×

জাতীয়

প্রতিবেদন

পরিবারে পানি সংগ্রহে ৭৫ শতাংশ দায়িত্ব পালন করে নারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম

পরিবারে পানি সংগ্রহে ৭৫ শতাংশ দায়িত্ব পালন করে নারীরা

বৃহস্পতিবার ওয়াটারএইডের ব্যবস্থাপনায় গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচকরা

পরিবারে পানি সংগ্রহ ও স্বাস্থ্য সংরক্ষণে নারীদের দায়বদ্ধতাই বেশি। পানি সংগ্রহের সময় সহিংসতার শিকারও হচ্ছেন তারা। ওয়াটারএইডের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পানি সংগ্রহের প্রাথমিক দায়িত্ব (৭৫ শতাংশ ৩ শতাংশ)  ও স্বাস্থ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব (৭৯ শতাংশ) বহন করেন নারী ও কিশোরী মেয়েরা। 

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, নিজের পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহের কাজটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই করে থাকেন, যেখানে এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ এবং প্রতিদিন এ কাজের পেছনেই তাদের অনেক সময় ব্যয় হয়। গতানুগতিক জেন্ডার ভূমিকার কারণে নারীদের উপর পরিবারের কাজ এবং পানি সংগ্রহ করার দায়িত্ব চলে আসে। প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে ৬৬ শতাংশ নারী মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ও ১৪ শতাংশ শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। 

সুইডেনের দূতাবাসের আর্থিক সহযোগিতায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রকল্প ‘ওয়াশ ফর আরবান পুওর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবায় লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, নারী ও মেয়েরা বাড়ির বাইরে টয়লেট ব্যবহার করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করেন। 

আরো পড়ুন: ধর্ষণের ২২ বছর পর ধরা পড়লেন ব্যবসায়ী

বাংলাদেশে নারীদের পানি সংগ্রহে দীর্ঘ সময় ব্যায় করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬২ শতাংশ নারী ৫০০ থেকে এক হাজার মিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করেন। ২৩ শতাংশ নারীরা ১ কিলোমিটার বেশি দুরত্ব থেকে পানি সংগ্রহ করে।

রাজধানীর বনানীর রয়েল পার্ক হোটেলে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের মনিটরিং, ইভালুয়াশন, রিসার্চ এবং লার্নিং ম্যানেজার মো. মাহাদী হাসান। তিনি জানান, গবেষণাটি চারটি সিটি কর্পোরেশন এবং তিনটি পৌরসভায় নিম্ন আয়ের কমিউনিটিতে পরিচালিত হয়। ৫৫০টি পরিবারকে যুক্ত করা হয় - যেখানে ৩৩০ জন নারী এবং ২২০ জন পুরুষ ছিলেন।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রায় ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে টয়লেট ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ নারী বলেন, নারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না। এছাড়া, প্রায় সবাইই (৯৩ শতাংশ) জানান যে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় সুবিধা বর্তমান টয়লেটে নেই। 

আরো পড়ুন: যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজসেবা উত্তম কাজ: ধর্মমন্ত্রী

জেন্ডারভিত্তিক পক্ষপাতের কারণে নারীরা জীবিকা উপার্জনে সময় ব্যয় করতে পারে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই সমস্য সমাধানে ওয়াটারএইড কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলোর হচ্ছে- জাতীয় নীতি, আইন ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে জেন্ডার সমতার দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা এবং তার নিয়মিত চর্চা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে জেন্ডারভিত্তিক সেবা এবং জলবায়ু-সহনশীল ওয়াশ উদ্যোগ আরো বৃদ্ধি করা, যেকোনো প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক জেন্ডার চেকলিস্ট এবং সেই সম্পর্কিত নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা, টেকসই ওয়াশের জন্য সামাজিকভাবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

এই বিষয়ে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, নারীদের উন্নতি ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার জন্য দৃষ্টিভঙ্গী এবং সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে হবে। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সব স্তরে এবং সব পর্যায়ে, নারীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

সুইডেন দূতাবাসের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সমাধান আমাদের হাতের মুঠোয়, আমাদের শুধু একটি ন্যায্য এবং সমতার সমাজ নিশ্চিত করতে হবে যেখানে সব লিঙ্গের মানুষ সমান সেবা এবং অধিকার পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App