ভাংচুর এবং আক্রমণ : বিএনপির চারশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

এমন করুণ মৃত্যু আর কত দেখব?

পরের সংবাদ

তেলাপোকার শুঁড়ে ইঁদুরের লেজ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুই রুমের একটি বাসায় বসবাস করে লিমনদের পরিবার। বাবা-মা আর ছোট বোনসহ চার সদস্যের সংসার। ছোট বোন আশার বয়স সাড়ে চার, লিমনের বয়স দশ বছর। তার বাবা একটি কলেজের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক। তিনি খুব বই পড়তে ভালোবাসেন। তাই তাদের বাসায় আসবাবপত্রের চেয়ে যেন বই-ই বেশি। লিমনের বাবা কলেজে শিক্ষক হলেও বাসায় লিমনের শিক্ষক তার মা। লিমনও মাঝে মাঝে ছোট বোন আশাকে বোঝায়- সেও তার কড়া শিক্ষক। আশার মাত্র হাতেখড়ি হয়েছে। স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ আর এক দুই লিখতে শিখেছে। এখনই লিমন তাকে পূর্ণমাত্রা অর্ধমাত্রার পার্থক্য বোঝাতে চায়।
লিমন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের প্রথম পাঁচ মেধাবীর একজন সে। সুযোগ পেলেই শিক্ষকদের নানা প্রশ্ন করে, বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষকের কাছে তার প্রশ্নের শেষ নেই। শিক্ষকদেরও খুব প্রিয় ছাত্র লিমন। বিজ্ঞান শিক্ষক দীপক স্যার খুব ভাবগম্ভীর চেহারার মানুষ। ৪০ মিনিটের ক্লাসে ৩০ মিনিট পড়ান। বাকি ১০ মিনিট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্প, প্রশ্নোত্তরের জন্য রাখেন। আজকের ক্লাস শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হলো।
– স্যার আরশোলা আর তেলাপোকার মধ্যে পার্থক্য কী?
– লিমন, কোনো পার্থক্য নেই। একটি আরেকটির প্রতিশব্দ/সমার্থক শব্দ।
– স্যার, আরশোলা না তেলাপোকা কোনটি সঠিক- এটা নিয়ে মায়ের সঙ্গে আমার প্রায়ই দ্ব›দ্ব লেগে যায়।
– তেলাপোকা নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন?
– স্যার, বর্তমানে আমাদের বাসার মূল অভিভাবকই হলো তেলাপোকা।
লিমনের শেষ কথাটা শুনে ক্লাসের সবাই হেসে উঠল।
সকালের শিফটে ক্লাস শেষে স্কুল থেকে ফিরতে দুপুর একটা বেজে যায়। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমের অভ্যাস নেই লিমনের। ছোট বোনের সঙ্গে কথায়-খেলায় ব্যস্ত সময় কেটে যায়। স্কুল থেকে ফিরেই আজ মায়ের কাছে লিমনের আবদার- এবার বার্ষিক পরীক্ষার পর স্কুল ছুটির সময় কক্সবাজার নিয়ে যেতে হবে।
– লিমন, ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর বেড়ানোর পরিকল্পনা করা যাবে।
– ঠিক আছে মা, বাবাকে কিন্তু তুমি বলবে।
লিমনের বাবা সন্ধ্যায় বুকসেলফ থেকে বঙ্কিমসমগ্র নামাতেই তেলাপোকার অজ¯্র ডিম ঝরে পড়লো ফ্লোরে। এই বাসায় তেলাপোকার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বুকসেলফ, জুতার বাক্স আর রান্নাঘরের অন্ধকার জায়গাগুলো।
– লিমন, তোমার বইখাতা সাবধানে রেখো। সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা, দেখো তেলাপোকা যেন বইখাতা নষ্ট না করে।
– ঠিক আছে, বাবা।
– এই বাসাটা তেলাপোকাদের কেন যে এত পছন্দ? বিড়বিড় করে বললেন বাবা।
তা শুনে চটপট বলে ফেললো লিমন- আমার মনে হয় তেলাপোকা রঙের শাড়ি ও পোশাক মায়ের খুব পছন্দ। এ কারণেই আমাদের বাসাটি তেলাপোকাদের বেশি পছন্দ।
লিমনের কথা শুনে হাসতে হাসতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মা।
এক সপ্তাহ পরই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা ভালোভাবে শেষ হলেই কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া হবে- এই বিষয়টি মাথায় রেখেই লিমনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলল।
বার্ষিক পরীক্ষার আগে আজ শেষ ক্লাস। দীপক স্যারেরও আজ শেষ পাঠ। ক্লাসে এসেই একটা খুশির খবর দিলেন তিনি। আজকের ক্লাস শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যাবে। লিমন তো খুবই খুশি। এই প্রথম জাদুঘর দেখা হবে তার।
