×

মুক্তচিন্তা

প্রেরণার উৎস ভাষাশহীদ রফিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:১২ পিএম

প্রেরণার উৎস ভাষাশহীদ রফিক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের পাতায় একজন স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিকদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই ভাষাশহীদ রফিকের নামটাই সর্বপ্রথম উঠে আসবে। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পারিল বলধারা গ্রামে জন্ম নেয়া এই ভাষাশহীদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে যুক্ত করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দিনে ছাত্ররা যখন ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করছিল তার মধ্যে ছিলেন রফিকও। সেদিন পুলিশের গুলি সরাসরি রফিকের মাথায় লেগে তার খুলি উড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের কাছে পড়ে থাকা রফিকের মরদেহ কয়েকজন ছাত্র তুলে অ্যানাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। মৃত্যুপরবর্তী রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাধায়নে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে শহীদ রফিকের মরদেহ দাফন করা হয়। কিন্তু তার কবরের কোনো চিহ্ন রাখা হয়নি। মাতৃভাষার লড়াইয়ে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন লড়াকু বীর সৈনিক রফিক। ভাষা যে একটি জাতির অস্তিত্ব তা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করতে প্রাণ বিসর্জন দিতে পিছু পা হননি জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) সাবেক এই শিক্ষার্থী। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়ে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। একজন তরুণ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে হয়েছিলেন আন্দোলনের অনন্য নায়ক। এ দেশ জাতি, সমাজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক চেতনা আর অনুপ্রেরণার এক অনন্ত উৎস। মহান এ ভাষাসৈনিক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর স্মৃতি ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেরিতে হলেও সম্মান জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে পুরনো বিজনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। পরে এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। নতুন নামকরণ হওয়া ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ এ বাংলা আর ইতিহাস বিভাগের কার্যালয় রয়েছে। তবে এটিই যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান নয়। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা, সমাজকল্যাণসহ মানবিক গুণাবলি বিকাশ উপযোগী ত্রিয়াকলাপে আগ্রহ থেকেই রফিকের মধ্যে সৃষ্টি হয় ঢাকার চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণের তাড়না। যা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের তরুণদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের চেতনা ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মহান এই ভাষাসৈনিককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা ভাস্কর্য তৈরি করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে কোনো হল নির্মিত হলে তা ভাষাশহীদ রফিকের নামে নামকরণ করা যেতে পারে। শহীদ রফিকের নামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করা যেতে পারে। নতুন ক্যাম্পাসের হলের সামনে হলেও যেন শহীদ রফিকের একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ রফিকের পরিবারকে উপযুক্ত সম্মানে ভ‚ষিত করা হোক, এমনটিই প্রত্যাশা। আজ এত বছর পরে ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ শহীদ ভাইদের প্রতি এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা সবার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, সারা বছরই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব ভাষাশহীদ রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মানের ডালি অক্ষুণœ থাকে এই আহ্বান সবার কাছে। শহীদ রফিকের নামে বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা নাটক মঞ্চস্থ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইতিহাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই ভাষাসৈনিককে যেন বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভুলে না যায় সে জন্য প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে। ভাষার জন্য যিনি জীবন দিয়েছেন তিনি আমাদের গর্বের ধন আমাদের বড় ভাই ভাষাশহীদ রফিক। শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App