১৪ মাস পর ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

আগের সংবাদ

চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক বাঁধন

পরের সংবাদ

ভাষার দুর্দিন বাংলার আরো বেশি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইংরেজি ছাড়া সব ভাষারই কমবেশি দুর্দিন, বাংলার অনেক বেশি। ভাষার নিয়ন্তা ছিলেন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদরা। ভাষা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। ভাষার ভবিষৎ নির্ধারণের দায়িত্ব নিয়েছেন মাল্টিন্যাশনালের সিইওরা। সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদদের গৌণ ভূমিকাও নেই।
বিল গেটস বলেছেন এক পৃথিবী এক অভিধান।
পৃথিবী একটাই, কিন্তু ভাষা যে সহ¯্র। বিল গেটস যে এক অভিধানের কথা বলেছেন তার ভাষা একটিই, বলাবাহুল্য তা ইংরেজি। উর্দু নিয়ে আপত্তি ছিল আমাদের; তখনকার সময়ের দাবি একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটাতে ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের চেয়ে উত্তম কোনো হাতিয়ার আমাদের ছিল না। যে উর্দু বাংলা ভাষার জমিন এতটুকুও কেড়ে নিতে পারেনি তার বিরুদ্ধে আন্দোলনটা ছিল কার্যত একটি দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা সম্ভবত বুঝতে পারেননি নিঃশব্দে হলেও দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে ইংরেজির সুনামি। এর মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের নেয়া দূরে থাক, এটা নিয়ে ঠিকভাবে ভাবাও হয়নি। দু’একজন ব্যতিক্রম বাদে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা সন্তানদের মুখে কেবল একুশে ফেব্রুয়ারির গান তুলে দিয়েছেন, ভাষাটা তুলে দেননি। তখনো এবং এখনো বুদ্ধিজীবীর সন্তানদের এবং তাদের সন্তানদের সহজিয়া ভাষা ইংরেজি। মাতৃভাষা নামে হলেও কার্যত এটি দ্বিতীয় ভাষাতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
দেড়শ বছর আগে ম্যাথু আর্নল্ড (১৮২২-১৮৮৮) বলেছিলেন, আধুনিক সভ্যতার জন্য দরকার একই ধরনের ইংরেজি ভাষাভাষী একটি বিশ্ব। শেষ পর্যন্ত তাই ঘটতে চলেছে।
কার্যত রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ যেমন রাজনীতিবিদদের হাত থেকে চলে গেছে ব্যবসায়ী এমপিদের হাতে, ভাষার যে রাজনীতি তাতে এখন রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, ভাষাবিদ কারোই ভূমিকা নেই। ভূমিকা বহুজাতিক সিইও ও তাদের দেশীয় এজেন্টদের।
ভাষার জন্য বক্তৃতা, বিবৃতিসর্বস্ব আকুতি বাস্তবিকই অর্থহীন। বাংলা ভাষার জন্য এ কালের মধ্যবিত্তের সন্তান কেন লড়াই করবে না তার পক্ষে আবেগময় কিছু যুক্তি দাঁড় নিশ্চয়ই করা যাবে, কিন্তু প্রশ্নটা যদি তাদেরই হয় ভালো বাংলা জানার কারণে বড় বেতনের চাকরি পেয়েছেন বা বড় ব্যবসা পেয়েছেন এমন দুজন বাংলাদেশি বাঙালির নাম বলুন তো?