‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

ভালোবাসার সূর্যোদয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সন্ধ্যায় সুখের সূর্যোদয় হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। মুখ মলিন করে ঘরে ফিরল নাসির। কোনো কথা না বলেই গামছাটা হাতে নিয়ে গোসলখানায় চলে গেল গোসল করার জন্য।
অনেকক্ষণ ধরে কান্না করার পর গোসল শেষে ঘরে ফিরল আবার।
মিষ্টি হাসির মুখটা ভীষণ অন্ধকারে ঢাকা দেখতে পেয়ে খুশি জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোমার?
কিছু না! দীর্ঘশ্বাস পেলে জবাব দিলো নাসির।
খুশি কথা বলতে চায় কিন্তু নাসিরের মুখে কোনো শব্দই যেন বেঁচে নেই আর।
খুশিকে যখন পরিবার থেকে আলাদা করে নিয়ে আসে নাসির; তখন বলেছিলো খুব সুখে রাখবে। দুজনের ছোট্ট সংসার আলো দিয়ে ভরে দিবে। কই কিছুই তো হচ্ছে না।
১০ থেকে ১২ দিন ধরে চাকরির খোঁজে রাসেল এদিক সেদিক ঘুরছে। কিন্তু কাজ পাওয়া বড়ই দুষ্কর এই শহরে। করোনার ভয়ানক থাবা কেড়ে নিয়েছে লাখ মানুষের রুটি রুজির একমাত্র অবলম্বন চাকরিকে। নাসির একটি চাকরি করতো। কিন্তু করোনার কারণে সে চাকরিটাও হারাতে হয়।
খুশি খুব সুন্দর মেয়ে। কাজল কালো চোখ। খুব মায়াবী দেখতে। একদিন বিকেলের দিকে নাসির যখন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলো, ঠিক তখনই খুশির সঙ্গে রাস্তায় তার প্রথমবারের মতো দেখা। স্কুল বান্ধবীদের সঙ্গে হাসিতে মত্ত ছিলো খুশি। সেই হাসির জাদুতে পিছু পিছু চলতে থাকে নাসিরের বশীভূত হতে দেরি লাগেনি।
কেনই বা হবে না! এত সুন্দর যার চেহারা, এত মিষ্টি যার হাসি তার প্রেমে যে কেউ বশীভূত হবে।
এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে। নাসির খুশিকে তার নিজের করে নেয়ার জন্য খুশির বান্ধবী চুমকির দারস্থ হয়।
চুমকি ভীষণ রাগি মেয়ে। প্রথমে যাচ্ছেতাই বকবক করতে থাকে নাসিরের সঙ্গে।
নাসির হতভম্ব হয়ে যায়। নাসিরও সুঠাম দেহের অধিকারী। দেখতে বেশ সুন্দর। খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
একদিন সাহস করে সরাসরি খুশির কাছে গিয়েই হাজির হয় নাসির। কষ্ট হলেও নিজের মনের কথা জানিয়ে দেয় খুশিকে।
মুচকি হেসে কোনো উত্তর না দিয়েই চলে যায় খুশি।
প্রথম যেদিন দুজনের দেখা হয়েছিল সেদিনই খুশির খুব ভালো লেগে গিয়েছিল নাসিরকে, কিন্তু বলেনি কাউকে।
হয়তো নাসির এসে তাকে বলবে সেই প্রতীক্ষায় ছিলো। আজ তার মনের আরজি মনে হয় মহান প্রভু শুনতে পেয়েছেন। তাই নাসির তার কাছে আসলো ভালোবাসার উদাত্ত আহ্বান নিয়ে।
প্রথম যখন তাদের সাক্ষাৎ হয় তখনই চুমকি আর খুশি তার ব্যবহারে অনেক মন্তব্য করছিল।
ওই দেখ ছেলেটা মনে হয় আমাদের ফলো করছে! বলছিলো চুমকি।
এসব ছেলের এই একটা কাজ, সুন্দর মেয়ে দেখলেই পিছু নেয়, নায়কের ভাব ধরে… এসব বলতে বলতে হাসিতে লুটিয়ে পড়ছিলো খুশি।
কিন্তু দুজনেরই মনে মনে খুব ভালো লাগছিলো নাসিরকে।
যাক সে কথা। হাসি-খুশিময় খুশির জীবনে পরিবর্তন দেখা দিল ঢের বেশি। অন্ধ প্রেমে মত্ত হয়ে গেল সে। নাসিরও খুব খুশি, সে পেয়ে গেছে তার মনের মতো একজন রমণী। নাসিরকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।
ওইদিকে খুশির এত খুশি দেখে কষ্টে আর হিংসায় জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে চুমকি।
এখন আর তারা একসঙ্গে স্কুলে যায় না। কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছে। খুশির চেহারা দেখলে মনে হয় যেন হাজার বছরের চেনা শত্রæ।
নাসির বুঝতে পারলো, সেদিন চুমকি কেন এত বেশি রাগান্বিত হয়েছিল।
কিছুদিন পর জানাজানি হয়ে গেল তাদের সম্পর্কের কথা। কিন্তু কোনো পরিবারই মেনে নিতে রাজি নয়।
