হেলমেট বাহিনীর উৎস কোথায়

আগের সংবাদ

সাতশ কিলোমিটার নিয়ে শঙ্কা : বেহাল সড়ক, ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি বাড়বে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মেরামত শেষ হবে না

পরের সংবাদ

প্রতিবন্ধী ভুট্টু এখন চাকরি দিচ্ছেন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : বেকার যুবকদের স্বপ্নের মডেল হয়ে উঠছে শারীরিক প্রতিবন্ধী পারভেজ ভুট্টু। নিজের বেকারত্বের সঙ্গে আরো ১০ জনের বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর সৈয়দপুরে।
ভুট্টু গড়ে তুলেছেন খাদ্যপণ্য তৈরির ছোট কারখানা। এটি শহরের কাজীপাড়া এলাকায়। নিজেও সমাজের বোঝা হননি। পাশাপাশি অন্য বেকারদেরও অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত করতে স্বপ্ন বুনছেন। এখন প্রয়োজন শুধু পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহায়তা পেলে হাজারও বেকারের কর্ম সৃষ্টি করতে পারবেন তিনি। এমন প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছেন।
ভোরের কাগজকে নিজের জীবন যুদ্ধের গল্প শোনান তিনি। ভুট্টু বলেন, মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা ছেড়ে চলে যান। জন্মের কিছুদিন পর গর্ভধারিণী মাও পরপারে যায় চলে। বেঁচে থাকার অবলম্বন হয় নানি। এরই মাঝে বাবা তিনবার এসেছিল আমাকে দেখতে। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার মুখের দিকেও বাবা সেদিন তাকায়নি। মাত্র তের বছর বয়সে শীতের রাতে মামা ঘর থেকে লাত্থি গুতা মেরে বের করে দেয়। সারারাত কেটে যায় মুন্সিপাড়ার জোড়াপুকুর পাড়ে। জন্ম থেকেই হেঁটে চলার শক্তি নেই তার। দুটি হাত ও মাথা তার বেঁচে থাকার সম্বল। তবে অন্যের কাছে হাত পাততে রাজি নন তিনি। বেঁচে থাকতে হাতকেই সম্বল করে তুলেন।
সম্পূর্ণ নিরক্ষর মানুষ তিনি। অনেক অনুনয় বিনয় করে কাজ নেন অন্যের খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানায়। সেখান থেকে হুইল চেয়ারে চেপে শহর-গঞ্জের দোকানে দোকানে গিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। বাড়ি ফিরতে অনেক রাতও হয়ে যায়।
তারপরেও বেঁচে থাকার তাগিদে তার অবিরাম ছুটে চলা। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। এমন করে পেরিয়ে যায় অনেক বছর। ব্যবসায়ী সুলভ আচরণ আর অদম্যতার কারণে জয় করেন মানুষের মন। ধীরে ধীরে সঞ্চয় করেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র খাদ্য পণ্য তৈরির কারখানা।
এ কারখানায় তিনি চানাচুর, ডাল ভাজা, মটর কালাই ভাজা, চিপস, আচার ও সেমাই তৈরি করেন। তার সবচেয়ে বড় পুঁজি সততা। এ কারণে শহরের মহাজনরা বাকিতে তাকে মালামাল সরবরাহ করে। সারাদিন বেচাকেনার পর মহাজনের পাওনা আগে মিটিয়ে দেয়। তারপর লাভের অংশ দিয়ে শ্রমিকের পারিশ্রমিকের টাকা পরিশোধ করে। এরপর যা থাকে তা দিয়ে তিনি নিজের খরচ চালান। ভাড়া বাড়িতে নানির সঙ্গেই বসবাস তার।
ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে তিনি খাদ্যপণ্য তৈরি করেন। এ জন্য তার তৈরি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশি পণ্য তৈরি করার মতো নেই তার জায়গা। রয়েছে অবকাঠামোরও সংকট।
অন্যের বড় জায়গা ভাড়া নিয়ে পণ্য তৈরির কাজ করলে ব্যয় অনেক বেশি হয়। সেজন্য তিনি সহায়তা চান সরকারের। তাকে যদি সুদমুক্ত ঋণ এবং খাস জমির বন্দোবস্ত করে দেয়া হয় তাহলে আগামী দিনে তিনি হাজারও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এতে লাভবান হবে আরো কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ। এসব কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী পারভেজ ভুট্টুর কারখানাতে বসেই। তবে তিনি তার জীবন যুদ্ধের গল্পের সময় কৃতজ্ঞচিত্তে বারবার স্মরণ করেন শহরের অধিবাসী, সাধারণের বিপদের বন্ধু বলে পরিচিত তামিম রহমানের নাম। ভুট্টু বলেন, এই মানুষটি সব সময় আমাকে সাহস দিয়েছেন। যে কোনো বিপদে পাশে থেকেছেন।
এ ব্যাপারে সমাজসেবী তামিম রহমান বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবন যুদ্ধের অকুতোভয় যোদ্ধা ভুট্টুকে সরকারিভাবে এক খন্ড জমি আর আর্থিক সহায়তা দিলে বেকার সমস্যা সমাধানে সে দেশের মডেলে পরিণত হবে। একই বিষয়ে কথা হয় শহরের সুধীজন ও সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকুর সঙ্গে। তিনি বলেন ভুট্টু কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তাকে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও উচিত পাশে দাঁড়ানো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়