হাতিরঝিলের সড়ক বন্ধে রাজধানীতে তীব্র যানজট

আগের সংবাদ

বিশাল লক্ষ্যমাত্রার বাজেট প্রস্তুতি : সম্ভাব্য আকার ৬,৭৫,১৩৯ কোটি টাকা, আয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা

পরের সংবাদ

নেউলের মুরগি চুরি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাঁটাতারের বেড়াবেষ্টিত খামারবাড়ি। বাড়ির ভেতর অনেক ফলফলাদির গাছ। অনেক ফুলের গাছ। ফলের গাছে টসটসে সব ফল ধরে আছে। আর ফুলগাছগুলো রঙে রঙে অপরূপ হয়ে আছে। ওসব ফুলে ফুলে ভোমর, অলি, প্রজাপতি আপনমনে উড়ে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায়। আর ফলগাছগুলোতে মাঝেমধ্যে দুরন্ত কাঠবিড়ালি এসে হানা দেয়।
সেই খামারবাড়িতে একটা হাঁস-মুরগির ফার্ম রয়েছে। রয়েছে কবুতর আর কোয়েল পাখি পালনেরও সুব্যবস্থা। খামার বাড়িতে চমৎকার একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরে মাছ পালন করা হয়। দুপুর বেলা হাঁসেরা ইচ্ছামতো সেই পুকুরে নেমে সাঁতার কাটে। ডোবাডুবি খেলা খেলে। আর প্যাক প্যাক ডেকে উল্লাস প্রকাশ করে।
পুকুরের ওপর একটা ঝুলন্ত ঘর বানানো হয়েছে। সেই ঝুলন্ত ঘরে মুরগি পালন করা হয়। মুরগিরা খাবার খেয়ে মলত্যাগ করলে তা পুকুরে গিয়ে পড়ে। তখন পুকুরের মাছেরা সেগুলো মজা করে খায়।
সেই খামার বাড়ির কাছেই উঁচু আলের ভেতর ছিল একটা গর্ত। সেই গর্তে একজোড়া ধেড়ে নেউল বসবাস করত। নেউলেরা প্রায়ই খামারের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসত। এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকত। আর ফ্যালফ্যাল করে হাঁস-মুরগির বিচরণ দেখত। মুরগি খাওয়ার লোভে তাদের জিভ থেকে জল ঝরত।
নেউলি একদিন নেউলকে বলল, ‘আজ আমি যে করে হোক ওই কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর প্রবেশ করব। তুমি বাইরে অপেক্ষা করো। আশপাশে খেয়াল রেখো।’
নেউল বলল, ‘যদি কোনো বিপদ হয়!’
নেউলি বলল, ‘বিপদ আর কী হবে। হলে হোক। তবু আজ আমি মোরগের গোশত না-খেয়ে ছাড়ছি না।’
নেউল বলল, ‘গিন্নি আরেকবার ভেবে দেখো। পাছে যেন আবার কোনো বিপদ না-হয়।’
নেউলিটা নেউলের কোনো কথাই শুনল না। সে অনেক কসরত করে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে গিয়ে ঠিকই খামার বাড়িতে প্রবেশ করল। আর নেউলটা বেড়ার বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল।
কিছু সময় পর খামার বাড়িতে হাঁস-মুরগির ডেরায় তুমুল হইচই শুরু হয়ে গেল। নেউলের উপস্থিতি টের পেয়ে হাঁস-মুরগিরা ভয়ে যে যার মতো চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। এরই মধ্যে নেউলিটা একটা মাঝারি আকারের মুরগির পা কামড়ে ধরল। পরে সে ওর পা ছেড়ে দিয়ে গলায় কামড়ে ধরল। গলায় কামড়ের কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে মুরগিটা মারা গেল। নেউলি মরা মুরগিটাকে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার দিকে ছুটতে লাগল। মুরগিটাকে টেনে নিয়ে যেতে তার খুব কষ্ট হলো। মনে হলো শরীরের সব শক্তি যেন ফুরিয়ে আসছে।
সে সময় তার মনে হলো- আরে পেট ভরা তো খিদে। তাই হয়তো শরীরটা এমন দুর্বল লাগছে। মুরগিটাকে একটু খেয়ে নেই। খেলে নিশ্চয়ই শরীরে বল পাব।
এই ভেবে নেউলি মুরগির গোশত খেতে শুরু করল। কয়েক দিনের ক্ষুধার্ত নেউলিটা মুরগিটাকে খেতেই লাগল। খেতেই লাগল। খেতে খেতে তার ছোট্ট পেটটা একেবারে ঢোল হয়ে ফুলে উঠল।
এদিকে নেউলটা প্রতীক্ষায় বসে আছে, কখন নেউলি কিছু একটা খাবার নিয়ে ফিরে আসবে। কিছুক্ষণ পর নেউলিটা ঠিকই ফিরে এলো। সঙ্গে নিয়ে এলো নাদুসনুদুস একটা মুরগি। মুরগিটা দেখে নেউলটা খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
বলল, ‘মুরগিটা নিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো। আমার পেটে খিদের আগুন জ্বলছে। আমার আর তর সইছে না।’
কিন্তু কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে নেউলিটা পড়ল মহাবিপাকে। যে ফোকর দিয়ে সে বেড়ার ভেতর ঢুকেছিল, শরীর ফুলে ওঠার কারণে সেই ফোকর দিয়ে সে কিছুতেই আর বেরোতে পারছে না। কী করা যায় এখন! অধীর হয়ে ভাবতে লাগল নেউলি।
এদিকে নেউলি দেখল, হাঁস-মুরগির চেঁচামেচি শুনে খামারের পোষা কুকুরটা বেপরোয়া হয়ে তার দিকেই ছুটে আসছে। এমনি বিপদে মোটা শরীর নিয়ে নেউলিটা বেড়ার ভেতরই ভৌ-দৌড়। কুকুরটা তাকে ধরতে আসছে। আর সে প্রাণ বাঁচাতে ব্যাকুল হয়ে ছুটছে। নেউলিটা ছুটছে তো ছুটছেই।
এভাবে কিছু সময় ছোটার পর হঠাৎ তার বাথরুম হয়ে গেল। বাথরুম হয়ে মোটা পেটটা আগের জায়গায় ফিরে এলো। আর নেউলিটা কুকুরের চোখের সামনেই কাঁটাতারের বেড়ার ফোকর দিয়ে একলাফে বেরিয়ে এলো। বিপদমুক্ত হলো নেউলি। বাইরে এসে নেউলিটা ঘন ঘন হাঁপাতে লাগল। আর মনে মনে বলতে লাগল- বড় বাঁচা বেঁচে গেছি এ যাত্রা। প্রাণ থাকতে আর কোনোদিন খামার বাড়িতে ঢুকব না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়