×

আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরায়েল: শক্তিতে কে এগিয়ে?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৪ এএম

ইরান-ইসরায়েল: শক্তিতে কে এগিয়ে?

ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। আইডিএফ জানায়, ইরান ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বের নজর এখন ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতির দিকে। ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েলের পদক্ষেপ কী হবে সেটি নিয়েও উদ্বিগ্ন বিশ্ব। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু বেধে যায় কি না এ নিয়ে চিন্তিত সবাই। কারণ সক্ষমতার দিক থেকে তুলনা করলে দেখা যায় দুটি দেশই সামরিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরান সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইসরায়েলের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে আছে। তবে দুটি দেশই বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশের শীর্ষ কুড়িটি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে র‍্যাংকিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।

সামরিক শক্তির তুলনা

প্রতিরক্ষা খাতে ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তবে বাৎসরিক সামরিক বাজেটে ইরানের তুলনায় ইসরায়েলের ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট হলো ২৪৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ইরানের বাজেট ৯৯৫ কোটি ডলার। এই র‍্যাংকিংয়ের ১৪৫ দেশের মধ্যে ইরান ৩৩তম অবস্থানে আর ইসরায়েল ১৯ তম অবস্থানে রয়েছে।

সেনা সদস্য

ইরানের সেনাবাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসে মোট ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে। ইসরায়েলের নিয়মিত সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাদের রিজার্ভ সেনার সংখ্যাও বেশি।

আর্থিক সক্ষমতা

ইরানের সামরিক খাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ৯৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে ৩৩তম। বিপরীতে এই খাতে ইসরায়েলের বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে ১৯তম। তবে, বৈদেশিক ঋণ ও ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে ইরানের চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ইসরায়েল।

আকাশ প্রতিরক্ষা

ইরানের মোট যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৫১টি, যা ইসরায়েলের চেয়ে ৬১টি কম। ২৪১টি জঙ্গি বিমান নিয়ে বিশ্বে দশম অবস্থানে আছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ১৮৭টি জঙ্গি বিমান নিয়ে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম। বিমান হামলা বা ডেডিকেটেড অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। অন্যদিকে ইরানের অবস্থান ৩১তম। সামরিক পরিবহনের জন্য ইসরায়েলের আছে ১২টি উড়োজাহাজ। অন্যদিকে ইরানের আছে ৮৬টি। ইসরায়েলের কাছে প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ১৫৫টি, বিপরীতে ইরানের আছে ১০২টি। স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফটের দিক দিয়ে বিশ্বে ইসরায়েলের অবস্থান ১৫কম, অন্যদিকে ইরানের অবস্থান ২৫তম। ইসরায়েলের হেলিকপ্টার ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪৬টি ও ৪৮টি। অন্যদিকে ইরানের আছে যথাক্রমে ১২৯ ও ১৩টি।

স্থল শক্তি

ট্যাংক শক্তির হিসাবে ১ হাজার ৯৯৬টি ট্যাংক নিয়ে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ১২তম এবং ১ হাজার ৩৭৯টি ট্যাংক নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ১৮তম। অস্ত্রসজ্জিত যানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইরান। ইরানের অস্ত্রসজ্জিত যান আছে ৬৫ হাজার ৭৬৫টি এবং ইসরায়েলের আছে ৪৩ হাজার ৪০৭টি। তবে সেলফ-প্রোপেলড আর্টিলারির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের চেয়ে পিছিয়ে ইরান। এই হিসাবে ১১তম স্থানে থাকা ইসরায়েলের আর্টিলারি রয়েছে ৬৫০টি এবং ১৩তম স্থানে থাকা ইরানের আছে ৫৮০টি। টোয়েড আর্টিলারির দিক থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ইরান। র‍্যাংকে ৭ নম্বরে থাকা ইরানের আছে ২ হাজার ৫০টি এবং ইসরায়েলের আছে ৩০০টি। মোবাইল রকেট প্রজেক্টরের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইরান। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইরানের ৭৭৫টি প্রজেক্টরের বিপরীতে ৩১তম অবস্থানে থাকা ইসরায়েলের প্রজেক্টর ১৫০টি।

