রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মেট্রোরেলকর্মী

আগের সংবাদ

পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি : ফেনীতে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিএনপির বিক্ষোভ

পরের সংবাদ

ট্যুর টু সাজেক ভ্যালি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দীপনের খুশির সীমা নেই। ঈদ ও পূজার কারণে টানা এক সপ্তাহ ইশকুল বন্ধ। বাবা বলেছেন, ছুটিতে সাজেকে বেড়াতে নিয়ে যাবেন।
অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ির শান্তি পরিবহনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। বাবা, মা, ছোট বোন মলি, ছোট কাকা ও মেঝো মামাসহ ছয়জনের টিকেট। চার বছর পেরিয়েছে বলেই পিচ্চি মলির জন্যও টিকেট কিনতে হলো। বাবা বলেন, দূরের রাস্তা খোলামেলা সিটে বসেই যাওয়া ভালো।
বাবার কাছে ‘সাজেক’ সম্পর্কে আগেই মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেছে দীপন। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে রিজার্ভ করা মাহেন্দ্র বোলেরো করে দীঘিনালা হয়ে তারপর সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের পরিচালনায় দৃষ্টিনন্দন ‘সাজেক কটেজ’। তাদের আরেকটি নান্দনিক স্থাপনা ‘রুণময়’ এর অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বাবার মুখে শুনেছে দীপন। এর পর নেটে বাবার সাথে বসেও সাজেকের নানান দৃশ্যাবলি দেখেছে সে। দেখেছে ‘তীর ছুড়ে মারা পার্ক’, রিজিয়নের হেলিপ্যাড এবং সাজেক পর্যটনের নিরিবিলি গুছানো অপূর্ব নান্দনিক দৃশ্য। দীপন বাবার মুখে আরো শুনেছে- সাজেক পৌঁছার আগে সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে সাপের মতো আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিচু রাস্তায় একশত কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চলার দম বন্ধ করা রোমাঞ্চকর বর্ণনা।
দীপন তার রঙিন পেনসিলের বাক্সটাও গুছিয়ে নিলো তার ব্যাগে। সেই সকাল থেকেই দীপনের ব্যাগ গোছানোটা শেষ হচ্ছে না যেন। খাগড়াছড়ি রিজিয়নের সাজেক ভ্যালির সুউচ্চ হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাশের মনোরম দৃশ্য দীপন আঁকবেই। আঁকবে দূরের ছোট বড় পাহাড়ের সাথে শরতের সাদা মেঘের জড়িয়ে থাকার দৃশ্য। দীপন আঁকার ইশকুলে ভর্তি হয়েছে ছ’মাস আগে। ইতোমধ্যে দীপনের আঁকার হাত অনেক এগিয়েছে। সপ্তম শ্রেণিতে দীপনের সহপাঠী রনি ও নীলাও একই সঙ্গে ছবি আঁকা শেখে। ড্রয়িং স্যার বলেন, দীপনের আঁকার হাত খুব ভালো। দীপন খুব শার্প। সহজেই সব বিষয় ক্যাচ করতে পারে সে।
– কিরে দীপন! তোর হলো? সকাল সাতটায় গাড়ি। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। রাত ক’টা বাজে খেয়াল আছে? ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি।
বলেই মা দীপনের পাশে দাঁড়িয়ে তার ব্যাগ গুছানো দেখেন।
দীপনের জন্য বাবার কিনে দেয়া নতুন ট্যুর লাগেজটা সামনের দিকে উপরিভাগে সাঁটানো নাইলেনের একটুকরো পকেট রয়েছে। যেটাতে কোনো কিছু লিখে কাগজটা তার ভেতরে সেট করে দেয়া যায়। দীপনের এ কাজটা বাকি ছিল। অবশেষে অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেছে। লাগেজের সেই পকেটে কাগজে লেখাটা নিজের হাতে রঙিন জেল কলমে লিখে দিল ‘ট্যুর টু সাজেক ভ্যালি’। দীপন মাকে বললো- মা, এইতো আমার গুছানো শেষ। তুমি যাও। আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। মা ভেতরে ঘরে চলে যায়।
সামনের আর্মি প্রটেকশনের গাড়ি। এর পরেই দীপনদের মাহেন্দ্র বোলেরো এগিয়ে চলছে তীব্র গতিতে। সাপের মতো আঁকা বাঁকা পাকা রাস্তা। খানিকটা বেশ উঁচু, আবার খানিকটা অনেক নিচু। রাস্তার দু’ধারে ছোট-বড় উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি। লতানো সবুজ ঘাস-পাতা রাস্তার দু’পাশে লকলক করছে। দীপনদের মাহেন্দ্র বোলেরোটা সাজানো হয়েছে চমৎকারভাবে। শুধুমাত্র দীপনের জন্যই এই আয়োজন। দীপন বাবাকে আবদার করেছে বলেই নানান রঙিন কাগজের ফুল ও রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হলো গাড়িটা। দীপন বাবার পাশে সামনের সিটে বসেছে। পেছনে মা, মলি, ছোট কাকা ও মেঝো মামা। আর্মি প্রটেকশনের গাড়ি সামনে। দীপনের নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। যেমন তেমন কথা নয়। আর্মি প্রটেকশনে পেছনে পেছনে দ্রুতগতিতে ছুটছে তাদের গাড়ি। হঠাৎ গাড়ির সামনে একগুচ্ছ রঙিন বেলুনের একটি গোছা খুলে গিয়ে বাতাসে সাঁই সাঁই করে উড়ে যায়। দীপন হায় হায় করে ওঠে।
– বাবা, আমাদের বেলুন উড়ে গেল যে! বাবা বেলুন! বাবা—!
– কোন বেলুনের কথা বলছিস? মা ঝাঁকুনি দিয়ে জিজ্ঞেস করে আবার- কী বেলুনের কথা বলছিস দীপু তোর বাবাকে? কি বেলুনরে-?
দীপন ধরফর করে বিছনায় উঠে বসে। মুখে কোনো কথা নেই। এদিক ওদিক তাকায়।
– স্বপ্ন দেখছিলি বুঝি? তোকে তো একবার ডেকেও গিয়েছিলাম। সবাই রেডি। ওঠো তাড়াতাড়ি। ছয়টা বেজে গেছে। স্টেশনে যেতে হবে তো। সাতটায় গাড়ি।
দীপন বুঝতে পারে সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে। সকাল হয়ে গেছে। তার তাড়াতাড়ি এ মুহূর্তে ফ্রেশ হয়ে নেয়া দরকার। একটু পরেই রওনা হয়ে যেতে হবে। শহর থেকে খাগড়াছড়ি, তারপর দীঘিনালা হয়ে সেই সীমান্তবর্তী এলাকা সাজেক ভ্যালি। তার সেই স্বপ্নের সাজেক ভ্যালির উদ্দেশ্যে!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়