ব্রেকিং |
রামগড়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই কিশোর খুন
রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:১২ এএম
ছবি : ভোরের কাগজ
খাগড়াছড়ির রামগড় এক সপ্তাহের ব্যবধানে গালাগালি ও মারধরের অজুহাতে দুই কিশোর খুন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১লা আগস্ট রামগড় উপজেলার ১নং ইউনিয়নের লালছড়ি এলাকায় মো. শাহ আলম এর ছেলে ছায়েদুল ইসলাম (১৪) হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হন। অপরদিকে, গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ওয়াইফাপাড়া বাড়ির নিচে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে একজনকে হত্যা করা হয়। নিহত ওই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে ফাহিম হোসেন মজুমদার (১২)।
উপজেলার লালছড়িতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটকব্যক্তি হলেন, ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার এন্তাজ মিয়ার ছেলে নুরুল আবছার (২৭)। নিহতের বাড়িতে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। ওয়াইফাপাড়া গ্রামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতরা হলেন, একই গ্রামের মুমিনউল্লাহের ছেলে মো. মাঈনউদ্দিন (১৭), নুরুল আমিনের ছেলে আসাদ উল্ল্যাহ গালিব (১২)। অন্য দুই সহযোগী হলেন, শফিকুল ইসলামের ছেলে আজাদ হোসেন উছাইদ (১৬) এবং মীর হোসেনের ছেলে মো. আল ফাহাদ (১৫) কে এলাকাবাসী আটক করে ইউপি সদস্য ও সমাজ প্রতিনিধিদের জিম্মায় স্থানীয় একটি পাড়া কেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তায় পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত মাঈন উদ্দিন এবং গালিব জানান, গত কয়েক দিন আগে নিহত ফাহিমের সাথে তার কথা কাটাকাটি হলে ফাহিম মাঈন উদ্দিনকে গালাগালি ও মারধর করে। এজন্য পরবর্তীতে মাঈন উদ্দিন ফাহিমের উপর প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যা করার জন্য উছাইদ, ফাহাদ ও গালিবকে সঙ্গে নিয়ে চারজন মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে গত ৬ আগষ্ট মঙ্গলবার সকালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঈন উদ্দিন গালিবকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশে একটি টিলার নিচে তাদের বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড ও মাদকদ্রব্য সেবনের আস্তানায় নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন : থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রে চলছে ছিনতাই ও লুটতরাজ
পরে সেখানে থাকা পুকুরে গোসলের নাম করে মাঈন উদ্দিন, গালিব তারা দুজনেই ফাহিমকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে নামেন এবং মাঈন উদ্দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী গালিবকে কোনো লোকজন আসতেছে কিনা দেখার জন্য পাহারা দিতে বলে ফাহিমকে পিছন থেকে পানির নিচে ডুবিয়ে ধরে। একসময় ফাহিম যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায় তখন পুকুর থেকে উপরে উঠিয়ে টেনে হিঁচড়ে পাশে টিলার মাঝে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের লতা দিয়ে বাঁধার পরও যখন লাশ গোপন করতে পারছে না, তখন মাঈন উদ্দিন ফাহিমকে মেরে ফেলেছে বলে উচাইদ এবং ফাহাদকে জানায় এবং তাৎক্ষণিক একটি কোদাল নিয়ে আসতে বলে। যখন কোদাল নিয়ে তারা আসতে রাজি না হওয়াতে পরবর্তীতে লাশটিকে আবারো পাহাড় থেকে নিচে এনে পুকুরের এক কোণে ফেলে রেখে মাঈন উদ্দিন ও গালিব পালিয়ে যায় বলে জানান তারা।
নিহত ফাহিমের চাচা রুবেল হোসেনসহ এলাকাবাসী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফাহিমকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে এমনকি বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। এসময় ফাহিমের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদটি মূহুর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত ৯টার সময় কয়েকজন মহিলা মিলে ওই পুকুরের পাশ দিয়ে ফাহিমকে খোঁজতে গেলে তখন তারা পুকুরের এক কোণে ফাহিমের লাশটি দেখতে পান।
পরে লাশটি ওখান থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সবাই ভেবে নিয়েছেন যে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু তখনো কেউ জানতেন না ফাহিমকে যে হত্যা করা হয়েছে। পরে ফাহিমের বাবার সন্দেহ হয় যে তার ছেলের গায়ে গেঞ্জি ও পায়ের জুতা কোথায় তখন এগুলো খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে হত্যায় ব্যবহারকৃত আলামত সমূহ যার প্রেক্ষিতে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে এলাকাবাসীর সহযোগিতার আটক করা হয়েছে।
অপরদিকে, গত ১লা আগস্ট উপজেলার লালছড়িতে নিজ ঘরে বেড়াতে আসা দুরসর্ম্পকের চাচার লাথিতে অণ্ডকোষে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয় ছায়েদুল ইসলামের। পরে চাচা নুরুল আবছার লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে বাহিরে চলে যায়। এসময় নিহতের পিতামাতা বাড়িতে ছিলেন না। পরদিন সন্ধ্যায় লাশের ময়নাতদন্ত হলে জানা যায় এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার চারদিন পর বাড়িতে মেজবান দিলে বেড়াতে আসা দুরসম্পর্কের চাচা ভাত না খেয়ে বেগ গুচিয়ে চলে যেতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে। পরে তাকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিহতের বাড়িতে আটকে রাখা হয়।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হানিফ ও ইসমাইল হোসেন বলেন, এদের আটক করে তাৎক্ষণিকভাবে রামগড় থানা পুলিশসহ সেনাবাহিনীকে খবর দিয়েছি। তবে বর্তমান দেশের পরিস্থিতিতে পুলিশ আসতেছে না তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে তিনি বলেছেন তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য। পরিস্থিতি ঠিক হলে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হবে। এজন্য আটককৃতদের নিরাপত্তার জন্য আমরা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় একটি টিম গঠন করেছি।