×

রাজনীতি

বিএনপি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত ‘গণবিরোধী’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:২১ পিএম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত ‘গণবিরোধী’

মার্চে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলেছে বিএনপি। 

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আবারো বৃদ্ধি করবে সরকার যা গণমাধ্যমে এসেছে ইতোমধ্যে। এই অগ্রহণযোগ্য গণবিরোধী সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়া একমাত্র দখলদার সরকারের পক্ষেই সম্ভব। গণবিরোধী সরকার জবাবদিহিতার ধার-ধারে না। এই অবৈধ সরকারের পক্ষে কোন গণরায় নেই। গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত হবে অতীব নিষ্ঠুর। সামনে রমজান মাস, তার আগেই এই দাম বৃদ্ধি হবে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো’। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির উদ্যোগে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আরো পড়ুন: রাজকীয় শাসন চালু করেছে দেশীয় হানাদার বাহিনী

রিজভী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে এর চেইন রি-অ্যাকশনে জনসাধারণের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষি শিল্প, কলকারখানা গভীর সংকটে পড়বে। এমনিতেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এর উপরে এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের উপর চরম আঘাত আনবে। 

মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষরা এমনিতেই কঠিন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের আয় বাড়েনি। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোরকম জীবন কাটাচ্ছে। তার উপর সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে। বিদ্যু ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে বিএনপি কর্মসূচি দেবে বলেও জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

অবশ্যই কর্মসূচি থাকবে। আগে সরকার কি করে আমরা দেখি। এখন থেকে আমরা প্রতিবাদ করছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানাচ্ছে… তারপরেও সরকার যদি বিদ্যুতের দাম, জ্বালানির দাম বাড়ায় আমাদের কর্মসূচি নিশ্চয়ই থাকবে।

‘ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে গড়ার চক্রান্ত’

রিজভী বলেন, বর্তমান দখলদার শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য অন্তপ্রাণ দেখালেও বাস্তবে দেশকে পরিণত করা হচ্ছে ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচর্যা কেন্দ্র হিসেবে। এটার প্রমাণ সর্বত্র… বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আজকে টেলিভিশন খুললেই হিন্দি নাটক, হিন্দি সিনেমা। সিনেমা হলগুলোতে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা চলে না… সব ভারতীয় সিনেমা এখানে চলে এসেছে। এগুলো কিসের জন্য?

একটা স্বাধীন দেশে নিজের দেশের ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা এবং অনুশীলন.... এটা লালিত হবে, পালিত হবে, এটা প্রদর্শিত হবে। সেটা না করে অবাধে আপনি দরজা খুলে দিলেন… আর হু হু করে ঢুকছে অন্য দেশের ভাষা সংস্কৃতির প্রবাহ। প্রথমে একটি জাতিকে পদানত করে রাখতে হলে তার ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে হবে, তার সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশের পরিণতি ঠিক একই রকম। পাকিস্তানিরা যেরকম এদেশে উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো… জন্মের পরেই বাংলাদেশীরা যে উচ্চারণ করে বাংলা সেটা ভুলিয়ে দিয়ে আরেকটা ভিনদেশের ভাষা চাপাতে চেয়েছিলো… মানুষ মানেনি। এখনো মানুষ মানে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আত্মনির্ভরশীলতার স্থলে পরনির্ভরশীলতাকে করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতি। এখন ভারত থেকে কচুরমুখীও আমদানী করতে হয়… অন্যান্য কথা তো বাদই দিলাম। সিজনে আমি বগুড়াতে দেখেছি দুই-তিনবছর আগেও কচুরমুখী দুই টাকা থেকে তিন টাকা কেজি। এখন সেই কচুরমুখীও ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। আমাদের খাদ্য পণ্যের নিজস্ব উৎপাদন ও স্বনির্ভরতাকে কিভাবে অবহেলিত করে পরনির্ভরশীল করা হচ্ছে তার নমুনা এটি।

আরো পড়ুন: দেশের লক্ষ লক্ষ শহীদদের কী জবাব দেবো?

