×

রাজনীতি

বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে মন্তব্য করলেন মেজর হাফিজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম

বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে মন্তব্য করলেন মেজর হাফিজ

ছবি: ভোরের কাগজ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হৃদয় বিদারক ঘটনা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও সুদূর প্রসারি কার্যক্রম রয়েছে এই দেশটা একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে… যাদের কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে না। এই পুণঃতদন্তে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রত্যাশার কথা জানান।

মেজর হাফিজ বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার মিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলাম…. আমাদের সৃষ্ট এই সেনাবাহিনী জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছিলো প্রত্যেকটি আন্দোলনে-সংগ্রামে জনগনের সাথী হয়ে জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলো। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে ধবংস করার জন্যই প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড। আমরা আশা করব, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নির্মোহভাবে নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবেন এবং বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করবেন।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটনায় তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও আরো ১৭ জন পরিবারের নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।

আরো পড়ুন: আবারো তত্ত্বাবধায়ক ফেরাবে বিএনপি

তিনি বলেন, ওই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক নিরহ ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা হয়েছে, অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। তবু আমরা অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা বিএনপির অনুরোধে এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত পথপরিক্রমার জন্য অত্যন্ত জরুরী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে সব দেশ এবং প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে অপকর্মের লিপ্ত ছিলো তাদের সবার চেহারা উন্মোচিত হোক জনগনের স্বার্থে। আমরা একটা নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের দল থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সর্বধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে এই নারকীয় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আমরা একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে চাই… বিচার চাই যাতে করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমূহ তাদের অন্তর যেন শান্ত হয়।

আমরা দেখতে চাই, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার যেভাবে পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি যাতে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে আমরা বিএনপির তরফ থেকে তাদেরকে সর্বত্রভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করব এবং পরে যেসব ঘটনার বিবরণ বা যেসব ব্যক্তিবর্গ যারা অত্যন্ত ভাইটাল উইনেস ছিলেন এই ঘটনায় তারা কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।

আরো পড়ুন: কাদের মির্জার বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই

সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সাধারণ নাগরিকরাও বর্তমান সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ক্লোজড মনিটরিং করছি। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে শেষ মুহুর্তে দ্রুত সরকার থেকে বাইরে নিক্ষেপ করার জন্যে এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করার জন্যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনাবাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর সব সদস্যদেরকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

পূণঃতদন্তের কোনো সময়সীমা বিএনপি দেবে কিনা প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে চাই এই তদন্ত কমিটিকে। আমরা আশা করি দ্রুত তারা তদন্ত কাজ এবং বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে। সময়সীমা বেধে দেয়া অত্যন্তু মুশকিল।

‘বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনা এখনো ধুঁয়াশায়’

হাফিজ বলেন, এই ঘটনায় সরকারের এবং বিদেশী শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা এই সম্পর্কে সব কিছু এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। এই সম্পর্কে আমরা ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করি। সেখানে অনুরোধ করা হয় যে, এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নতুনভাবে তদন্ত করে পুণঃবিচার করতে হবে। এর সঙ্গে কারা কারা সংশ্লিষ্ট বিদেশী হস্তক্ষেপ আছে কিনা? কি কারণে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিলো এ ব্যাপারে কমিশন গঠনের জন্য আমাদের দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। 

আমরা খুব আনন্দিত যে, অতিঅল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেজন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

আরো পড়ুন: সাংবাদিক সালেহ উদ্দিনের জিম্মায় মুক্ত আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মেধাবী ৫৭ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ১৭ জন লোককে হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যন্তর থেকে ৩৮ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নির্মোহ ও উন্মুক্ত তদন্ত হলে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।’ 

এই পিলখানা ঘটনার প্রধান কারণ কি ছিলো? সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড, ভেঙে দেবার জন্য বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ অকার্যকর, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছিলো। এতে জড়িত ছিলো বিদেশী শক্তির অংশ হিসেবে বেশ কিছু ব্যক্তির সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জনগনের বিশ্বাস রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সেনা প্রধান মঈন উদ্দিন আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আরো অনেক আওয়ামী লীগের নেতারা এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্বীয় বর্গ জড়িত ছিলেন বলে জনগনের ধারণা রয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে তৎকালীন কোয়াটার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ। 

‘তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে’

হাফিজ বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে আমরা একটা চিঠি সরকারকে দিয়েছিলাম। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পূণঃতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা সন্তুষ্ট যে তারা দ্রুত এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছেন। আমরা আমাদের চিঠিতে একটি তদন্ত কমিশন স্থাপনের করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। একটা কমিশন যদি তারা করে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাহলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করি। 

আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে যা লিখেছে গার্ডিয়ান

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিশনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যদি সরকার মনে করে, এখন যে পুণঃতদন্ত ও পুণঃবিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি যদি সরকার মনে করে যে একটা কমিশন গঠন করবেন সেই কমিশনে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকবে… যেটা আগে বলতে পারেনি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

কেমন আছে কোটা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরা?

কেমন আছে কোটা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরা?

ঐতিহাসিক অভিযানের শেষে পৃথিবীতে ফিরলেন পোলারিস ডনের অভিযাত্রীরা

ঐতিহাসিক অভিযানের শেষে পৃথিবীতে ফিরলেন পোলারিস ডনের অভিযাত্রীরা

ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান

ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান

‘এটাই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল’

‘এটাই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল’

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App