হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই
দেব দুলাল মিত্র
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ছবি: সংগৃহীত
হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সবাই সচেতন থাকলে এটি প্রতিরোধ সম্ভব। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পাশের অন্তত একজনকে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সম্পর্কে এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। করোনার পর হেপাটাইটিস এখন বিশ্বের একটি মরণঘাতী ভাইরাস। হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হলে অপচিকিৎসার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগীরা সুস্থ হয়।
রবিবার (২৮ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ্যলেমনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুর রহিম ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি-এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব।
জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফ আলী।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, কিছু কিছু দিবসকে সচেতন করতে হয় সবার সচেতনতার জন্য। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস একারণেই আমরা স্মরণ করি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনতায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে আছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের থেকে বাঁচতে সব সময় নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের অনুরোধ জানাবো আপনারা নিজে সচেতন থাকার পাশাপাশি অন্তত অপর একজনকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখুন। এই রোগ সহজে ধরা পড়েনা, কিন্তু যখন ধরা পড়ে তখন লিভারের অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের জন্য আগস্ট মাসে লিভার পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে একটি মেডিকেল ক্যাম্প করবো।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, হেপাটাইটিস বি এখন আর কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেয়ার আগে এটি ধরা গেলে রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির নিরাময়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। পৃথিবীতে আজ এই ভাইরাসটির জন্য বেশ কয়েকটি ওষুধ রয়েছে যার সবগুলোই বাংলাদেশে সহজলভ্য। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের হতাশ না হয়ে লিভার রোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, হেপাটাইটিস বি রোগটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না। এটি হচ্ছে নীরব ঘাতক। তবে আক্রান্তের হার কমিয়ে আনতে হবে। এখনো মানুষের মাঝে সচেতনতা আসেনি। এই রোগের বিষয়ে দেশের জনগণকে সচেতন করতে বড় ধরনের কার্যক্রম গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। শুধু চিকিৎসকদের পক্ষে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এলেমনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, পানি পড়া, ঝাড়ফুঁকের মতো অপচিকিৎসার কারণে হেপাটাইটিস বি রোধে আক্রান্ত রোগীরা বেশি মারা যায়। সঠিক চিকিৎসায় রোগীরা আরোগ্য লাভ করে।
বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি’র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব বলেন, হেপাটাইটিস সি এর কার্যকরী চিকিৎসা সেবা থাকলেও হেপাটাইটিস বি সম্পূর্ণ নির্মূল করার মতো এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই সচেতনতাই হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। চলতি বছরের শেষ দিকে হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোধে বীকন ফার্মাসিউটিক্যাল আরো একটি ওষুধ বাজারে নিয়ে আসবে।
দেশের দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরের গবেষণায় ‘ন্যাসভাক’ নামে একটি নতুন ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। এই ওষুধটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হবে।