প্রকাশনা শিল্পকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত এখন ছেপে আসে ভারত থেকে। পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রবন্ধ কবিতায় বানান ভুলে ভর্তি। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের বাংলা ভাষার চর্চাকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য নানা কায়দায় পাশ্বর্বতী দেশের রাষ্ট্রভাষার চর্চাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে নিরন্তরভাবে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির বদলে ব্যাপকভাবে ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে তাদের গল্প, কবিতা ও কার্টুনের বইয়ের পাশাপাশি সিনেমা ও নাটকের ব্যাপক আমদানী করা হচ্ছে। রিজভীর অভিযোগ, সরকার বাংলাদেশের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। 

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে পাঠ্যপুস্তকে ভিনদেশী চেতনা ঢোকানো হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের মনে জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকদের দেশাত্মবোধকমূলক যে সমস্ত গল্প, কবিতা এবং বরেণ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দে জীবনী পাঠ্যপুস্তক থেকে ক্রমান্বয়ে বাদ দেয়া হয়েছে দলীয় এবং ভিনদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে।

ইংরেজী ও হিন্দির মিশ্রনে বিকৃত বাংলা ভাষার চর্চায় এবং প্রযুক্তির বিকৃত ব্যবহার ও চর্চার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মৌলিক ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা। এগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলের অবদান। বাংলাভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা চাই, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা চাই ইত্যাদি সরকারি প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রয়েছে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা ভাষা চর্চার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হযবরল’

রিজভী বলেন, শিক্ষানীতির কোন মৌলিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। পাশের হার বাড়িয়ে দেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষার্থী উত্তর পত্রে কিছু লিখুক আর না লিখুক তাকে পাশ করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের। বলা হয়েছে ফেল করানো যাবে না। অথচ পড়াশুনা করেই পাশ করতে হয়। শিশুশ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। একেকবার একেক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে হযবরল করা হয়েছে। একসময় এরা ক্ষমতায় আসার পর সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা… কি সব করা হলো… পরে আবার সেটাও বাদ দেয়া হলো। এখন আবার আরেকটি ধারা তৈরি করেছে যে, প্রথম শ্রেনী থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না।

মানে একজন শিক্ষার্থীকে মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে তার মেধার বিকাশের যে সুযোগ সেটা ছোট বেলা থেকেই বন্ধ করে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্কুলমুখী না করে কোচিং সেন্টার ও গাইড বই মুখী করার নীতি গ্রহন করেছে সরকার। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থায় এহেন অরাজকতায় কখনোই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটবে না। একটি মেধাহীন জাতি তৈরি করার জন্যেই সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।

গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ‘দৌরাত্ব’ সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, নানা শ্রেনী পেশার মানুষ ও সংগঠন তারা যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালন করে। কিন্তু গুন্ডামির সংস্কৃতি সম্পন্ন, গুন্ডামির বৈশিষ্ট সম্পন্ন সরকারি দল ওদের কাছে কি ২১ ফেব্রুয়ারি, কি স্বাধীনতা দিবস, কি বিজয় দিবস… এগুলো মুখ্য বিষয় নয়। তাদের দখলদারিত্ব ও আধিপত্য এটা বজায় রাখার জন্য আমরা নানা প্রচেষ্টা দেখি।

আরো পড়ুন: আ. লীগ দেশকে ‘জোর যার মুলুক তার’ বানিয়েছে

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রায় ১০০ গজ পেছনে আমরা চলে এসেছি… ঠিক এই একশ গজ যেতেই আমাদের আড়াই ঘন্টা সময় লেগেছে। কেনো? কালকে ৭/৮ বার ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির নেতৃত্বে ফুল দেয়ার ঘোষণা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের যারা এনাউয়েন্সমেন্ট করছিলেন তাদের কাছ থেকে আমরা শুনেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা দাঁড়িয়ে আছি… আমাদের সামনে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সকলে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ আমাদের পাশ দিয়ে ডান দিক দিয়ে সব আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন যাচ্ছে… নানা লীগ, অমুল লীগ, তমুক লীগ… কত যে সংগঠন তার শেষ নাই… ১০/৫ জন নিয়ে একটা করে যায় আর সোচ্চার কন্ঠে অনুষ্ঠান ঘোষক যারা তাদের নাম বলছেন।

তিনি বলেন, এটা কোনো দেশ? এটা কিসের আলামত… নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী দেশের আলামত তা গতকাল ফুটে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যারা ঘোষণা দিচ্ছেন তারা শুধুমাত্র অমুক লীগ, তমুক লীগ বলছে… আর ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট –সেক্রেটারি দিচ্ছেন যাদের নাম ৭ থেকে ৮ বার বলা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি হয় ভাড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের যদি মেরুদন্ড না থাকে তাহলে এই পরিণতি হয়। কর্তৃত্ববাদী দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ভাড়দেরকে এই ধরনের সাহেবদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে সরকারের যে দম্ভ ও অহংকারের নীতি বাস্তবায়ন করার জন্য তাদেরই চেতনার মানুষদেরকে দায়িত্ব দেয়া যেটা আমরা গতকাল (২১ ফেব্রয়ারি) শহীদ মিনারে দেখেছি।

২১ ফেব্রুয়ারির দিনেও টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার স্থানীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অপর্ণের সময়ে ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সস্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App