ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

অলস টাকার নিলাম : ১৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনার মধ্যে প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে থাকছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমতে কমতে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের অলস তারল্য কমিয়ে আনার জন্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ নিলামের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি আগস্টে ৫দিন অনুষ্ঠিত নিলামে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বিল বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে দুই দফায় ৭দিন মেয়াদি বিলে ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার বিল নিলামে বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৪দিন মেয়াদি বিলে ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা এবং ৩দিন মেয়াদি বিল নিলামের মাধ্যমে মোট ১০ হাজার ৭০ কোটি টাকার বিল নিলাম করে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে আমানত বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে প্রবাসী আয়। ফলে ব্যাংকগুলোতে টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে থাকছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমতে কমতে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তারা বলছেন, এদিকে ঋণের চাহিদা না থাকায় গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য (সিআরআর) সংরক্ষণের পর গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে একেবারেই অলস ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ তারল্য হাতে থাকার পরও তা কাজে লাগাতে না পারায় ব্যাংকগুলোকে এ অর্থ বিনিয়োগের জন্য গত ৯ আগস্ট থেকে পুনরায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ নিলাম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকার বিল কিনেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। অবশ্য নতুন করে স্বল্পমেয়াদি বিল নিলামের বিষয়টি গত ২৯ জুলাই চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির আভাস দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি জানান, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে অস্থিরতা তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ আগস্ট নিলামের প্রথম দিন ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কিনতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা নিয়ে হাজির হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম কমিটি ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বিল বিক্রি করে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার ৭ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ছিল শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ১১০০ কোটি টাকার ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদ ছিল শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরপর গত ১১ আগস্ট ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম হয়। ওই নিলামে ৪৭টি বিডের মাধ্যমে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার বিল কেনার আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ৪৩টি বিডে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার বিল বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার বার্ষিক সুদ নির্ধারণ করা হয় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
গত ১৬ আগস্ট ৭ দিন মেয়াদি বিলে ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল ব্যাংকগুলো। এছাড়া ১৪ দিন মেয়াদি বিল কেনার জন্য ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের। নিলামে অংশ নেয়া ব্যাংকগুলো বিলের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশের বেশি হারে সুদ দাবি করায় কোনো বিল বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ আগস্ট ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলামে ৫৩ বিডে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার আবেদন আসে। এর বিপরীতে বার্ষিক ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ সুদে ৪০০০ কোটি টাকার বিল বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সবশেষ গত ২৫ আগস্ট ৭ দিন মেয়াদি বিলে ৯টি বিডে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি ছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩টি বিডে বিল বিক্রি করে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। সুদের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত। একই দিন ১৪ দিন মেয়াদি বিল কিনতে ২৫টি বিডে ২ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ করার আবেদন করে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মধ্যে থেকে ২০টি বিড গ্রহণ করে যার বিল মূল্য ছিল ২ হাজার ৭ কোটি টাকা। সুদের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭১ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এছাড়া আগামী ৩১ আগস্ট ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলামের দিন ধার্য রয়েছে। এই দিনেও পর্যাপ্ত অলস তারল্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের হাতে বিপুল অলস টাকা রয়েছে। এ টাকার বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। এজন্য সুদহার কম হলেও এখানে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের কিছু মুনাফা হচ্ছে। আর অলস টাকা তুলে নিলে ব্যাংকগুলো আমানতে আগ্রহ দেখাবে। ফলে আমানতকারীরা লাভবান হবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়