জাদুঘরের দুটো ফ্লোর হেঁটে হেঁটে সব কিছু খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে বন্ধুদের সাথে। বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পশু, পাখি সব কিছু এক জায়গায়। হাঁটতে হাঁটতে পা একটু ব্যথা হলেও কষ্টটাকে কষ্ট মনে হলো না।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই আজ বাবার কাছে লিমনের প্রশ্ন- কোথায় গেলে বন্য হাতির দেখা পাওয়া যাবে?
– শেরপুর গেলে হয়তো হাতি দেখা মিলবে, কিন্তু কেন লিমন?
জাদুঘর ঘুরে আসার পর লিমনের সত্যিকার বন্যহাতি দেখার শখ জেগেছে। তাই সে বললো- মা, পরীক্ষার পর তাহলে কক্সবাজার নয়, আমরা শেরপুরে যাব।
– ঠিক আছে, আগে পরীক্ষা তো হোক।
পনেরো দিনের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ হলো। লিমন এখন কিছু দিনের জন্য একেবারে মুক্ত। মা-বাবা মিলে শেরপুরে যাওয়ার জন্য দুদিনের একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা করলেন। লিমনের বাবার এক সহকর্মীর বাড়িতেই থাকা হবে এই দুদিন। সকাল আটটায় শেরপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু। ঢাকার ছোট্ট বাসা আর তেলাপোকার উৎপাত ছাড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে দুদিন সময় কাটবে, ভাবতেই লিমনের মনে আর খুশি ধরে না। শেরপুরের ঝিনাইগাতী পৌঁছার পরই সড়কে অনেক লোকের ভিড় চোখে পড়ল। লিমন আর বাবা গাড়ি থেকে নেমে দেখল বিশাল একটি হাতি শুয়ে আছে ধান ক্ষেতে।
বাবা, হাতিটা কেন চুপচাপ শুয়ে আছে? ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলো লিমন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বললেন লিমনের বাবা। জানা গেল, বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে হাতিটি মারা গেছে। সব কথা জেনে লিমনের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। জীবন্ত বন্যহাতি দেখতে এসে প্রথমেই মৃত হাতির দেখা! ধান ক্ষেতের পাশে অজস্র ইঁদুরের গর্তও চোখে পড়ল ওর।
– বাবা, ইঁদুররা এখানে কী করে?
– ধানের শীষ কেটে কেটে নিজেদের গর্তে জমা করে রাখে।
দুদিনের ভ্রমণে বাচ্চা হাতি, বড় হাতি, হাতিদের লোকালয়ে আগমনের সব মনোরম দৃশ্য দেখার পর মৃত হাতির জন্য দুঃখটা একটু কমে আসলো। মা-বাবার সাথে ছোট্ট আশাও খুব উচ্ছল প্রাণবন্ত সময় কাটালো।
বেড়ানো শেষে আবার ঢাকার সেই ছোট্ট বাসায় ফিরল ওরা। পরদিনই খেয়াল করল- বাসায় আর আগের মতো তেলাপোকার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ওদিকে প্রতি রাতেই অদ্ভুত নানা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে লিমনের। দেয়াল, আলমারির উপরে কারা যেন আস্তে আস্তে পা ফেলে চলাচল করে। আজ রাতে লাইট জ¦ালাতেই কয়েকটা ইঁদুর দৌঁড়ে পালালো।
দুদিন সবার অনুপস্থিতিতে অন্ধকার বাসায় ইঁদুররা ঢুকে তেলাপোকাদের বিদায় করে দিয়েছে? নিজেদের দখল নিয়েছে পুরো বাসা! ভাবল লিমন।
তেলাপোকারা তো সবখানে নোংরা করতো। আর ইঁদুরের দল সব কেটে কুটে শেষ করে দিচ্ছে। এমনকি লিমনের মায়ের তেলাপোকা রঙের পোশাকগুলোও আস্ত রাখেনি।
– বাবা, ইঁদুর কেন সব কিছু শুধু দাঁত দিয়ে কাটতে থাকে?
– লিমন, ইদুরের দাঁতে রুট ক্যানেল থাকেনা, দাঁত ক্রমশ শুধু বড় হয়, এই কারণে দাঁতের সাইজ স্বাভাবিক রাখতে ইঁদুর অনবরত দাঁত দিয়ে কাটাকুটি করে।
– বাবা, চলো আমরা সব ইঁদুরগুলোকে ধান ক্ষেতের গর্তে রেখে আসি।
– তোমার মাথায় সব দুষ্টু বুদ্ধি।
– বাবা, হাতির শুঁড় শক্তিশালী নাকি ইঁদুরের দাঁত?
লিমনের এই আজগুবি প্রশ্নের কোনো জবাব দিলেন না বাবা।
তেলাপোকার পর ইঁদুরের উৎপাত থেকে স্বস্তি পেতে এবার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানুয়ারি মাসে অন্য কোথাও নতুন বাসা নেবে। এরপর খুঁজে খুঁজে লিমনের স্কুলের কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থানে একটি নতুন বাসা ঠিক করা হয়েছে।
বাসার সব জিনিসপত্র গোছানোর সময় লিমনের চোখে পড়ল বুকসেলফের আড়ালে পড়ে আছে একটা মৃত তেলাপোকা। আর ওই তেলাপোকার লম্বা শুঁড়ে লেজ নেড়ে নেড়ে আঘাত করছে একটা ইঁদুরের বাচ্চা। লিমনের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়