একদিন অবশ্য ঘরোয়া মিটিং হয়েছিল নাসির আর খুশির বাবা মিলন চৌধুরীর মধ্যে, কিন্তু কোনো ধরনের সুফল আসেনি।
খুশির নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধুই নাসিরের কথা ভাবে।
ক্লাস টেন-এ পড়ে সে। করোনার কারণে এই তো সেদিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ, মোবাইল ব্যবহারও বন্ধ করে দিয়েছে খুশির বাবা। কিছুদিনের জন্য যোগাযোগই বন্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু ভালোবাসা তো আর বাঁধ মানে না। প্রতি সন্ধ্যায় নাসির ছুটে আসত খুশিদের বাড়িতে। দেখা করতে পারতো না, তবুও আসতো। পাশাপাশি গ্রামেই ছিলো তাদের দুজনের বাড়ি।
করোনার এই সময়ে ধীরে ধীরে অভাব বাড়তে লাগলো পরিবারে। অনেকদিন হলো নাসির বাড়িতে বসে আছে, কোনো কাজ কর্ম নেই। ওদিকে আবার খুশির জন্য দিওয়ানা। এসব কিছু দেখে বাবা আশফাক মণ্ডল প্রায়ই রাগারাগি করেন নাসিরের সঙ্গে। এক সময়ের পরিবারের প্রিয় ছেলেটি এখন পরিবারের সবার অপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেন!
মিলন চৌধুরী আবার আশফাক মণ্ডলের খুব ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তিনি এখনই ছেলেকে বিয়ে করাতে চান না। সমাজের প্রচলিত নিয়মে ছেলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে- সেই ভয়ে। তিনি আর দশটা বাবার মতোই চিন্তা করলেন, কিন্তু নিজের সন্তানের ভালোবাসা-ভালেলাগার বিষয়ে থাকলেন উদাসীন।
এভাবেই কিছুদিন চলে গেল। একদিন হঠাৎ করে নাসির বাজারে ঘোরাঘুরির সময় ফার্মেসিতে খুশিকে দেখতে পায়। এগিয়ে গিয়ে কথা বলে। তার নিজের মোবাইলটা খুশিকে দিয়ে দেয়। লুকিয়ে লুকিয়ে কিছুদিন কথা বলে ওরা দুজনে।
সেদিন ঘুম থেকে উঠে নাসিরকে ডাকতে তার রুমে গেলেন মা, কিন্তু ছেলেকে দেখতে পেলেন না। প্রতিদিন মায়ের চিল্লাচিল্লি সত্ত্বেও যে ছেলে ৭টা-৮টার আগে বিছানা ত্যাগ করে না, সে ছেলে আজ এতো তাড়াতাড়ি ওঠে গেল!
ওই শুনছেন, নাসিরের বাবাকে ডাকছে নাসিরের মা।
– কি? বলো?
– নাসিরকে তো দেখছি না!
– আছে হয়তো কোথাও। চিন্তা করো না সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে।
রাত হয়ে গেল কিন্তু নাসির এলো না। ওদিকে খুশির মা-বাবা কান্নাকাটি করে প্রায় বেহুশ। মেয়ের পরিবার বলে কথা। মানুষের বিভিন্নরকম কথা কিভাবে হজম করবে সে চিন্তা আরো বেশি ভেঙে দিচ্ছে তাদের।
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। ফোন ধরতেই কান্নার আওয়াজে ভেসে আসল খুশির কণ্ঠ। কিছুটা স্বস্তি পেল খুশির পরিবার। নাসিরের পরিবারও পরে জানতে পারে যে তারা পালিয়ে বিয়ে করেছে। এখন ঢাকায় রয়েছে।
করোনায় বিপর্যস্ত এই শহরে তাদের সংসার খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে। চাকরি মিলছে না নাসিরের। চালের দাম, তেলের দাম আর ডিমের দাম এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই অবস্থা। তাই মলিন মুখ নিয়ে নীরবে বসে থাকে নাসির। কি করবে? কীভাবে চলবে এখন? এখন সে একা নয়, একটি ছোট পরিবার আছে তার।
সবকিছু বুঝতে পেরে খুশি এগিয়ে আসে নাসিরের কাছে। কাঁধে হাত বুলিয়ে সাহস জোগায়। কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
জর্জরিত এই দুঃসময়ের অবশেষে সমাধান হলো আজ। একটা ফোন কল তার মুখে হাসি ফোটাল। কিছুদিন আগে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিল সে। সিলেক্ট করা হয়েছে, আগামীকাল থেকেই ডিউটিতে যোগদান করতে হবে। এসব কথাই বলেছিলেন ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি।
:: কটিয়াদি, কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়