মিরসরাইয়ে বন্যায় পানিবন্দি ৭০ হাজার পরিবার
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
ছবি : ভোরের কাগজ
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর ছাগলনাইয়া হয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বুধবার বিকেল থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনভর পানিতে নিমজ্জিত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী, ধুম ইউনিয়নের শুক্রবারইয়াহাট, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও বন্যার পানি বাড়তেছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠে যাওয়ায় সুইচগেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী অংশে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে।
আরো পড়ুন : হাটহাজারীতে প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে এবং ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও শত শত মাছের পুকুর ডুবে গেছে। বুধবার বিকাল থেকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে কিছু কিছু এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালেও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকলেও দুপুরের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্ধার কাজে নামতে দেখা গেছে।
সংগীত শিল্পী ও স্বেচ্ছাসেবক মহিবুল আলম আরিফ জানান, পশ্চিম জোয়ার ও আজমনগর গ্রামের পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মহামায়া লেক থেকে বোট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলার ধুম ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মেজবা উল মানিক জানান, এলাকার ইয়াহাট ও মিনাবাজার এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে। এখানে আমরা নিজেদের উদ্যোগে দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার ও তাদের খাবারের বন্দবস্ত করার তাগিদ দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বন্যাদুর্গতদের মাঝে আমরা শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মিরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২ হাজর ৫’শ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। মিরসরাই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে মনোনিবেশ করেছে।