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজি ও হিন্দির পর বাংলা থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে উঠেছে বলে তাদের লেখকদের হাহুতাশ। স্বাধীন সার্বভৌম যে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষাই বাংলা সেখানে বাংলার ভবিষ্যৎ আলোকিত না হয়ে যায় কোথায়! স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এ প্রান্তে তারা হয়তো খানিকটা আলোর উদ্ভাসন দেখে থাকবেন- এতে আমাদের শ্লাঘার কমতি নেই। বাস্তবে মধ্যবিত্তের সন্তান বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি এখন ইংরেজির ভয়াবহ হুমকির মুখে। নাৎসিরা যেমন ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতির অভিভাবক সেজে এ ভাষার ওপর জার্মান ভাষা চাপিয়ে দিয়েছিল, ইংরেজির চাপ তার চেয়েও বেশি, তার চেয়ে ভয়ংকর। ফরাসি দার্শনিক মাইকেল সেরেসকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে : নাৎসি অবরোধের সময় প্যারিসের দেয়ালে যত না জার্মান শব্দ ছিল, এখন ইংরেজি শব্দের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।
৮০ শতাংশ ফরাসি নাগরিক মনে করে, তাদের জাতীয় সংহতি রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফরাসি ভাষার। কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে সে ভাষার বন্ধন আলগা হয়ে আসছে। ফরাসি ভাষা রক্ষা গ্রুপ লা মদ বা লা হিউমেনিতে পত্রিকায় সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ইংরেজি মাধ্যমে ফরাসি ভাষা ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভাষা হত্যা করাও হয়, ব্যাপারটি গণহত্যার মতোই। তবে প্রক্রিয়াটি ধীরগতির। ভাষা হত্যায় যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তার কয়েকটি :
নিখোঁজ প্রজন্ম সৃষ্টি : অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী পরিবারের শিশুদের অপহরণ করে রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। অপহরণের কাজটিও রাষ্ট্রীয় বাহিনীরই কাজ। সম্পূর্ণভাবে মূলোৎপাটিত হয়ে ভিন্ন এক পরিবেশে নতুন ভাষায় শিশুদের জীবন শুরু হয়। তারা পিতৃপুরুষের ভাষা বিস্মৃত হয় এবং ইংরেজি ভাষী অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বেড়ে ওঠে। যে ভাষা

তারা বিস্মৃত হয়েছে, সে ভাষার জন্য তারা আন্দোলনে যাবে না ধরেই নেয়া যায়। নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিখোঁজ প্রজন্মের মূল ভাষাটিকে হত্যা করা হয়েছে।
শক্তিশালী ভাষা আরোপ : প্রথমত ভাষাটি হোক শক্তিশালী, দ্বিতীয়ত, সরকারি কিংবা রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দিয়ে একে আরো শক্তিশালী ও বাধ্যতামূলক করা হয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে একই রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর ভিন্ন ভাষার মানুষকে জীবন ও জীবিকার জন্য ঘোষিত সরকারি বা রাষ্ট্রভাষার দিকে ঝুঁকে পড়তে হয়। ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, পর্তুগিজ কিংবা হিন্দির প্রবক্তারা সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছেন।
ভাষা নিষিদ্ধকরণ : ১৮০৩ সালে হাওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হয়। তার পরই হাওয়াইয়ান ভাষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রায় বিলুপ্ত হাওয়াইয়ান ভাষাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি এখন এই অঙ্গরাজ্যের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব : ভিন্ন সংস্কৃতির শক্তিশালী গণমাধ্যম থাকলে তা নিজ দেশের ও আতিথ্য প্রদানকারী দেশের সংস্কৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। একসময় আধিপত্য করতে থাকে।
