সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’ এবং কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রয়াত ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’, ‘নন্টে-ফন্টে’র স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। রেখে গেলেন তার ‘কাল্পনিক শক্তি’ হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দ্য গ্রেটদের।গত ২৪ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জেরে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন সম্প্রতি। হাসপাতালেই মৃত্যুর আগে নারায়ণবাবুর হাতে পদ্মশ্রী স্মারক এবং মানপত্র তুলে দিয়েছিলেন ভারতের বিশিষ্টজনরা। কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়া শিবপুরে। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশি সিরিয়াল ও মজার কমিকস সৃষ্টি করে বাংলার শিশুসাহিত্যে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। চিরকালের স্বল্পভাষী ও প্রচারবিমুখ এই শিল্পী বছর চারেক আগে পর্যন্তও সমান দক্ষতায় এঁকে গিয়েছেন ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘নন্টে-ফন্টে’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’র নানা কাণ্ডকারখানা। ‘এই বয়সেও অসুস্থ শরীরে কেন টানা এঁকে যাচ্ছেন?’ প্রশ্নের জবাবে নারায়ণবাবু একবার জবাব দিয়েছিলেন, ‘ছোটদের খুব ভালোবাসি, তাই। তাদের জন্য তুলি-কলম ছাড়তে পারিনি।’ আর তার জেরেই নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল আর তার দুই সাগরেদ ভজা-গজা-লম্বকর্ণদের কীর্তি ছাড়াও পাঠক পেয়েছে বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, শুঁটকি মুটকি, পটলা দ্য ম্যাজিশিয়ানের মতো মনমাতানো সব কমিকস।
১৯৬৫ সালে ‘শুকতারা’ পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করে বাঁটুল। বাঙালির প্রথম সুপারহিরো। গোলাপি রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি পরা, সঙ্গে কালো রঙের হাফপ্যান্ট। খালি পা। আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয়তা না পেলেও তার উত্তরণ বিস্ময়কর। বুড়ি পিসি, পাড়ার দুই মিচকে মস্তান ভজা-গজা, সাগরেদ লম্বকর্ণ, পোষা উটপাখি উটো, পোষা বুলডগ ভেদো নিয়ে বাঁটুল এখন বাংলা কমিকসের ইতিহাসে অবিসংবাদিতভাবে সত্যিই ‘দ্য গ্রেট’। ১৯৬৯ সালে ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করে নন্টে-ফন্টে। তখন অন্যদিকে আবার রমরমিয়ে চলছে হাঁদা-ভোঁদা। তবে তাতে কিছু যায় আসেনি নন্টে-ফন্টের। প্রথম প্রথম এই দুই কিশোর ছিল মন ভালো করা দুই ফচকে, যারা প্রায়ই একে অন্যের পেছনে লাগে, মজা করে। কিন্তু হৃদয়টা বিশাল, যে কারো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপরে যোগ হলো তাদের হোস্টেল জীবন। এলো সিনিয়র কেল্টুদা, সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যার পাতিরাম হাতি এবং রান্নাঘরের দেহাতি পাচক ঠাকুর।
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই দুই বিচ্ছুকে। পঞ্চাশ পেরিয়ে তারা আজো একই রয়েছে। আসলে শিশু-কিশোর মনের দুষ্টু মিষ্টি সব অনুভূতি বারবার ফুটে উঠেছে তাদের মধ্যে। সহজ কথায় ছেলেমানুষি মন নিয়ে আপন খেয়ালে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন নিজের সৃষ্টির জগতে সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে। কমিকস ছাড়াও নারায়ণ দেবনাথের তুলিতে বারবার ধরা দিয়ে গেছে গ্রামবাংলার দৃশ্য- নদীনালা, গাছপালা, যার উৎস ছেলেবেলায় দেখা বাংলাদেশের স্মৃতি। সেসব স্মৃতি, তার তৈরি চরিত্রদের হাত ছেড়ে দিয়ে পথচলা থামালেন শিল্পী নারায়ণ দেবনাথ। যদিও পথচলা থামল না বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, গোয়েন্দা কৌশিক রায়ের। বাংলা শিশুসাহিত্য যত দিন জীবিত থাকবে, ভারতীয় উপমহাদেশের কার্টুন ইতিহাসে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথকে সবাই স্মরণ করবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়