×

জাতীয়

টানা তিনদিন ছুটির পর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম

টানা তিনদিন ছুটির পর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে বদলেছে অফিসের সূচি। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন সে লক্ষ্যে ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগও কাজ করছে সড়কে। পুলিশের বিশেষ নজর থাকছে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

তবে সপ্তম রমজানে এই দৃশ্যপট বদলেছে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল (রবিবার) শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছিলো সরকারি ছুটি। 

সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকে চাপ বেড়েছে সড়কে। রাজধানীর মূল সড়ক বাদেও যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।

গত কয়েকদিন সকালে সড়কের অবস্থা স্বস্তিদায়ক থাকলেও আজকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পাড়া-মহল্লার গলি থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কেও জট লেগে থাকতে দেখা যায় সড়কে।

সরেজমিনে রাজধানীর মোহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, কাওরানবাজার, সোনারগাঁও, সাতরাস্তা, মহাখালী, কাকলী, বনানী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, গুলশান-১, গুলশান-২, লিংকরোড, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র।

যানজট থেকে বাদ যায়নি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। মূল সড়কে নামার মুখে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায় গাড়িগুলোকে। কোথাও কোথাও যেন ঘুরছিলো না গাড়ির চাকা।

আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁর সংকট সমাধানে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব মালিকদের

আগারগাঁও মোড়ে গুলশানগামী এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, রমজান মাসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা করা হয়েছে। বিকেলে তাই সময় থাকতে বাসায় পৌঁছানো যাচ্ছে। সকালেও কদিন স্বস্তিতে অফিসে এলাম। আজ চিত্র উল্টো। আগারগাঁও থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠতেই ৩৫ মিনিট। এরপর কাকলী, বনানী, গুলশান-২ পেরিয়ে অফিসে ঢুকতে দেড় ঘণ্টা।

বাসযাত্রী আরিফুল বলেন, রোজা রেখে কতক্ষণ হাঁটতে পারবো জানি না। তবে সড়কের যে অবস্থা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায়ও দেখছি না। তবে সড়কের যে অবস্থা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায়ও দেখছি না। 

আরেক বাস যাত্রী বলেন, মিরপুর-১০ থেকে বাসে উঠেছি। আগারগাঁও ক্রসিং থেকে বিজয় স্মরণি পার হতেই ৪০ মিনিট। গাড়ির চাকা ঘুরছে তবে খুবই মন্থর গতিতে। একটা পর্যায়ে বাসের নিকট গন্তব্যের অনেক যাত্রীকে হেঁটে রওয়ানা করতেও দেখি। আমাকে অগত্যা বসে থাকতে হচ্ছে মতিঝিল যাবো বলে।

বাস বা প্রাইভেটকার চালকদের অবস্থা আরো শোচনীয়। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের  শেরে বাংলা নগর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. তারেক সেকান্দার বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। অফিস টাইম ও স্কুল টাইম একই সময় হয়ে গেছে। যে পরিমাণ যানবাহন সড়কে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে নামছে তা সামাল দেয়া কঠিন। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তা এখন সচল।

আরো পড়ুন: ঢাকায় এলেন সুইডিশ রাজকন্যা

ট্র্যাফিক গুলশানের (ট্রাফিক-মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি জানান, মহাখালী এলাকার অবস্থা ভালো না। তিনদিন ছুটি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ছাড়ার চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে যানজট বেড়েছে।

ট্রাফিক-গুলশানের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন বলেন, রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। কিছুই করার নাই। গাড়ির পেছনে গাড়ি। এক ইঞ্চি জায়গাও তো খালি রাখার উপায় নাই। সামনের গাড়ি এগুতে না পারলে পেছনের গাড়ির তো সামনে যাবার উপায় নাই। আমাদের ট্রাফিকের সব সদস্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। যানজট বা গাড়ির চাপ কমাতে। তবে আজকে একাধিক স্থানে ভিভিআইপি মুভমেন্ট আছে। তার উপর তিনদিন পর মানুষ ঘর থেকে বেশি বের হয়েছে। তাই গাড়ির সংখ্যাও বেশি।

রমজানে ঢাকার যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, সেবা সংস্থা, ব্যবসায়ী, দুই সিটি কর্পোরেশনসহ ২২টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। রমজান শুরুর আগে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, যানজট লেগেই থাকে এবং জনসমাগম বেশি এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ডিএমপি। ইফতারের আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও প্রতিটি থানা পুলিশকে এ সময়ে ট্র্যাফিক সদস্যদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

এর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে থানা পুলিশকে ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। সব ট্র্যাফিক ও ক্রাইম বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া ট্র্যাফিক বিভাগে ফোর্স বাড়ানো হচ্ছে। রমজানে সড়কে উন্নয়নকাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওয়াসা, তিতাস, সিটি কর্পোরেশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে সোয়া ২ কোটি মানুষের বসবাস। পুলিশ এখানে রাতারাতি যানজট সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। তাই সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App