×

সারাদেশ

খুঁড়িয়ে চলছে শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৫ এএম

খুঁড়িয়ে চলছে শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি

ছবি: ভোরের কাগজ

খুঁড়িয়ে চলছে শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি
খুঁড়িয়ে চলছে শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি

উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র শান্তিগঞ্জ কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স পোনা ও রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে জেলাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হ্যাচারিটি। তারপরও বিগত বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।

১৯৯৬ সালে সরকার দ্বিতীয় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেণু উৎপন্ন করে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছড়িয়ে দিতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এ কমপ্লেক্স নির্মাণ করে। এটি ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় সুনামগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় আরো দুটি কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়। সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সাবেক দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকায় ১৯৯৬ সালে ‘কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স’ স্থাপিত হয়। এখানে রেণু ও পোনা উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ একর ভূমির ওপর গড়ে তোলা এ হ্যাচারি কমপ্লেক্সে ১৩ একরজুড়ে ছোট-বড় ১৮টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া একটি হ্যাচারি বিল্ডিং, চারটি সার্কুলার ট্যাংক, পাঁচটি সিস্টার্ন ট্যাংক, একটি ডরমেটরি হাউস, একটি গুদাম, একটি অফিস ভবন ও একটি আবাসিক ভবনসহ মৎস্য ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে।

জানা গেছে, এখানে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৮টি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ আছে। এর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৩ জন কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হ্যাচারি কর্মকর্তা, একজন অফিস সহকারী ও ১ জন ফিশারম্যান কাম গার্ড। বাকি ১৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মূল ফটকেও কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজিকে লোকবল সংকট নিরসনের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও নতুন লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় সংকট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে লক্ষ্যমাত্র অর্জন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচটি সার্কুলার ট্যাংক, চারটি সিস্টার্ন ট্যাংক অকেজো পড়ে আছে। লোকবল সংকটের কারণে অধিকাংশ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, গণিয়া, দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, সিলভার, বিগহেড, গ্রাসকার্প, থাই সরপুঁটি, তেলাপিয়ার মধ্যে মনোসেক্স, তেলাপিয়া, গলদা চিংড়ি (জুবেনাইল) ইত্যাদি মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করার কথা থাকলেও লোকবল সংকটে তা করা হচ্ছে না।

জানা যায়, বর্তমানে হ্যাচারিটিতে আর্থিক সাল অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫০ কেজি রেণু, বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ উৎপাদনসহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ১৯ লাখ ২ হাজার ৭৫ টাকা। বর্তমানে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হ্যাচারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হ্যাচারিটিতে বহিরাগত জনবল দিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও হ্যাচারীর ৩টি কোয়ার্টার ভবন, একটি আবাসিক কোয়াটার্স প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হ্যাচারিটির অধিকাংশ ভবনের দেয়ালের প্রলেস্তরা ঝরে পড়ছে, দরজা, জানালা ভেঙে গেছে। আশু মেরামত করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হ্যাচারি কর্মকর্তা।

হ্যাচারিতে কর্মরত অফিস সহকারী আজিম বলেন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে হ্যাচারির কোয়ার্টারে বসবাস করি। দিনরাত নেই, লোকবল সংকট থাকলেও কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে আরো গতিশীল করা হলে এলাকাবাসী উপকৃত হতেন।

কার্প হ্যাচারি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, হাওর এলাকায় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। বর্তমানে একটি লাভজনক পেশা। মাছ উৎপাদনে হাওর এলাকায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন। সুনামগঞ্জ জেলা মাছ চাষে উর্বর ভূমি। সুনামগঞ্জসহ সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর উপজেলার লোকজন এখান থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করেন। লোকবল সংকট দূর হলে উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরো বৃদ্ধি পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App