×

সাহিত্য

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চিঠি প্রেমীদের মিলনমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩৬ পিএম

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চিঠি প্রেমীদের মিলনমেলা

বুধবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ক্রেয়ন ম্যাগের আয়োজনে অসময়ের ডাক শীর্ষক তিন দিনের চিঠি উৎসব। ছবি: ভোরের কাগজ

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও, আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও, এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো, অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।

কবি মহাদেব সাহার এই পঙ্ক্তির মতোই, চিঠি নামের ছোট শব্দটায় লুকিয়ে থাকে অজস্র অনুভূতির অনুরণন, আনন্দের কোলাহল, হৃদয়ের গভীরে লুকানো দীর্ঘশ্বাস। ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে হলুদ খাম, কিংবা ক্রিং ক্রিং শব্দ করে সাইকেলে চেপে আসা ডাক পিয়নের চিঠি বিলি করার দিন আজ অতীত। এই ভার্চুয়াল কিংবা মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তার যুগে কেউ আর লেখে না কাউকে। অসময় যাচ্ছে হাতে লেখা ডাকের চিঠিতে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে অস্থির গতিময়তার ফলে অসময় যাচ্ছে এখন আমাদের পৃথিবীরও। তাই তো এই অসময়ের ডাক। প্রযুক্তির এই যুগে হারিয়ে যেতে বসা চিঠির কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই ক্রেয়ন ম্যাগ আয়োজন করল অসময়ের ডাক শীর্ষক তিন দিনের অনন্য চিঠি উৎসব।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের তৃতীয় তলার চিত্রশালায় আয়োজিত চিঠি উৎসবে পা রাখতেই ভেসে এল তরুণ কণ্ঠের উচ্ছ্বসিত সুরধ্বনি। আয়োজক তরুণদের গানের সুর আর বাজনার তালে তালে দুলছিল দেয়ালে টাঙানো হরেক রঙা চিঠি। প্রদর্শনীর আবেগমাখা কথামালার সেসব চিঠি মুহূর্তেই নিয়ে গেল অজানা অনুভূতির জগতে।

যেখানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন সংসদ সদস্য অ্যারমা দত্ত, বিশেষ অতিথি ছিলেন সালমা আদিল ফাউন্ডেশন ও টপ অপ মাইন্ড এর প্রতিষ্ঠাতা লায়ন সালমা আদিল এম জে এফ, কবি ভাস্কর চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন দোলনচাপা দত্ত। ধন্যবাদ দেন ক্রেয়ন ম্যাগের প্রতিষ্ঠাতা তানজিরাল দিলশাদ দিতান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অ্যারমা দত্ত বলেন, এক সময় চিঠি লেখা ছিল যোগাযোগের একমাত্র ঐতিহ্য। সেটা আমাদের জীবনের সৃজনশীল জায়গা। চিঠি ছিল ভাবনা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল। মনের ভেতরের আবেগ ফুটে ওঠে চিঠিতে। সেটা মেইলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ছোটবেলায়ও দেখেছি চিঠিই ছিল বিশ্বে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আর ডাকঘর ছিল সবচে বড় প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, চিঠির মধ্য দিয়ে এ দেশে যারা আসল মুক্তিযোদ্ধা, আসল ধর্ষিতা তাদের গল্পগুলো তুলে আনারও আহবান জানান। যা হবে মুক্তিযুদ্ধের নির্ভরযোগ্য তথ্য।

সালমা আদিল বলেন, পোস্ট অফিস হয়ে গেছে জাদুঘরের মতো। হতেই পারে আমরা ডিজিটাল যুগে আছি। ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগমাধ্যমটির কথা ভুলে যাবো!

তিনি বলেন, যে চিঠির সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। বাংলা সাহিত্যের একটি অংশও পত্রসাহিত্য। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষ চিঠির বিষয়টি প্রায় ভুলতে বসেছে। চিঠির প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে চিঠি লেখার অনুভূতি তুলে ধরাই হোক আয়োজকদের লক্ষ্য।

ভাস্কর চৌধুরী বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তাদের জীবনের সঙ্গে চিঠি, পিয়ন, পোস্ট মাস্টার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। চিঠিতে যে আবেগ আর ভালোবাসা তা অন্য কিছুতে নেই, পাওয়া যাবে না। চিঠিযুগ আর ফিরে আসবে না। কিন্তু চিঠির স্মৃতি যেন অম্লান থাকে, এই চেষ্টা করে যেতে হবে। যদিও বর্তমান প্রযুক্তিকে থামানোর কোনো উপায় নেই।

আয়োজকেরা জানালেন, চিঠিগুলো নিয়ে আগামী বইমেলায় শিগগিরই বই প্রকাশ করার ইচ্ছে তাদের। প্রদর্শনীতে প্রীতিলতার চিঠি থেকে শুরু রবীন্দ্রনাথের চিঠি পড়তে পড়তে আনন্দে চোখের কোনে দেখা দেবে জল, জ্বলে উঠবে আগুন, তেমনি গভীর প্রেমময় শব্দের গাঁথুনিতে লেখা একেক প্রেমিকের চিঠি জানান দিল হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। প্রদর্শনীতে বাবা-মা-বন্ধুকে নিয়ে লেখা চিঠির সঙ্গে সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখা চিঠিও স্থান পেয়েছিল। ছিল অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা খ্যাতনামা ব্যক্তিদের পাঠানো চিঠিও। দারাজের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত উৎসবটি চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App