×

জাতীয়

সোমালিয়ান দস্যুদের আস্তানায় বাংলাদেশি জাহাজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম

সোমালিয়ান দস্যুদের আস্তানায় বাংলাদেশি জাহাজ

সোমালি জলদস্যুদের কাছে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলে দস্যুদের আস্তানায় নোঙর করা হয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সেখানেই ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। তবে তাদের সেহরি এবং ইফতারের সুযোগ দিচ্ছে দস্যুরা। যদিও এখনো দস্যুদের পক্ষ থেকে জাহাজের মালিকের কাছে মুক্তিপণ বা অন্য কোনো বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে নাবিকেরা সুস্থ ও নিরাপদে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নাবিকেরা সুস্থ ও নিরাপদে রয়েছেন বলে জেনেছি। আমরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে ওই জাহাজ ও নাবিকদের ফিরিয়ে আনব ইনশা আল্লাহ।’ ২০১০ সালে তাঁদের জাহাজ ‘জাহান মনি’কে জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব এবার।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহাজটি উপকূল থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে নোঙর করে রাখা হয়েছে। উপকূল থেকে জাহাজে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে।

এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেয়া হয় নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলার। 

জাহাজটি ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটিকে ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

এমভি আব্দুল্লাহ’র চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের বৃহস্পতিবার ভোরে তার পরিবারের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন।

সেখানে তিনি জানিয়েছেন যে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের চলাফেরার উপর কড়াকড়ি বাড়ানো হচ্ছে। আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম বলেন, আমার ছেলে জানিয়েছে যে, যতই সময় যাচ্ছে, ততই তাদের উপর কড়াকড়ি বাড়ছে। আগে তারা সবাই একসঙ্গে ছিল। এখন দশজন-দশজন করে আলাদা রাখা হয়েছে। মূলত: বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ-বাহিনী জলদস্যুদের পিছু নেয়ার পর থেকেই কড়াকড়ি আরো বাড়ানো হয়েছে। নৌবাহিনীর জাহাজ দেখার পর থেকেই দস্যুরা জিম্মিদের উপর কড়া নজর রাখা শুরু করেছে। 

এদিকে, সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ বাহিনীর সদস্যরা।

বাহিনীটির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। খবরে বলা হয়েছে যে, ‘অপারেশন আটালান্টা’র অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ অপহৃত এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করছে।

মূলত: জলদস্যুদের উপদ্রব ঠেকানোর পাশাপাশি সাগরপথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে ‘অপারেশন আটালান্টা’ নামে অভিযান শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ সেনারা। সোমালি জলদস্যুরা বাংলাদেশি একটি মালবাহী জাহাজ অপহরণ করেছে জানতে পেরে তারা এখন এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করছে। পরিবারের কাছে পাঠানো বার্তায় জিম্মি নাবিক আতিকুল্লাহ খান ‘নৌবাহিনীর’ যে জাহাজের কথা উল্লেখ করেছেন, ধারণা করা হচ্ছে সেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীরই জাহাজ।

আরো পড়ুন:

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App