×

সারাদেশ

চৌগাছায় চুক্তি ছাড়া কাজ করে না রাজ্জাক, ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল!

Icon

জিয়াউর রহমান রিন্টু, চৌগাছা, যশোর থেকে

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৮ পিএম

চৌগাছায় চুক্তি ছাড়া কাজ করে না রাজ্জাক, ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল!

ঘুষের টাকা গুনে নিচ্ছে ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুর রাজ্জাক

চুক্তি পরবর্তী ঘুষের টাকা অর্ধেক অগ্রিম না দিলে কাজ করেন না যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমের একটি ভিডিওতে একজন সেবাপ্রার্থীর নামজারি করার চুক্তির টাকা ক্যালকুলেটরে মিলিয়ে হিসেব করে নেয়ার সময় তাকে এ কথা বলতে শোনা যায়। 

ভিডিওতে আব্দুর রাজ্জাক বলছেন,“ আপনার এই কাজ করতে এই অফিস থেকে উপজেলা সদরে ভূমি অফিসে আমাকে ১৪ বার যাতায়াত করতে হয়। সেসব মিলিয়ে এবং আমার জোনের দাম (শ্রমের দাম) এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে কিছু না দিলে হয়? আর দরদামের টাকা মাজা পর্যন্ত (চুক্তির অর্ধেক) না দিলে তো কাজই শুরু হবে না। এসব কাজ করতে সরকার বা অফিস আমাকে কোনো বাকি দেয় না”। সেবা প্রার্থিকে তিনি বলছেন আপনার চাচা যে হাঙ্কিপাঙ্কি করেছে তাতে মনে করেছিলাম কাজই করবো না। তবে আপনার কথাবার্তা আমার ভালো লেগেছে তাই ৬ হাজারের মধ্যে অর্ধেক নিয়েই শুরু করেছি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ মার্চ স্বরুপদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব জাহাঙ্গীর আলমের ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ২৫ মার্চ নামজারিতে ঘুষ দাবী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরবর্তীতে তিনি বহিস্কার হন। 

আরো পড়ুন: সালথায় হতদরিদ্রের মধ্যে পুলিশের ঈদ উপহার বিতরণ

এদিকে গত ২৭ মার্চ সরেজমিনে নারায়নপুর ভূমি অফিসে গেলে নায়েব আব্দুর রাজ্জাককে অফিসে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি বাজার করে বাড়িতে চলে এসেছি। আজকে আর অফিসে আসছি না। তখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বাড়ি যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলা সদরে একটা মিটিং ছিলো। সেটা শেষ করে বাজার করে বাড়িতে এসেছি। 

পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নারায়নপুর ভূমি অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক অপেক্ষার পরে বেলা ১২টার পরে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) গুজ্ঞন বিশ্বাসকে ফোন করে নায়েবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সেতো আমার কাছ থেকে কোনো ছুটিও নেয়নি বা আমাকে কিছুুই জানায়নি। নায়েব রাজ্জাককে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও এবং তাকে নিয়মিত অফিসে পাওয়া যায়না বলে স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে জানাবেন বলেও জানান।

অফিসে থাকাকালিন সেবা প্রার্থী টেঙ্গুরপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, আমার একটা জমি দখলমুক্ত করতে আদালতের আদেশনামা সত্বেও নায়েব রাজ্জাক আমার কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে ৫ হাজার টাকা দিই। কিন্তু তিনি বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আমার কাজটি করে দিচ্ছেন না। 

আরো পড়ুন: বাংলাদেশে আবারো ঢুকে পড়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

ভূমি অফিস সংলগ্ন ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন এই নায়েবের দূর্নীতির কোনো সীমা নেই। এ অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়না। এছাড়া নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন তদন্ত টাকার বিনিময়ে নায়েব রাজ্জাক ওলটপালট করে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। বুন্দলিতলা গ্রামের নজরুল বলেন আমার একটি জমির নাম পত্তন করতে নায়েব ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। 

স্বরুপদহ ইউনিয়ন নায়েব আসলাম হোসেন বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ি ১১৭০ টাকায় মিলবে নাম পত্তন। এর বাইরে ১টি টাকা নেয়াও অবৈধ।

নায়েবের দূর্নীতির বিষয়ে নারায়নপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিনুর রহমান শাহিন বলেন, তার মতো দূর্নীতিগ্রস্ত নায়েব আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। তার লোভের কাছে ইউনিয়নবাসি অসহায় বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App