×

জাতীয়

সভাপতি বাসুদেব ধর-সম্পাদক সন্তোষ শর্মা

দুঃখকষ্টকে সঙ্গে নিয়ে সম্মেলন করলো পূজা পরিষদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম

দুঃখকষ্টকে সঙ্গে নিয়ে সম্মেলন করলো পূজা পরিষদ

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছেন না, তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, দুর্গাপূজায় তিনদিনের ছুটি, বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের আন্তরিকতা না থাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলছে। এজন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দুঃখ রয়ে গেছে। 

শনিবার (১৬ মার্চ) এমন দুঃখের মধ্যেই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। এদিন ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংগঠনের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। 

সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতারা সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, প্রতিটি নির্যাতন ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত সংখ্যালঘুবান্ধব সাত দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান সবাই। 

বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। নতুন কমিটি আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় চার হাজার কাউন্সিলর অংশ নেন। 

এর আগে, সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন ভারতের হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন- খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। 

আরো পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত সংগ্রামের নামে দুষ্কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক বাসুদেব ধর, সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সি আর মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক ডি এন চ্যাটার্জী, সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। 

শুভেচ্ছা বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা বলেন, ২০১৮-২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুবান্ধব সব প্রতিশ্রুতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। কালবেলা সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে এই সরকারের মেয়াদে যোগাযোগ সেক্টরে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। মেট্রোরেল ও কর্ণফুলি ট্যানেল। এসব স্থাপনার চালুর মধ্য দিয়ে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিতিসহ দেশের সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দুঃখ রয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু বান্ধব প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলো ক্ষমতাসীন দল বহাল রেখেছে। আমাদের আকুল আবেদন নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া সাতদফা প্রতিশ্রুতির সবকটি দফা দ্রুত সময়ে আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করবে। এরমধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছেন না, তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে সংখ্যালঘুদের নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার দাবি থাকবে সরকারি সব অনুষ্ঠানে সব ধর্মগ্রস্থ থেকে পাঠের ব্যবস্থা। যা বঙ্গবন্ধুর আমলেও ছিল। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘু হত্যা-নির্যাতনের সব ঘটনার বিচার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুবান্ধব প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ কথা দিয়েও বাস্তবায়ন না করায় হতাশ হলেও আশাহত হইনি।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, ১৯৭১ সালের বন্ধনে বাংলাদেশ এবং ভারতের বন্ধুত্বের যে সম্পর্ক তা আগামী দিনে আরো সমৃদ্ধ হবে। চার প্রজন্ম ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্য, শিল্প, সাহিত্যের যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়- তা আরো জোরদার হবে। 

আরো পড়ুন: ৮২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্ভাবনা

চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বক্তৃতায় বলেন, চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। সবাই যেনো ভালো ও উন্নত চিকিৎসা সেবা পায় এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। 

সব মর্যাদা ও সব উন্নয়ন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সবাইকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এর সারথি হতে চাই। সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় সরকার সোচ্চার। মূল কথা হলো অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে এমন অঘটন হবে না। বিচার ও শাস্তির মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। 

কোনো মন্দিরের জমি দখল হওয়া সমীচীন নয় উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন, যে কোনো মূল্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেদখলে থাকা ১২ বিঘা জমি উদ্ধার হওয়া দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জমি যদি সরকার উদ্ধার করে মন্দির কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়, তাহলে দেশের সম্পদ কমবে না। কারো কোনো ক্ষতি হবে না। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ নিয়ে কোনো আপোষ নয়। 

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আপনারা নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। সংখ্যালঘু ভাবনাটাই দাসত্বের শেকড়। এই শেকড় ভেঙ্গে ফেলতে হবে। দাসত্ব কেন করবেন? মুসলিমের ভোট আর আপনার ভোটের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? এ দেশের মুক্তি সংগ্রামে সব ধর্মের মানুষের অবদান আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকারকে সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার হিসেবে উল্লেখ করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন আছে, তত দিন পাশে আছে। আওয়ামী লীগ আগেও পাশে ছিলো, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। অন্য দল ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের মতো আবার পরিস্থিতি তৈরি হবে। 

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে খুবই বিব্রত হই। কিছু কিছু মানুষ রাজনৈতিক পরিচয়ে সনাতন ধর্মীবলম্বীদের সম্পদ দখল, মন্দির ভাঙচুর সহ নানা অপকর্ম করে। স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা কষ্ট দেয়। এসব লোকদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও তাদের আসল পরিচয় দুর্বৃত্ত। মূলত দুর্বৃত্তরাই হিন্দুদের জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর করে। এই দুর্বৃত্তরা অভিন্ন শত্রু। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের বিকল্প নেই। 

আরো পড়ুন: ভারতের নাগরিকত্ব আইন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়

আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি, থাকব। ভয়ের কোনো কারণ নেই। স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ব্যাপারে দেশবাসীকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের অনেক দাবি পূরণ হয়নি এটা সত্য। সাম্প্রতিক সময়ে কি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সাঁতার কাটতে হয়েছে, আপনারা তা জানেন। কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। বাকিগুলোও পূরণ করার ইচ্ছা আছে বলেই নির্বাচনী অঙ্গীকারে সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের দাবি দাওয়া ও আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। 

এসময় মঞ্চে উপস্থিত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত পাশে ছিলো বলে দুনিয়ার অনেক বড় বড় শক্তি নির্বাচন নিয়ে অশুভ খেলার সাহস পায়নি। তিনি বলেন, সাত জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা আমাদের মতো করে করেছি। ভারত এ ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন নিয়ে যেভাবে ছুটোছুটি করেছে, ভারতকে আমরা সে ভূমিকায় দেখিনি। ভারত পাশে ছিলো বলেই নির্বাচন নিয়ে শক্তিশালী দেশগুলো অশুভ খেলার সাহস পায়নি। 

তিস্তা চুক্তি নিয়ে ‘আশাবাদী’ ওবায়দুল কাদের সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বলেন, গঙ্গা চুক্তিও কিন্তু আমরা করেছি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আমি বলতে চাই- ইতিবাচক অগ্রগতির আলোচনা হয়েছে। সমাধান অবশ্যই হবে। তবে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। গায়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে তিক্ততা করে এই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। 



সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App