গণহত্যা : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ইহুদিবিনাশী পরিকল্পিত গণহত্যা ইডিশ ভাষাকে ধ্বংস করেছে, হিব্রুর চর্চা কমিয়েছে। ইন্ডিয়ানবিরোধী যুদ্ধ ধ্বংস করে আমাজন অঞ্চলের বহু ভাষা। ১৯৯০ দশকে রুয়ান্ডার হুতুদের হাতে তুসি গণহত্যা তুসিদের ভাষার বিস্তার কমিয়ে দিয়েছে।
মাতৃভাষার প্রতি অনাগ্রহ : বাংলাদেশেই এর পর্যাপ্ত উদাহরণ মিলবে, এরই মধ্যে বাংলার প্রতি বিতৃষ্ণ একটি ইংরেজি জানা বাঙালি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। ভাষা-রাজনীতি বা গেøাটোপলিটিকসকে আরো উসকে দিয়ে স্থানীয় ভাষার বিকাশ ঘটাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। মাল্টিন্যাশনালগুলো তাদের পণ্যগুণে, অর্থশক্তিতে, প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করে। জন কোবারবিয়াস দেখিয়েছেন পদ্ধতিগতভাবে ভাষা হত্যা করা হয়েছে, সরকারই কাজটা হয় সরাসরি করছে, নতুবা হত্যার দোসর ও অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। অষ্টম শতকের শুরুতে খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ডিক্রি জারি করলেন, একমাত্র আরবিই হবে দাপ্তরিক ভাষা এবং তা গ্রিক ও কপটিক ভাষার স্থলাভিষিক্ত হবে। কপটিক পরবর্তী কয়েক শতকে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে, মামলুক শাসনামলে কপটিকভাষীরা নিপীড়নের শিকার হয় এবং সপ্তদশ শতকে ভাষাটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বাতি নেভার আগে দপ করে একবার জ¦লে ওঠাও কম চমকে দেয়া নয়- ইদিশ ভাষার বেলায় এমনটাই হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে আইজাক বশেভিক সিঙ্গারের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে ভাষাটি শেষবারের মতো জ¦লে ওঠে। সিঙ্গার নিজেই লিখেছেন, ইদিশ ভাষায় সক্রিয় টাইপরাইটার কেবল কয়েকটি। একটি টাইপরাইটার তিনিই ব্যবহার করছেন। যত খ্যাতিমানই হোন না কেন, ইংরেজিতে অনুবাদ না করে দিলে তার দৌহিত্রের বোঝার সাধ্য নেই পিতামহ কী সব লিখে রেখে গেছেন।
আমরা বিদেশি বিনিয়োগ কিংবা বাংলাদেশ-বিদেশ জয়েন্টভেঞ্চার প্রবলভাবে উৎসাহিত করছি। জাপানি, চৈনিক কিংবা কোরীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন ও বাণিজ্য উভয়েরই প্রসার ঘটছে। কিন্তু এসব ভাষা দাঁত বসাতে পারেনি। বিনিয়োগকারীর ভাষা যদি হয় হিন্দি এবং তিনি যদি চান তার প্রতিষ্ঠানে হিন্দি জানা প্রার্থী অগ্রাধিকার পাক, তার চাওয়া বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে না। কারণ হিন্দির জন্য জমিন তৈরি হয়েই আছে। আকাশ চ্যানেলে দিন-রাত চলছে হিন্দি। যে কোনো সময় শহরের বাড়িগুলোতে হানা দিলে দেখা যাবে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক টিভি স্ক্রিনে চলছে হিন্দি সিরিয়াল। হিন্দি কথপোকথনের উত্থান পতনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের রক্ত¯্রােতে জোয়ার ভাটা খেলছে কাহানি ঘর ঘর কা আমাদেরও ঘরের কাহিনী হয়ে উঠছে। আমাদের ভালোবাসা নিবেদন থেকে শুরু করে ঝগড়া-ফ্যাসাদেও বাংলার ব্যবহার কেবলই হ্রাস পাচ্ছে।
ইংরেজি ভাষা যেভাবে সীমান্ত স¤প্রসারণ করে চলেছে, ভয় ছিল চীনাদেরও আগ্রাসী শক্তি নিয়ে ইংরেজি না আবার তাদের সুরক্ষিত সীমান্ত ডিঙিয়ে চায়নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিকে তছনছ করে দেয়। সে ভয় কেটে গেছে। এখন উল্টো ভয়, চায়নিজ ভাষা কি ইংরেজিখেকো হয়ে উঠবে?
