১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুলছাত্র আব্দুর রহিমের

আগের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

পরের সংবাদ

এসএমই খাতে প্রণোদনার ঋণ বিতরণে বেহাল দশা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা গতিশীল রাখতে প্রথম ধাপে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় সরকার। পরবর্তীতে আরো ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছানোর দায়িত্ব পেয়েছে আটটি উন্নয়ন সংস্থা। তবে ছয় মাসে বিতরণ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম। শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত দুই সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক। বিশ্লেষকদের মতে, তুলনামূলক কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংস্থাকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের দায়িত্ব দেয়ায় পিছিয়ে রয়েছে কার্যক্রম।
জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে যে সুযোগ-সুবিধা দরকার, তার ব্যবস্থা করা। এসব কাজ আমরা নিয়মিত করতাম। এর পাশাপাশি আমাদের ক্লাস্টার উদ্যোক্তাদের জন্য ১৩০ কোটি টাকার একটি তহবিল ছিল। সেখান থেকে আমরা নিয়মিত ঋণ বিতরণ করতাম। ফলে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য এক ধরনের কাঠামো ছিল, অভিজ্ঞতাও ছিল আমাদের। আমাদের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে- সরকারের এমন সিদ্ধান্ত জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ ঋণ বিতরণের সমস্ত রোডম্যাপ তৈরি করি।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত কাঠামোগতভাবে এবং আমাদের অর্থিক পার্টনারদের সহযোগিতায় মাত্র দেড় মাসেরও কম সময়ে এ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আজই (সোমবার) আমরা বাকি ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ছাড়পত্র হাতে পেয়েছি। আশা করছি, আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই এ অর্থ আমাদের কাছে চলে আসবে। আমরা এ ঋণ কাদেরকে দিব, তা এরই মধ্যে তালিকা করেছি।
ড. মাসুদুর রহমান বলেন, আামদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রচুর অর্থসংস্থানের প্রয়োজন। আমাদের কাছে যে অর্থ দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। আমি মনে করি ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কম। ফলে আমরা যারা সরাসরি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করছি, এসব প্রতিষ্ঠানকে যদি আরো বেশি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এসএমই খাতের জন্য একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি।
করোনায় গত দেড় বছরে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। যাতে বড় ধাক্কা খেয়েছেন ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়েছে যে টিকে থাকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। তাদেরকে আবারো মূল কর্মকাণ্ডে ফিরিয়ে আনতে প্রথম ধাপে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় সরকার। কিন্তু ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের শর্ত থাকায় আওতার বাইরে থেকে যান অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেকে। সমস্যা সমাধানে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয় আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা; যা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছানোর দায়িত্ব পায় আটটি উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু সেখানেও নেই দক্ষতার ছাপ। ছয় মাসে বিতরণ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম। জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তই ছিল দুর্বল। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের ঋণ দেয়ার কোনো অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। একমাত্র বিসিক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এসএমই ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা এক্ষেত্রে ভালো করেছে।
তিনি বলেন, মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে ঋণ দিতে গেলে তাদের খরচ অনেক বেশি, প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। সুতরাং তারা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। একমাত্র ব্যাংকই পারে ৯ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করতে।
তাই অযথা এসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে কালক্ষেপণ করার কোনো দরকার নেই বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের হাতে দায়িত্ব দেয়ায় এ খাতে ঋণ বিতরণ কিছুটা হয়েছিল। আমি মনে করি এ দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো। ব্র্যাক ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে বলে জানান এ অর্থনীতিবিদ।
সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে লক্ষ্য করে গ্রামীণ এলাকার ঋণদান কার্যক্রম সম্প্রসারণের নিমিত্ত সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের দায়িত্ব দেয়া হয় আট প্রতিষ্ঠানকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়- এসএমই ফাউন্ডেশনকে ১০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) ৫০ কোটি টাকা, জয়িতা ফাউন্ডেশনকে ১০ কোটি টাকা, এনজিও ফাউন্ডেশনকে ১০ কোটি টাকা, সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনকে ১০০ কোটি টাকা, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনকে ১০০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে ৫০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে ১৫০ কোটি টাকা। গত এপ্রিলে সর্বমোট ৫৭০ কোটি ছাড়কৃত টাকার মধ্যে ঋণ দিতে পেরেছে মাত্র ২৭৬ কোটি। এর মধ্যে শতভাগ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই সংস্থা- এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক। আর এই সময়ের মধ্যে কোনো ঋণ বিতরণই করতে পারেনি তিন সংস্থা- জয়িতা ফাউন্ডেশন, এনজিও ফাউন্ডেশন ও পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন। এছাড়া সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ১০০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করেছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ৫০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করেছে ২৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করেছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রান্তিক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সংস্থার অভিজ্ঞতা কম। ফলে পরিকল্পনার সঙ্গে মেলানো যায়নি মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা। এমন অবস্থায় বিতরণ কৌশলে বদল আনার পাশাপাশি সার্বিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে জোর দিচ্ছেন নজরদারির ওপরও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়