংকটে এটি মৃতপ্রায়। ইন্টারনেটের যুগে জীর্ণ ভবনে ও মানসম্মত সিনেমা প্রদর্শিত না হওয়ায় এখন আর সেখানে ঢু মারতেও যান না কেউ।
এমনকি দর্শকদের আকর্ষণ করতে দেয়ালে টানানো অশ্লীল পোস্টারে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেন অনেকে। পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় হলের দেয়ালে অশ্লীল পোস্টারের জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অভিযোগও করতে দেখা যায়। রাতে মাদক সেবনসহ অশ্লীলকাজে সিনেমা হলটি ব্যবহৃত হয় বলে হলের পাশের ব্যবসায়ীরা জানান।
হলটির পাশের এক মুদি দোকানী জানান, হলে মানুষ যায় না বলে নোংরা পোস্টার টানানো হয়েছে। মাঝে মধ্যে স্কুলের বাচ্চাদের অভিভাবকরা এখানে এসে হল কর্তৃপক্ষের লোকদের সঙ্গে ঝগড়াও করেন। রাতে ভিতরে মাদক সেবনসহ জজ কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের নিয়ে ভিতরে যেতে দেখা যায়। আশাহত হয়ে তিনি বলেন, তবে একসময় হলের কি জনপ্রিয়তাই না ছিল।
এদিকে আজাদ সিনেমা হলের ম্যানেজার পরিতোষ রায় বলেন, চলচ্চিত্রের সেই স্বর্ণযুগ আর নেই। আজাদে একসময় টিকিট মিলত না। আর এখন মানুষ হয় না। মালিক এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলটি রেখেছেন। তবে কতদিন চলবে জানি না। যে দর্শক হয়, তাতে বিদ্যুৎ খরচ উঠে না। সরকারি প্রণোদনা পেলে টিকে থাকা সম্ভব। নি¤œমানের গল্পের কারণেই দেশীয় চলচ্চিত্রগুলো দর্শক হারিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভালো সিনেমা তৈরি হয় না। যার কারণে পুরাতন সিনেমাগুলোই অনেক সময় এখানে প্রদর্শন করা হয়। ইন্টারনেটের এ যুগে মোবাইল ফোনেই এখন ছবি দেখা যায়। তাই দর্শকরা এখন আর সিনেমা হলে আসেন না। অশ্লীল পোস্টারের বিষয়ে পরিতোষ রায় বলেন, এই পোস্টারগুলো সিনেমা যারা তৈরি করে তাদের। তারা যদি এই ধরনের পোস্টার দেয় তাহলে আমাদের কি করার আছে। তবে আমরা এই ধরনের পোস্টার না দেয়ার জন্য বলেছি। পোস্টার পরিবর্তনের বিষয়টা আবার জানাব। হলের ভিতর মাদক আর অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়