×

জাতীয়

কমলাপুর রেলস্টেশন না ভেঙে উন্নয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২১, ১০:১৩ এএম

কমলাপুর রেলস্টেশন না ভেঙে উন্নয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
রাজধানীজুড়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘আইকনিক ভবন’ কমলাপুর রেলস্টেশনটিকে না ভেঙে কীভাবে মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করা যায় সে বিষয়ে আরো পর্যালোচনার আহ্বানন জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কমলাপুর রেলস্টেশনের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির ডিজাইনে কীভাবে পরিবর্তন না করে মেট্রোর উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে আরো স্টাডি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এদিকে মেট্রোরেল সম্প্রসারণের জন্য কমলাপুর স্টেশনের মূল স্থাপনা কিছুটা ভাঙার প্রস্তাব দিয়েছে মেট্রো বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও রেলওয়ের ডিজাইনার জাপানের কাজিমা করপোরেশন। মেট্রো নির্মাণাধীন এ প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইন বলছে, বর্তমান স্থানে স্টেশনটি থাকলে নির্মাণাধীন ঢাকা মেট্রোরেলের স্থাপনার আড়ালে পড়ে যাবে। সে কারণে মূল স্টেশন ভবনটি ১৩০ মিটার উত্তরে সরাতে হবে। সে কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনের মূল স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে বলে রেলসূত্র জানিয়েছে। তবে যে কোনো ঐতিহ্য-স্থাপনা ভাঙার বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শুধু কমলাপুর স্টেশন ভাঙা কেন, আমাদের এখানে কোনো ধরনের ঐতিহ্যবাহী জিনিস রাখা হবে না এরকম একটা অভ্যাস শুরু হয়ে গেছে। কেননা (মেট্রোরেল বা উন্নয়ন) এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নান্দনিক কোনো জ্ঞান নেই। সে জন্য শুধু কমলাপুর কেন কোনো ধরনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বা নান্দনিক স্থাপনার কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। আবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. শামসুল হক কমলাপুর স্টেশন না ভেঙে মেট্রো সম্প্রসারণ ও মাল্টিমোডাল হাব করা যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে সায়েদাবাদে এ মাল্টিমোডাল হাব করার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু তা না করে এখন কমলাপুরকে বেছে নেয়া হয়েছে। এখানে মেট্রো ১-৪ এর কানেকটিভিটি আনতে গিয়ে বড় একটা আইকনিক স্থাপনা ‘কমলাপুর স্টেশন’কে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এখানে মাল্টিমোডাল হাব করা হবে। কিন্তু এতে কত মানুষের সুবিধা হবে? যারা শুধু ট্রেনযাত্রী তাদের সুবিধার জন্য এটা করা হচ্ছে। কিন্তু সায়েদাবাদে যদি করা হতো তাহলে ৩১টি রুটের বাসের যাত্রীরা সুবিধা পেতেন। সেই সঙ্গে সেখানে রেললাইন ছিল, মেট্রো ১-৪সহ এমআরটি ১-৪ সেখানে কানেক্ট করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বুঝে না বুঝে একের পর একটা উন্নয়ন করে যাচ্ছি, এতে কত সংখ্যক মানুষের সুবিধা হবে তার কথা ভাবছি না। কমলাপুরে ১-৪ মেট্রোর কানেকশন দেয়া যাবে কিন্তু বাস বা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড কতটা সম্ভব? তাহলে বেশি সংখ্যক যাত্রী বা জনগণ কিভাবে এখান থেকে সুবিধা পাবেন এটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আমরা একেক একবার পরিকল্পনা করি আবার তা পাল্টে ফেলি বিভিন্ন কারণে বা চাপে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এত সুন্দর একটা আইকনিক ভবন কমলাপুর স্টেশনকে না ভেঙে বেশি সংখ্যক জনগণের সুবিধার জন্য সায়েদাবাদে এ হাবটি তৈরি করার উপযোগিতা বেশি। উদাহরণস্বরূপ তিনি হানিফ ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা ভেবে না ভেবে হানিফ ফ্লাইওভার করলাম, তারপর এর নানা অসুবিধা বের হলো। পদ্মা সেতুতেও রেল নিয়ে ভায়াডাক্টের বিষয়ে একই রকম হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী ভাবনা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে। একটার পর একটা কাজ করি আর পরে তাতে যখন জনগণের অসুবিধা হয় তখন তা ভেঙে ফেলি। আবার বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজও মনে করেন, কমলাপুর রেলস্টেশনের মতো একটা আইকনিক ভবন না ভেঙে মেট্রোরেল স্টেশন তৈরি বা সম্প্রসারণ করা যেত কিনা তা নিয়ে আরো পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এদিকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, কমলাপুর স্টেশন রেখে কীভাবে মেট্রোর কাজ এগিয়ে নেয়া যায় সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে জাপানের ডিজাইনার কাজিমা করপোরেশনকে নিয়োগ করে। তারা এবং ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) একত্রিত হয়ে মেট্রোর নতুন নকশা করেছে, সে অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশনটিই ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে উভয় কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগের ভবনটির কিছু অংশ ভেঙে উত্তরে সরিয়ে নিতে হবে। এতে মেট্রোরেল ও হাবের কোনো পরিবর্তন করা লাগবে না। শুধু কমলাপুর স্টেশনের মূল ভবনটি কিছুটা উত্তরে সরাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনিই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, তবে ডিএমটিসিএল কমলাপুরের আদলে একটা রেপ্লিকা বানিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বলেন, মেট্রোরেলের রুট নিয়ে কমলাপুর স্টেশনের কিছুটা সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাপানের কাজিমা করপোরেশনের ডিজাইন অনুযায়ী কমলাপুরের মেইন স্টেশন ভবনটি ১৩০ মিটারের মতো উত্তরে সরিয়ে নিতে হবে। তবে মেট্রো বাস্তবায়নকারী সংস্থা (ডিএমটিসিএল) এতে রাজি হয়েছে। সুতরাং হাব তৈরিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App