ক্রমাগত দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি, ক্রমস¤প্রসারিত রপ্তানি-বাণিজ্য চীনকেই না সাম্রাজ্যবাদী করে তোলে সেই আশঙ্কাও মার্কিনরা করছে। বাণিজ্যের স্কন্ধে ভাষার পরিভ্রমণে সাফল্য বেশি।
মনে রাখা দরকার ইংরেজি স¤প্রসারণের অন্যতম বাহন ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য।
মার্কিন সাফল্যের একটি বড় মন্ত্রই হচ্ছে হাওয়া বুঝে পাল তোলা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একমেরু বিশ্ব সৃষ্টি হলেও আমেরিকা এখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, যেভাবে হোক যত দ্রুত সম্ভব চীনা ভাষা শিখতে হবে। দেশটির সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাটাকে আমেরিকা খাটো করে দেখেনি। চীন এগোচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে, অর্থনীতি টেনে নিচ্ছে সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে। আমেরিকায় নতুন প্রজন্মের সামনে মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া শেখার জন্য, চাকরির জন্য, ব্যবসার জন্য দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উঠে আসছে চায়নিজ। কিন্ডারগার্টেন থেকে হাইস্কুলে চায়নিজ শেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার শিখতে বাধ্যও করা হচ্ছে। শত শত কলেজ চায়নিজ অ্যাডভান্সড প্লেসমেন্ট কোর্স খুলেছে। চীনা টাউন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় প্রতিটি শহরে। ভয় ধরেছে মার্কিনদের। চীন এখন পৃথিবীর শীর্ষ ভোক্তা। দু’এক দশকের মধ্যে হয়ে উঠবে শীর্ষ অর্থনীতি। তখন কি ধীরে ধীরে চীনা ভাষা গ্রাস করবে ইংরেজিকে, যেভাবে ইংরেজি গ্রাস করেছে পৃথিবীর অনেক ভাষা?
এক যুগ আগের ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা বাংলা’- এ সংবাদ জারি হওয়ার পর বাংলা ভাষাতে আদৌ কোনো সমৃদ্ধি ঘটেছে কিনা এ নিয়ে বড় বিতর্ক হতে পারে। এই অতি উত্তম মানের মিষ্টত্ব দিয়ে বাংলা পৃথিবীকে কতটা নিজের দিকে আকৃষ্ট করছে পেরেছে এই প্রশ্ন না হয় জমাই থাকুক। বরং প্রশ্ন করি সর্বোত্তম এই মিষ্টি ভাষা বাংলাদেশকে কতটা আকৃষ্ট করতে পেরেছে?
বলা হয়ে যাকে ইউনেস্কোর এই ভাষা মিষ্টত্ব পরীক্ষা ও ফলাফল ঘোষণার বছরটি হচ্ছে ২০১০। অতঃপর পুরো এক যুগে অতিবাহিত হয়েছে। এক যুগের প্রতি বছরই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুংবাদ আমরা পেয়েছি, এমনকি লকডাউনের করোনাকালও আমাদের আয় বৃদ্ধি উল্টোমুখী করতে পারেনি। আমার হাতে কোনো বড় ধরনের সমীক্ষার ফলাফল নেই, তবে নিজের পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনের পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের পরিবারের ওপর চোখ রেখে যা দেখেছি তাতে আমার মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে আয় বৃদ্ধির এক যুগে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সবচেয়ে মিষ্টি বাংলা ভাষা। এসব পরিবারের সন্তানরা প্রায় সকলেই ভর্তি হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে। আর বিতর্কিত হোক কি বিতর্কহীন হোক টেক্সট বোর্ডের বই যাদের স্কুল পাঠ্য তাদের একটি অংশের পছন্দ ‘ইংলিশ ভাসর্ন’। ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংলিশ ভার্সনের শিশু-কিশোরদের কাছে অল্পদিনেই বাংলা পরিণত হয়ে উঠে টক্সিক ল্যাঙ্গুয়েজ-এ; তা ভাষার কোনো দুর্বলতার কারণে নয়, স্বদেশে এবং বিদেশে বাংলা ভাষার গুরুত্বহীনতার কারণে এবং অভিভাবকদের উপেক্ষার কারণে। বাংলা ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে কারণ অর্থাগমের সঙ্গে ভাষার যে সম্পর্ক তাতে বাংলা ভীষণ মার খেয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়