পদ্মার শাখা নদীতে ভাঙনের তীব্রতা, বিলীন হচ্ছে দোকান-বাড়িঘর
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই বল আমারে তোর কি আর কুল কিনারা নাই। আব্দুল আলিমের কণ্ঠে গাওয়া গানটি শুনলেই পদ্মার নিষ্ঠুরতার করুন দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে।
মুন্সিগঞ্জের পদ্মার শাখা নদীতে ভাঙ্গনের ব্যাপক তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে নিমিষেই চোখের সামনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর সহ বহু পুরোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
গেলো কয়েক ’দিনে পদ্মা শাখা নদীর ভাঙ্গনে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দীঘিরপাড় বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ও বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। গেল বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙন শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। টানা কয়েকদিনের ভাঙনের কবলে দিঘীরপাড় বাজারের অন্তত ১৭ -২০ টি দোকানঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ওই বাজার পুরোটাই এখন ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় অনেকেই দোকানঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
সরজমিনে রবিবার বেলা ১২ টার দিকে দীঘিরপাড় বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্রোতের তীব্রতায় শাখা নদীর তীরের মাটি ভেঙ্গে আঁছড়ে পড়ছে। বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে বাজারের তীরঘেষা দোকানপাটের ভিটেমাটি পড়ছে নদীর বুকে। বাজারের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকের ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গনের চিত্র চোখে পড়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ভাঙ্গনের মুখে বাজারের কামারপট্টির ৭ টি দোকানঘর, ২ টি পাটের আড়ত, ২ টি সারের দোকান ও ৪ টি মুদি দোকানঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন কামার গৌতম মন্ডল, দিলীপ মন্ডল, অনীল মন্ডল, সুনীল মন্ডল, শ্যামল মন্ডল, উত্তম মন্ডল ও কালু মন্ডল। এছাড়া ভাঙ্গনে অলি ব্যাপারী ও আলমাছ বেপারীর পাটের আড়ত এবং নজির হালদারের ২ টি সারের দোকান বিলীন হয়েছে। আরো দোকান হারিয়েছেন ৪ মুদি দোকানি।
এদিকে, ভাঙন প্রতিরোধে চলমান থাকা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে চলার কারণেই এ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছেন বলে অভিযোগ বাজারের দোকানদের। তারা জানান, আড়াই যুগ ধরেই পদ্মা ও পদ্মার শাখা নদীতে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন চলে আসছে। এতে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় বছর দুয়েক আগে।
আরো পড়ুন: এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১
জানা গেছে, জেলার লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার পর্যন্ত পদ্মা তীরে ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মে মাসে। দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণে কয়েকটি ভাগে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। এরমধ্যে দীঘিরপাড় বাজার ঘেঁষে বাঁধ নির্মাণ করছে সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নদীর তীরে জিও ব্যাগ ফেলে ও ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
দীঘিরপাড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাইজুদ্দিন ব্যাপারী বলেন, বর্ষা এলেই এখানে ভাঙন দেখা দেয়। অথচ শুষ্ক মৌসুমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টুকিটাকি করে বাঁধ নির্মাণ কাজ করে আসছে। আমরা এক মাসে আগেও অনুরোধ করেছি ব্লক ফেলে এখানে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য। আমাদের কথা কর্ণপাতই করেনি। আজকের মধ্যে যদি জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলা হয় তাতেও বাজারটি রক্ষা পাবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন বলেন, আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত আমাদের কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজেই যথা সময়েই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। আকস্মিক ভাঙন ঠেকাতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম ভোরের কাগজ কে জানান, আর্থিক বরাদ্দসহ কিছু জটিলতা থাকার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে বর্তমানে আকস্মিক ভাঙন ঠেকাতে প্রতিষ্ঠানটিকে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ট্রলারে রাখা আছে। তীব্র স্রোতের কারণে জিও ব্যাগ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।