নৌ শক্তি

১০১টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বিশ্বে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে ইরান। অন্যদিকে ৬৭টি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ৪৬তম। যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ, হেলো ক্যারিয়ার ও ডেসট্রয়ারের সংখ্যার দিক থেকে ইরান ও ইসরায়েল একই অবস্থানে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই তাদের সক্ষমতা শূন্য। ইসরায়েলের ৫টি সাবমেরিনের বিপরীতে ইরানের আছে ১৯টি। সাবমেরিনের হিসাবে ইসরায়েলের অবস্থান ১৯ ও ইরানের অবস্থান ৭। ৭টি ছোট যুদ্ধজাহাজ বা ফ্রিগেটস নিয়ে র‍্যাংকে দশম অবস্থানে থাকা ইরানের বিপরীতে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিগেট সংখ্যা শূন্য। ১০টি করভেট নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান বিশ্বে দশম এবং ৩টি নিয়ে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে ইরান। পেট্রোল ভেসেলসে এগিয়ে ইসরায়েল। দেশটির ৪৫ ভেসেলের বিপরীতে (র‍্যাংক ২২) ইরানের আছে ২১টি (র‌্যাংক ৪০তম)। তবে, বিভিন্ন ধরনের মাইনের ক্ষেত্রে এগিয়ে ইরান। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ২১তম এবং ইসরায়েলের অবস্থান ১৪৫তম৷

লজিস্টিকস

এয়ারপোর্টের সংখ্যায় ইসরায়েলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ইরান। ইরানের ৩১৯টির বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৪২টি এয়ারপোর্ট।মার্চেন্ট মেরিনেও এগিয়ে ইরান। দেশটির মার্চেন্ট মেরিনের সংখ্যা ৯৪২টি (২০তম), অন্যদিকে ৮৭তম অবস্থানে থাকা ইসরায়েলের আছে ৪৫টি। বন্দর ও টার্মিনালের সংখ্যায় প্রায় সমান দেশ দুটি। ইরানের আছে ৪টি বন্দর ও টার্মিনাল। অন্যদিকে ইসরায়েলের আছে ৫টি।

প্রাকৃতিক সম্পদ

ইসরায়েল প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে কোনো জ্বালানি তেল উত্তোলন করে না। যেখানে প্রতিদিন ইরান উত্তোলন করে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল। এ ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান নবম। প্রুভেন অয়েল রিজার্ভের ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। তাদের প্রুভেন রিজার্ভ ২১ হাজার কোটি ব্যারেল। আর ইসরায়েল ১ কোটি ২৭ লাখ ব্যারেল প্রুভেন রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বে ৭১তম অবস্থানে আছে। ইসরায়েলের কোনো কয়লার খনি নেই। যেখানে ইরান কয়লা উত্তোলনের দিক থেকে বিশ্বে ৪৩তম। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয়, যেখানে ইসরায়েলের অবস্থান ৪০তম।

ভৌগলিক অবস্থান

পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের আয়তন ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ কিলোমিটার এবং ইসরায়েলের আয়তন ২১ হাজার ৯৩৭ বর্গকিলোমিটার। ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরাক, তুরস্ক, আরমেনিয়া, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে। অপরদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিশর, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননের। বিশ্বে ১০৮তম অবস্থানে থাকা ইরানের অন্য দেশের সঙ্গে সীমানার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯৪ কিলোমিটার। ইসরায়েলের আছে ১ হাজার ৬৮ কিলোমিটার। ইসরায়েলের উপকূলীয় সীমানা আছে মাত্র ২৭৩ কিলোমিটার এবং বিশ্বে এর অবস্থান ১৩তম। অন্যদিকে ইরানের উপকূলীয় সীমানা আছে ২ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার এবং বিশ্বে অবস্থান ৬৬তম। জলপথের ক্ষেত্রে ইরান এগিয়ে আছে বেশ বড় ব্যবধানে। মরুর দেশ ইরানের আছে ৮৫০ কিলোমিটার জলপথ, যেখানে ইসরায়েল জলপথ শূন্য।

পারমাণবিক অস্ত্র

ইরান এবং ইসরায়েল—কোনো দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের সংগঠন ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের অনুমান, ইসরায়েলের হাতে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। এমনকি, গত বছর নভেম্বরের শুরুর দিকে রেডিওতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু বলেন, চলমান যুদ্ধে গাজায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ একটি বিকল্প হতে পারে। তার এই বক্তব্যের অর্থ হলো, ইসরায়েলে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছে। বিপরীতে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই এবং তারা এটি তৈরিও করছে না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে কি না, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

এক কথায় বলা যায়, কেবলমাত্র আকাশ প্রতিরক্ষা, ভৌগলিক অবস্থান ও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাবে ইরানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। আর ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে জনসংখ্যা, স্থল শক্তি, নৌ শক্তি, লজিস্টিক, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে। যদিও সামরিক শক্তিমত্তার এই তুলনার পাশাপাশি এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। 

আরো পড়ুন:

টাইমলাইন: ইরান–ইসরায়েল উত্তেজনা

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App