×

রাজনীতি

আইনজীবী সমিতিতে নতুন নির্বাচনের দাবি বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৫:০০ পিএম

আইনজীবী সমিতিতে নতুন নির্বাচনের দাবি বিএনপির

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেছেন, বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ছত্রছায়ায় দেশের কোথাও কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী নয়। বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় নির্বাচনে তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমাণিত হলো সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও। এটা নির্বাচন নয়, সরকার ও সরকারি দলের সংঘাত, মারামারি, জালিয়াতির তামাশা হয়েছে। 

একই সঙ্গে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীসহ গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মুক্তির দাবিও জানান রিজভী। শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, লণ্ডভণ্ড নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পেশীশক্তির উন্মত্ততার হিংস্রতার প্রতিফলন দেশের জনগণ অবলোকন করলো সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনেও। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যে সব কুটকৌশল অবলম্বন করছে তার সব কিছুই তারা সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে।

আরো পড়ুন: দেশটা এখন বিপদের মধ্যে আছে

গত ৬-৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে যুবলীগের কামড়া-কামড়ি, হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের মুখে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা, পরে আবার শেখ হাসিনা ও মেয়র তাপসের প্রার্থীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনাঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে। ওরা হিংসা-প্রতিহিংসার পথে দেশের রাজনীতিকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই ভোট জালিয়াতি ও নিজেদের অপকর্মের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের জনপ্রিয় সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ফলাফল গণনা নাটকের নামে জালিয়াতি করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে হারিয়ে শেখ হাসিনা ও যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশের আপন ভাই মেয়র তাপসের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ভোটে যার সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার কথা তাকে পুরা হয়েছে জেলে! আর যার নিশ্চিত পরাজিত হওয়ার কথা তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বসানো হয়েছে সম্পাদকের চেয়ারে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেই মামলায় এক নম্বর আসামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথিকে গ্রেপ্তার তো দুরের কথা তার নাম নিতেও ভয় পাচ্ছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেছেন, যুথিকে খুঁজে পাচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ মামলার পর সেই রাতেই বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরো পড়ুন: গুম-খুন পরিবারের পাশে আমিনুল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের নগ্ন হস্তক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘‘মামলায় ২০ জনের নামে করা এজাহারে যুথি শুধু এক নম্বর আসামীই নয়, দৃশ্যমান হামলাকারীদের একজন পৃষ্ঠপোষক। নির্বাচন সাব কমিটির কোঅপ্ট সদস্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ গত শুক্রবার রাতে দায়েরকৃত এজাহারে বলেছেন, এক নম্বর আসামির (যুথী) নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তিনি বাম কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন।

অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরে জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এজাহারে আরো বলা হয়, “নির্বাচন সাবকমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব—কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে। পরশ-তাপস দুই ভাইয়ের মারামারি এবং পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং সম্পাদক পদ দখলের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছে কাজলকে। এতো সহিংসতা ঘটলেও বিচারপতিরা নিশ্চুপ।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আবদুল জাব্বার ভুঁইয়াসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App