×

জাতীয়

মেয়র আতিক

ঈদের পরে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম

ঈদের পরে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, 'ঈদের পরে কারওয়ান বাজারে ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। কারওয়ান বাজারের এই কাঁচাবাজারের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বহু মানুষের জীবন হুমকিতে রয়েছে। কারওয়ান বাজারস্থ পাইকারি কাঁচাবাজারের এই ব্যবসায়ীদের গাবতলীতে ডিএনসিসির পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে। দ্রুতই গাবতলীতে বরাদ্দ দেয়া হবে। বরাদ্দ দেয়া হলে আপনারা যারা আসবেন না তাদের দায় নিজেদের নিতে হবে। বরাদ্দ পাওয়ার পরে কেউ না আসলে সেটি নিয়ম অনুযায়ী অন্যজনকে বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হবে।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ডিএনসিসির প্রস্তাবিত কাঁচাবাজারে ডিএনসিসির আওতাধীন কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারস্থ ব্যবসায়ীদের গাবতলীস্থ আমিনবাজার পাইকারী কাঁচাবাজারে স্থানান্তরের নিমিত্তে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। মতবিনিময় সভার শুরুতে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ গাবতলীতে স্থানান্তরের জন্য তাদের বিভিন্ন সুবিধার বিষয় উল্লেখ করে দাবি তুলে ধরেন। 

মেয়র বলেন, 'ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর একদিনে গড়ে উঠেনি। সময়ের পরিক্রমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনের স্মার্ট নেতৃত্বে ঢাকার উন্নয়ন প্রসারিত হচ্ছে। কারওয়ান বাজার এখন ঢাকার প্রাণকেন্দ্র। একটি সিটির প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। ট্রাক আসছে, ট্রাক যাচ্ছে, রাস্তা বন্ধ করে মালামাল নামছে। কোনো ডিসিপ্লিন নাই। রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। কারওয়ান বাজারটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কোনো নিরাপত্তা নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ স্মার্ট শহরের কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারবে না।

আরো পড়ুন: ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হচ্ছে বিআরটিসির ৫৫০ বাস

ঢাকা শহর সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, ঢাকা শহরের উপর দিয়ে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নিচ দিয়ে সুন্দর রাস্তা হয়ে গেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে কারওয়ান বাজারকে সুন্দর করে সাজাতে চাই। আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম। পর্যায়ক্রমে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হবে। গাবতলীতে যে কাঁচাবাজারটি রয়েছে সেটি পরিকল্পিতভাবে সব কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করে নির্মাণ করা হয়েছে। অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অগ্নিকান্ড ঘটলে এখানে ব্যবস্থা নেয়া সহজ। ৪টি বহিঃগর্মন পথ রয়েছে। ট্রাক থেকে মালামাল আনলোড করার যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা আছে। আপনাদের জন্য বিশ্রামাগারও করা হয়েছে। আরো যা যা সুবিধা দরকার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে নদী পথেও মালামাল পরিবহন করা যাবে। পাশ দিয়ে আট লেনের সড়ক হচ্ছে। মার্কেট থেকে মেইন রোডের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিচ্ছি। ঈদের আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে।

মেয়র আতিক বলেন, 'প্রথম ধাপে কারওয়ান বাজার আড়ৎ মার্কেটের ১ম তলার ৪০০ বর্গফুটের ৬২টি দোকান এবং ২য় তলার ১৭০ বর্গফুটের ১১৪টি দোকান অর্থাৎ মোট ১৭৬টি দোকান স্থানান্তর করা হবে। এছাড়াও কারওয়ান বাজারে সম্পত্তি বিভাগ কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১৮০টি টিনশেড দোকান আমিনবাজারে পাইকারী কাঁচাবাজারের আশেপাশের উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারওয়ান বাজারের ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে বহু মানুষ হতাহত হবে। আমরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোনো ব্যবসা চলতে দেয়া যাবে না। ঈদের পরে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর শুরু হবে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেন। মেয়র একটি চমৎকার সুযোগ আপনাদের জন্য দিচ্ছেন। আপনাদের অবশ্যই এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিৎ। মেয়র বলেছেন, নদীর পাশে বিজিবি মার্কেটে মাছের আড়ৎ নির্মাণ করে দিবেন। সব সুবিধাই আপনাদের জন্য নিশ্চিত করা হবে।'

আরো পড়ুন: টানা তিনদিন ছুটির পর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, 'এখন মেট্রোরেল হয়ে গেছে। কারওয়ান বাজার আস্তে আস্তে সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক ঢুকতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া কারওয়ান বাজারের ট্রাক তেজগাঁওয়ের রাস্তা দখল করে রেখেছে। কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করে ওই এলাকার পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। গাবতলীতে স্থানান্তর হওয়ার পরে আপনাদের কি কি সুবিধা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলাপ করবেন। মেয়র আপনাদেরই প্রতিনিধি উনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'কারওয়ান বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় ৫শ বছর আগে। এটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো সদরঘাট। পর্যায়ক্রমে ঢাকা গুলিস্থান, মতিঝিল হয়ে অনেক দূর প্রসারিত হয়েছে। তাই কারওয়ান বাজারটি ঢাকার প্রান্তে স্থানান্তর করার মাধ্যমে স্মার্ট শহর নিশ্চিত করতে হবে। আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। অতএব এটি বাস্তবায়ন হতেই হবে। স্থানান্তর হলে সব সুবিধাই পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করা হবে। গাবতলীতে বাজার শুরু হলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'

মতবিনিময় সভা শুরুর আগে ডিএনসিসি মেয়র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাবতলী পাইকারি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেন। 

আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিব সরোয়ার মাসুম, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর হামিদা আক্তার (মিতা) এবং ডিএনসিসির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App