বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার

আগের সংবাদ

বেপরোয়া চোরাচালান চক্র : স্থল, নৌ ও আকাশপথে আসছে হরেক চোরাই পণ্য, বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য পাচারও হচ্ছে

পরের সংবাদ

রুমীর ডেঙ্গু নিধন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুক্রবার এলেই খুব খুশি হয় রুমী। অবশ্য তার একটা কারণ আছে। শুক্রবার দিনটায় বাবাকে কাছে পাওয়া যায়। সকাল থেকে প্রায় সারাদিন। জুমার নামাজেও বাবার হাত ধরে মসজিদে যাওয়া যায়। পরিষ্কার পায়জামা-পাঞ্জাবি, টুপি ও আতর মেখে মসজিদে যাওয়া, মনটা আনন্দে খুব ফুরফুরে থাকে রুমীর। বেলী ফুলের সুবাসে ভরা আতরটা নাকের কাছে নিতেই সুখে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। রুমী এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ওর স্কুলের নামটিও খুব সুন্দর। শুকতারা বিদ্যা নিকেতন। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে অবস্থিত রুমীর এই প্রিয় ইশকুলটি।
সকাল থেকে বেশির ভাগ সময় বাবার সাথেই কেটে যায়। শুক্রবারে কয়েকটি পত্রিকা রাখেন বাবা। বেলকনিতে বসে বসে সেগুলো পড়তে থাকেন। শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকী বাবার খুব প্রিয় পাতা। রুমীর প্রিয় শিশুদের পাতা। কমিকস পড়তেও ভালো লাগে তার। মাঝেমধ্যে আম্মু চা অথবা নুডুলস নিয়ে আসেন। খুব ভালো সময় কাটে রুমীর। কিন্তু আজকের ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। আজ বেলকনিতে রুমীর দেখা নেই, বেশ পরে খেয়াল করলেন বাবা। কোথায় গেল রুমী! রুমীর মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করতেই হাসলেন তিনি। জানালার থাই গøাসটি সামান্য টেনে আঙুল দিয়ে সোজা নিচে দেখালেন। বললেন- ঐ যে দেখ, তোমার গুণধর ছেলেটি।
– কোথায়?
– ঐ তো নিচে। মালীর সঙ্গে মিলে কি যেন মহৎ কাজ করছে।
উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন রুমীর বাবা। হ্যাঁ। বিল্ডিংয়ের পেছনে পড়ে থাকা বিভিন্ন দ্রব্য পরিষ্কার করছে দুজন। বিভিন্ন প্রকারের লতাপাতায় স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে ওখানাটা। পড়ে আছে ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া বিভিন্ন প্যাকেট ও খোসা। অনেকগুলো খালি দইয়ের মালসা পড়ে আছে। পানিও জমে আছে অনেকটায়। চোখে পড়ল পানির বোতল, ডাবের খোসা, ভাঙা খেলনার অংশসহ নানান দ্রব্য।
জুলাই মাস শেষ হতে যাচ্ছে। চলছে ভরা বর্ষা মৌসুম। চারদিকে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, অথচ তার একটুও খেয়াল নেই! মনেমনে একটু যেন লজ্জিত হলেন রুমীর বাবা। খুব দ্রুত তিনতলা থেকে নিচে নামলেন তিনি। রুমী প্রথমে ভয় পেলেও উৎসাহ দিলেন বাবা। মালী ও রুমীর এমন অভিযানকে তিনি প্রশংসা করলেন, যোগ দিলেন তিনি নিজেও। এই মৌসুমে প্রত্যেক বাড়িতে এমন কাজটি করা উচিত। এডিস মশার বংশ নিধন করা খুব জরুরি। বললেন, এজন্য সচেতন হতে হবে সবাইকে।
হাস্নাহেনা গাছটির গোড়ায় পড়ে আছে একটি কোমল পানীয় বোতলের মুখ। এক চা চামচ পরিষ্কার পানি জমে আছে ওখানে। ওটাও নিজ হাতে ফেলে দিলেন রুমীর বাবা। বিষয়টি খেয়াল করেছে রুমী। বাবাকে বলল- জানো বাবা, মাত্র এক চা চামচ জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেও এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে।
– হ্যাঁ, এজন্যই তো ফেলনা বোতল, টায়ার, ফুলের টবের নিচের অংশ, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাইরে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। পরিষ্কার করতে হবে এসির ট্রে, ফ্রিজের ট্রে, ড্রামও। রুমী, তুমি কী জানো, এডিস মশা দেখতে কেমন হয়?
– হ্যাঁ বাবা, এডিস মশার শরীর ও পায়ে থাকে কালো ও সাদা রঙের ডোরাকাটা দাগ। এজন্যই অনেকে এটাকে টাইগার মশা বলেও ডাকে।
– এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়াতে পছন্দ করে। বিশেষ করে সকালে। এজন্য দিনের বেলায়ও ওদের কামড় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে এই মৌসুমে দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হবে।
– হ্যাঁ বাবা। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন একটি এডিস মশা কামড়ায় তখন ঐ মশাটিও ডেঙ্গুর বাহক হয়ে যায়, বিষয়টি কি অদ্ভুত, তাই না?
– হ্যাঁ, ঠিক। তুমি এত সুন্দর তথ্যগুলো কোথা থেকে জানলে?
– শফিক স্যার বলেছেন। এডিস মশাদের সম্পর্কে অ-নে-ক কিছু বলেছেন তিনি। এডিস মশাদের লার্ভা সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ‘পিউপা’তে পরিণত হয়। পিউপা বাঁচার পরিবেশ পেলেই দুই-তিন দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে উড়ে যায়।
দুপুরের রোদের তাপ বেড়েছে। হঠাৎ পাশের জামে মসজিদ থেকে আজান ভেসে এল। ইতোমধ্যে বাড়িটার চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষ হয়েছে। চারপাশের ড্রেনে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে শুরু করলেন মালী বশির চাচা। ঘামে বুকের কাছে গেঞ্জির খানিকটা ভিজে আছে রুমীর। সেদিকে তাকালেন বাবা। বললেন, চলো আমরা মসজিদে যাওয়ার জন্য গোসল সেরে তৈরি হয়ে যাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়